ঢাকা, শনিবার, ১ ভাদ্র ১৪৩২, ১৬ আগস্ট ২০২৫, ২১ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

সিলেটে অ্যাকশন, ছাতকে মজুতদারদের আতঙ্ক

সুরমার তীর থেকে পাথরের স্তূপ সরাতে তোড়জোড়

নাসির উদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭:৩৬, আগস্ট ১৬, ২০২৫
সুরমার তীর থেকে পাথরের স্তূপ সরাতে তোড়জোড়

সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনায় প্রশাসনের অভিযান শুরু হতেই সুনামগঞ্জের ছাতক এলাকায় পাথর মজুতদারদের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র আতঙ্ক। সুরমা নদীর দুই তীরে মাইলের পর মাইলজুড়ে সাজানো বালু ও পাথরের স্তূপ যেন এক বিশাল ‘পাথর নগরী’।

প্রশাসনের অভিযানের খবরে ইতিমধ্যেই নদীতীর থেকে এসব স্তূপ সরাতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

মাইলের পর মাইলজুড়ে স্তরে স্তরে সাজানো এসব পাথরের ভাণ্ডারে সাদা পাথরের পাশাপাশি রয়েছে চুনাপাথর, বালু ও লাল পাথর। অথচ ছাতকে কোনো পাথর কোয়ারি নেই। স্থানীয়দের দাবি, এগুলোর বেশিরভাগই ভোলাগঞ্জ কোয়ারি, সাদাপাথর এলাকা ও অন্যান্য উৎস থেকে চুরি ও লুটপাট করে আনা হয়েছে। এরপর ব্যবসায়ীরা এসব পাথর কিনে এখানে মজুত করেছেন। এখান থেকেই ভলগেট, কার্গো ও ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় সরানো হচ্ছে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারিতে শুরু হয় ব্যাপক লুটপাট। ধলাই নদীর তীরবর্তী রূপওয়ে বাংকারের অবশিষ্ট অংশও এ সময় গায়েব হয়ে যায়। পাশাপাশি দুই সপ্তাহে নজিরবিহীনভাবে লুট করা হয় সাদাপাথর। পর্যটন এলাকা বিনষ্টের ঘটনায় গণমাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পেলে টনক নড়ে প্রশাসনের।

গত বুধবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কর্মকর্তারা লুটপাটের সুস্পষ্ট প্রমাণ পান। দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, প্রতিদিন অন্তত ৫০ হাজার মানুষ এ লুটপাটে অংশ নেয়; ব্যবহৃত হয় ৬ হাজারেরও বেশি নৌকা, প্রতিটিতে ১০-১২ জন শ্রমিক। দুদকের দাবি, প্রায় হাজার কোটি টাকার পাথর লুট হয়েছে। ওইদিন সন্ধ্যায় প্রশাসনের বৈঠকে সেনাসহ যৌথবাহিনী মোতায়েন এবং লুন্ঠিত পাথর উদ্ধারের সিদ্ধান্ত হয়। তিন দিনের অভিযানে প্রায় ৫০ হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার করে সাদাপাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

তবে বিশাল সাদাপাথর এলাকা এখন মরুভূমির মতো ফাঁকা। স্থানীয়রা বলছেন, লুন্ঠিত পাথরের বড় অংশ নদীপথে ছাতক হয়ে সরানো হয়েছে। প্রতিরাতে অন্তত ২০০ ট্রাক পাথর ভোলাগঞ্জ থেকে ছাতকে এসেছে। এই লুটপাট প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বর্তমানে লুন্ঠিত পাথর মজুত রয়েছে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে। যদিও ছাতকের বিশাল পাথর ভাণ্ডারে এখনও তেমন অভিযান চালানো হয়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ছাতকের সুরমা নদীর দুই তীরে অন্তত দেড়শ জায়গায় বিপুল বালু-পাথর মজুত রাখা হয়েছে, যেগুলো দীর্ঘ এলাকা জুড়ে স্তূপ আকারে সাজানো।

ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা বৈধভাবে পাথর কিনেছেন, কিছু এলসি পাথরও রয়েছে। কিন্তু কাগজপত্র দেখাতে পারেননি কেউই। কাটাগাঙের কেচিটিলা, ফুটকুড়া, চাটিবহর নোয়াগাঁও, ইছাকলস, আমবাড়ি, গোয়ালগাঁও ও ছইকিত্তার পাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় বহু ব্যবসায়ী এসব মজুত রেখেছেন। এর পাশাপাশি নদীতীরে রয়েছে এলসি চুনাপাথর ও লোভাছড়ার লাল পাথরের বিশাল স্তূপ।

ছাতক নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, ছাতকের কোথাও সাদাপাথর নেই। মঙ্গলবার সাদাপাথর এলাকা থেকে চুরি করে নেওয়া নৌকা ভর্তি পাথর বাংলাবাজার থেকে আটক করেছি। তবে নদীর তীরে রাখা পাথর-বালু বৈধ কিনা, তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি ছাতক থানার ওসি মোখলেছুর রহমান আকন্দ।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, খোঁজখবর নিয়ে তদন্তপূর্বক বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত মাঠপর্যায়ে কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।

এনইউ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।