জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকে না বসার দাবি জানিয়েছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ঢাকা আহছানিয়া মিশন আয়োজিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধনের দাবিতে চিকিৎসকদের সংহতি প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ দাবি জানানো হয়।
ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদ বলেন, হৃদরোগ, স্ট্রোক, শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘমেয়াদি রোগসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম কারণ তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার। আর এই তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ অকালে মারা যায়। প্রতিরোধযোগ্য এই মৃত্যু কমাতে এবং তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রস্তাবিত সংশোধনী দ্রুত পাস করতে হবে।
এফিসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের প্রণীত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনীগুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৬টি প্রস্তাব তুলে ধরেন ঢাকা আহছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের সহকারী পরিচালক (চিকিৎসা সেবা) ডা. নায়লা পারভীন। সেগুলো হলো- অধূমপায়ীদের সুরক্ষার জন্য সব ধরনের পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা। তামাক পণ্যের প্রচার বন্ধে বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকপণ্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম (সিএসআর) নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শিশু-কিশোর ও তরুণদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা এবং সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা।
ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৪’-এর খসড়া পর্যালোচনার জন্য গঠিত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠক গত জুলাই-এ অনুষ্ঠিত হয়। এতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে স্টেকহোল্ডার সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল উপদেষ্টা কমিটি। এর ভিত্তিতে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর তামাক কোম্পানির সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এনবিআর।
এ বিষয়ে বক্তারা বলেন, এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-এর আর্টিকেল ৫.৩ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এই ধারা অনুযায়ী কোনো দেশের তামাক নিয়ন্ত্রণবিষয়ক আইন, বিধিমালা বা নীতি প্রণয়নে তামাক কোম্পানি বা তাদের সহযোগীদের মতামত গ্রহণযোগ্য নয়। যেহেতু বাংলাদেশ এফসিটিসিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বাধ্য।
তারা আরো বলেন, তামাক কোম্পানির প্রভাবমুক্ত নীতিনির্ধারণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির সঙ্গে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সরকারকে অবশ্যই এফসিটিসির আর্টিকেল ৫.৩ সম্পূর্ণভাবে মেনে চলতে হবে এবং কোনোভাবেই তা লঙ্ঘন করা যাবে না।
বক্তারা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি অনুষ্ঠিত অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ৩৫টি মন্ত্রণালয়ের যৌথ ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘তামাকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে সচেতন করা না গেলে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে’। তাই তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের প্রক্রিয়ায় অগ্রাধিকার পেতে হবে জনস্বাস্থ্য-তামাক কোম্পানির স্বার্থ নয়।
এসসি/আরবি