ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ ভাদ্র ১৪৩২, ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২৪ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

স্থলাভিষিক্ত ফেঞ্চুগঞ্জের ইউএনও

ডিসির সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারেরও বদলি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫১, আগস্ট ১৮, ২০২৫
ডিসির সঙ্গে কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহারেরও বদলি আজিজুন্নাহার ও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম

সাদাপাথর লুট ঠেকাতে ব্যর্থ সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে বদলির দিনেই সরিয়ে দেওয়া হলো কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারকে। অথচ লুটের ঘটনা খতিয়ে দেখতে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটিতে অভিযুক্ত আজিজুন্নাহারকে সদস্য-সচিব করা হয়, যা নিয়ে আরও এক দফা বিব্রত হয় জেলা প্রশাসন।

সোমবার (১৮ আগস্ট) আজিজুন্নাহারকে ফেঞ্চুগঞ্জে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বদলি করা হয়। সেখানে দায়িত্বে থাকা ইউএনও মোহাম্মদ শফিকুল ইসলামকে কোম্পানীগঞ্জে পদায়ন করা হয়েছে। নতুন ইউএনও শফিকুল ইসলাম ৩৬তম বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের কর্মকর্তা। এর আগে তিনি ফেঞ্চুগঞ্জে দায়িত্বে ছিলেন।

সাদাপাথর লুটের ঘটনায় ইউএনও আজিজুন্নাহারের ভূমিকা ও দায়িত্বশীল আচরণ নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। উল্টো তার বিরুদ্ধে লুটপাটে সহযোগিতার অভিযোগও উঠে আসে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলেছে ব্যাপক সমালোচনা। গণমাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি তিনি।

একই দিনে বদলি করা হয় সিলেটের জেলা প্রশাসক শের মাহবুব মুরাদকেও। তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন র‌্যাবের সাবেক আলোচিত ম্যাজিস্ট্রেট মো. সারওয়ার আলম। তিনি উপসচিব পদমর্যাদায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের একান্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

এর আগে রোববার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে সাদাপাথর লুটের অভিযোগ তোলেন। তার একদিন পরই বদলির মুখে পড়েন ডিসি ও ইউএনও।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কোম্পানীগঞ্জে দায়িত্বে থাকাকালে ইউএনও আজিজুন্নাহার যুবদল নেতা বাহার আহমদ রুহেলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন। বাহার আহমদ ভোলাগঞ্জ কোয়ারির অন্যতম শীর্ষ লুটেরাদের একজন। তিনি ইউএনওর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন এবং মাসোহারা আদায়ের মাধ্যমে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিলেন— এমন জনশ্রুতি ছড়িয়েছে এলাকায়।

উল্লেখ্য, দেশে ৫১টি কোয়ারির মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি। এছাড়া সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়া ইত্যাদি এলাকাও পরিচিত পর্যটনকেন্দ্র। ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে।

২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদ দিয়ে ইজারার মাধ্যমে পাথর উত্তোলনের সুযোগ ছিল। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে সে বছর থেকে কোয়ারি ইজারা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকেই রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলে আসছে।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর প্রায় এক বছর ধরে সিলেটের কোয়ারিগুলোয় বেপরোয়া লুটপাট চলে। সম্প্রতি জেলা প্রশাসন কোম্পানীগঞ্জ ধলাই সেতুর ভাটি এলাকায় বালু উত্তোলনের ইজারা দিলে সেটিকে পুঁজি করেই শুরু হয় সাদাপাথর লুট। দুদকের তথ্য অনুযায়ী, টানা দুই সপ্তাহ প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ লুটপাটে জড়িত ছিলেন।

এ ঘটনায় স্থানীয় সব রাজনৈতিক দলের নেতারা ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে। দিনের বেলায় শত শত নৌকায় পাথর বহন করা হলেও প্রশাসন নিরব ছিল।

সমালোচনার মুখে বিএনপি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সভাপতি শাহাব উদ্দিনের পদ স্থগিত করে। যদিও পাথরলুটে জড়িত আরও অনেক প্রভাবশালী রয়েছেন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে শুধু পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আলমগীর আলমকে।

হাইকোর্ট এরই মধ্যে সাত দিনের মধ্যে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে প্রতিস্থাপন এবং সংশ্লিষ্টদের তালিকা আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর সেনাবাহিনী ও যৌথবাহিনী মোতায়েন করা হলেও উদ্ধারকৃত পাথরের পরিমাণ লুটের তুলনায় নগণ্য।

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রায় ৮০ শতাংশ পাথর লুট হয়ে গেছে। এর প্রভাবে সাদাপাথর এলাকায় পর্যটকও কমে গেছে। কালাইরাগ এলাকায় জব্দ হওয়া কিছু সাদাপাথর ভোলাগঞ্জ ১০ নং এলাকায় প্রতিস্থাপন করা হলেও তা ছিল খুবই সামান্য।

এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।