ঢাকা: রাজধানীর প্রেসক্লাব, শাহবাগ ও সায়েন্সল্যাবে পৃথক তিন বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর একাংশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। যানজট নিরসনে ও বিক্ষোভকারীদের সরাতে চেষ্টা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
রোববার (১২ অক্টোবর) সকাল থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট' এর ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করছেন কয়েক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী। এতে পল্টন থেকে কদম ফোয়ারা পর্যন্ত উভয় রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সারাদেশ থেকে আসা এমপিওভুক্ত মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা।
আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের মূল দাবি, শিক্ষা উপদেষ্টার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তাদের জন্য ২০ শতাংশ বাড়ি ভাড়া, এক হাজার ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা এবং কর্মচারীদের জন্য ৭৫ শতাংশ উৎসব ভাতার প্রজ্ঞাপন জারি করা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগের শাহবাগ জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মেহেদি হাসান শাকিল বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষকদের অবস্থানের কারণে পল্টন-কদম ফোয়ারা মোড় পর্যন্ত উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আমরা কদম ফোয়ারা থেকে হাইকোর্টের দিকে ডাইভারশন দিয়েছি। ডিএমপির পক্ষ থেকে আন্দোলনকারীদের সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা চলছে।
এদিকে সকালে সায়েন্সল্যাব মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজকে নিয়ে সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয় করা হলে ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট বাদ পড়তে পারে এ শঙ্কা থেকে সড়ক অবরোধ করেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত সায়েন্সল্যাব অবরোধের কারণে সেখানে তখন যান চলাচল বন্ধ ছিল। পরে তারা সরে গেলে ফের যান চলাচল শুরু হয়।
অবরোধের বিষয়ে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ঢাকা কলেজের অস্তিত্ব রক্ষায় আমাদের আন্দোলন। ঢাকা কলেজ যেভাবে আছে, কিয়ামত পর্যন্ত সেভাবেই থাকবে। সে খসড়াটা (সেন্ট্রাল বিশ্ববিদ্যালয়ের) প্রকাশ হয়েছে সেটা আমরা দেখেছি, আমরা পর্যালোচনা করেছি। ঢাকা কলেজের ১৮৪ বছরের ইতিহাস। সেই ইতিহাসে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ আছেন, আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছি, আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, এ অধ্যাদেশে যদি বিশ্ববিদ্যালয় হয়, এখন ঢাকা কলেজে ইন্টারমিডিয়েট যেভাবে আছে হয়তো পাঁচ বছর, ১০ বছর সেটা থাকবে। কিন্তু ভবিষ্যতে এ জিনিসটা থাকবে না। কিন্তু ঢাকা কলেজের ঐতিহ্য যেভাবে ইন্টারমিডিয়েট দিয়ে শুরু হয়েছে, কিয়ামত পর্যন্ত ইন্টারমিডিয়েট দিয়েই শেষ হবে।
ডিএমপির রমনা ট্রাফিক বিভাগের নিউমার্কেট জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) তোয়াহা ইয়াসীন হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে কিছুক্ষণ সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান করেন। তখন যান চরাচল বন্ধ ছিল। কিন্তু এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। তবে স্বাভাবিক যানবাহনের যে চাপ সেটা রয়েছে।
অন্যদিকে, শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আন্দোলন করছেন নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করেও সুপারিশ থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে তারা সেখানে আন্দোলন করে যাচ্ছেন।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ৬০ হাজারেরও বেশি শূন্য পদ থাকলেও তাদের নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেনি এনটিআরসিএ। সরকারের পক্ষ থেকে বৈষম্য নিরসনে বার বার আশ্বাস দিলেও সমস্যার সমাধান করা হয়নি। তাই তারা আন্দোলনে নেমেছেন।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, এনটিআরসিএ ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করে সুপারিশ থেকে বাদ পড়া প্রার্থীরা জাদুঘরের সামনে বিক্ষোভ করছেন। তবে যান চলাচলে কোনো বাধা সৃষ্টি হচ্ছে না।
এসসি/আরআইএস