ভোটে রাজনৈতিক পক্ষপাতের কোনো সুযোগ নেই, মাঠ প্রশাসনও কোনো পক্ষপাত করবে না বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন সচিব এহছানুল হক।
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগ দিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
এহছানুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন যেভাবে নির্দেশনা দেবে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সেভাবে কাজ করবে। নির্বাচন অবশ্যই একটি চ্যালেঞ্জ, তবে আমি এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না।
তিনি আরও বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে যোগদানকে আমি পদোন্নতি নয়, ট্রান্সফার হিসেবে দেখছি। আমার চাকরিজীবনে কখনো নিরপেক্ষতা হারাইনি। আজকেই দায়িত্ব নিয়েছি—সবাইয়ের সঙ্গে এখনো বিস্তারিত আলোচনা হয়নি, কিছু সময় দিন, তারপর বলতে পারব।
সামনে জাতীয় নির্বাচন-এটি কী চ্যালেঞ্জ মনে করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে এহছানুল হক বলেন, প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে এই নির্বাচনটি সবচেয়ে সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনকালীন আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনের অধীনে কাজ করব। মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন—এটা নিশ্চিত করাই আমার দায়িত্ব এবং সেই দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনের কর্মকর্তা হিসেবে সুযোগ পেলে নিরপেক্ষভাবে একটি নির্বাচন উপহার দিতে পারব। সেই সুযোগ দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদেরও। আপনারা যদি আমাদের সঙ্গে থাকেন, আমি নিশ্চিত—আমার কর্মকর্তারা সর্বদা নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
নির্বাচনের আগে ডিসি ও ইএনও পদে বদলি বা পদায়ন হবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে এহছানুল হক বলেন, এটা নীতি নির্ধারণী মহলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষ। এর আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল কমে গেছে—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে এখনো আলোচনা হয়নি। তবে নির্বাচনকালীন প্রিজাইডিং অফিসাররাই থাকবেন ক্ষমতার মালিক, আমাদের কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবেন। সশস্ত্র বাহিনী বা বিডিআর (বিজিবি) আমাদের সঙ্গে দায়িত্বে থাকবে। তাই আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আমি কোনো সমস্যা দেখছি না। জনগণ যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, তাহলে তা সম্ভব।
বিগত সরকারের সময়ের বিতর্কিত ডিসি, এসপি বা সচিবদের বিষয়ে জানতে চাইলে এহছানুল হক বলেন, এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে আমরা চাইব, নির্বাচনী দায়িত্বে যারা থাকবেন, তারা যেন সব ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকেন।
আগের সচিবদের মতো একই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কেন তা হয়নি, সেটা আপনারা আমার চেয়ে ভালো জানেন। তবে ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আমি দায়িত্বে ছিলাম—সেই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছিল, কোনো অভিযোগ ছিল না। উপযুক্ত পরিবেশ ও নিরাপত্তা পেলে আমাদের কর্মকর্তারাও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে সক্ষম হবেন।
যেখানে শক্ত প্রার্থী থাকেন সেখানে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ আসে—এমন প্রশ্নে এহছানুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশন ও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্য আপনারা শুনেছেন। আমরা মাঠে নিরপেক্ষভাবে কাজ করছি। আশা করি, আমার কর্মকর্তারাও তাই করবেন। কেউ নিরপেক্ষতা না মানলে তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মাঠ প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা যদি নিজস্ব পছন্দে পক্ষপাতমূলক আচরণ করেন—এমন অভিযোগে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নেব। যদি দেখা যায় কারও দলীয় সম্পৃক্ততা আছে, তাকে নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়া হবে। তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে—সুষ্ঠু নির্বাচন শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সম্ভব নয়, আপনাদের সহযোগিতাও প্রয়োজন। আমি কখনো কোনো দলীয় নির্দেশে কাজ করিনি, ভবিষ্যতেও করব না।
জিসিজি/আরবি