‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এ অধ্যাদেশের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী।
এক নজরে ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’
বৈশ্বিক ক্রমবিকাশমান প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতার সাথে সামঞ্জস্য বিধান ও নাগরিক সেবার সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিতকরণের নিমিত্ত জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা ও আন্তঃপরিচালনের নীতিগত ও প্রযুক্তিগত কাঠামো গঠন, ব্যক্তিগত উপাত্ত স্বেচ্ছায় প্রক্রিয়াকরণ ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা, উদ্দেশ্যের নিরিখে উপাত্তের আইন সম্মত ব্যবহার, ব্যক্তিগত উপাত্তের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষা করে তা মজুদ, সংরক্ষণ, স্থানান্তর ইত্যাদি কার্যসম্পাদনে ও দায়িত্ব পালনে আইনি বিধানের লঙ্ঘন বা বিচ্যুতির ক্ষেত্রে প্রতিকার এবং সরকারি-বেসরকারি, দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মাঝে আইনানুগভাবে ব্যক্তিগত উপাত্ত বা অন্য কোনো উপাত্ত পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে আন্তঃপরিচালন নিশ্চিতকরণ ও পূর্ববর্ণিত উদ্দেশ্যসমূহ সাধনে সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যবদ্ধ সমন্বয়ের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেওয়ায় একটি পৃথক আইনি কাঠামো গঠনের লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ কর্তৃক ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এর উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ:
প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের মোট ধারা সংখ্যা ৬৮টি;
ব্যক্তিগত উপাত্তের আইনি প্রক্রিয়াকরণ, ব্যবহার এবং উপাত্তধারীর অধিকার নিশ্চিতকরণ;
সরকারি-বেসরকারি/দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যক্তিগত উপাত্তের আইনানুগ আন্তঃপরিচালন নিশ্চিতকরণ;
প্রধানমন্ত্রী/প্রধান উপদেষ্টাকে চেয়ারম্যান করে একটি নীতি-নির্ধারণী বোর্ড গঠনের বিধান রাখা হয়েছে;
এই অধ্যাদেশের অধীনে ‘জাতীয় উপাত্ত ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি স্বাধীন ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠার বিধান রাখা হয়েছে;
এই অধ্যাদেশে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি গঠনের বিধান রাখা হয়েছে;
আন্তঃপরিচালন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ‘বাংলাদেশ জাতীয় উপাত্ত ও আন্তঃপরিচালন স্থাপত্য (BNDGIA)” এবং ‘জাতীয় দায়িত্বশীল উপাত্ত বিনিময় ((NRDEX)’ প্ল্যাটফর্মের নকশা, প্রতিষ্ঠা, প্রস্তুত, বাস্তবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের বিধান রাখা হয়েছে;
সরকারি সফটওয়্যার কোড সংরক্ষণ, শেয়ারিং ও সিকিউরিটি প্রটোকল নির্ধারণের জন্য জাতীয় কোড রিপ্রেজেন্টরি সম্পর্কিত বিধান রাখা হয়েছে;
সরকারি তথ্য প্রবাহ ও সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন করার উদ্দ্যেশে Sectoral Interoperability layer এর বিষয়ে বিধান রাখা হয়েছে;
এআই ব্যবহার করে ডাটা বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্দেশ্যে এআইভিত্তিক ডাটা এনালিটিক্স ক্ষমতায়নের বিষয়ে বিধান রাখা হয়েছে;
এই অধ্যাদেশে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ বা সংক্ষুদ্ধতার দ্রুত নিরসনকল্পে, সংক্ষুদ্ধতা নিরসন কাউন্সিল গঠন, এর কার্যাবলি ও ক্ষমতা সম্পর্কে বিধান রাখা হয়েছে;
সরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর এন্টারপ্রাইজ সফটওয়্যার (enterprise software) ও আইটি অবকাঠামোর (IT infrastructure) নিরাপদ ও মানসম্মত ব্যবহারের নির্দেশিকা প্রণয়নের বিধান রাখা হয়েছে;
এই অধ্যাদেশে আন্তঃপরিচালনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের প্রধানের দায়িত্ববলি সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে ও সমন্বয়ের বিধান রাখা হয়েছে;
উপাত্তধারী কর্তৃক ট্রাইব্যুনালের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়েরের বিধান রাখা হয়েছে;
এই অধ্যাদেশের বিধান লঙ্ঘনের জন্য প্রশাসনিক জরিমানা এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিধান রাখা হয়েছে; এই অধ্যাদেশে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের, বিচারার্থে গ্রহণ ও দণ্ড আরোপের বিধান রাখা হয়েছে; এই অধ্যাদেশের অধীন অপরাধগুলো অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য হবে।
এমইউএম/এএটি