ঢাকা: দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ এর গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আর্টিকেল নাইনটিন।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) এক বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী, এক যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় চার বা পাঁচজন দুর্বৃত্তরা সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনকে ৭ আগস্ট কুপিয়ে খুন করে। হামলাকারীরা তুহিনকে ভিডিও ধারণ করতে দেখে তাকে ধাওয়া করে, জীবন বাঁচানোর জন্য তুহিন পাশের একটি চায়ের দোকানে আশ্রয় নেয়। হামলাকারীরা চায়ের দোকানে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে এবং ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আর্টিকেল নাইনটিন, ঘটনার দ্রুত, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি করেছে। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলো, যা বাংলাদেশে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তুহিনের হত্যাকাণ্ডের কিছুদিন আগেই দৈনিক মাতৃজগৎ পত্রিকার নবীনগর উপজেলা প্রতিনিধি খন্দকার শাহ আলম পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের জের ধরে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। একাধিক ডাকাতি মামলার আসামি বাবুল মিয়া, যিনি স্থানীয়ভাবে ‘টাইগার বাবুল ডাকাত’ নামে পরিচিত তার গ্রেপ্তার নিয়ে পূর্বে প্রতিবেদন প্রকাশ করার কারণে কারগার থেকে মুক্তি পেয়ে খন্দকার শাহ আলমের ওপর হামলা করে।
আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকাণ্ডের একদিন আগে, ৬ আগস্ট, দৈনিক বাংলাদেশের আলোর স্টাফ রিপোর্টার আনোয়ার হোসেন সৌরভের ওপর প্রকাশ্য দিবালোকে পুলিশের সামনে আক্রমণ করা হয়েছিল। হামলার সময় তিনি ব্যাটারিচালিত এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। হামলার সময়ে তাকে রক্ষায় পুলিশ কোনও হস্তক্ষেপ করেনি বলে অভিযোগ আছে। সৌরভ বর্তমানে শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকাণ্ড গত কয়েক মাস ধরে বাংলাদেশে সাংবাদিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলার একটি। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কর্তব্য হলো এ ধরনের হামলার দ্রুত, পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং স্বাধীনভাবে তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচার করা। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা উদ্বেগজনক এবং অবিলম্বে তা বন্ধ করা উচিত।
দুর্ভাগ্যবশত, বাংলাদেশে কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কোনও নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করেনি। সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরোয়ার এবং মেহেরুন রুনির হত্যাকাণ্ডসহ সাংবাদিকদের বেশিরভাগ হত্যার বিচার করা হয়নি, যা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য দায়মুক্তির সংস্কৃতিকে উস্কে দিয়েছে। মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে তাদের অ্যাপার্টমেন্টে হত্যা করা হয়েছিল। পুলিশ এখনও এ অপরাধের তদন্ত শেষ করতে পারেনি।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে জাতীয় নির্বাচনের আগে সাংবাদিকদের ওপর সাম্প্রতিক হামলা সব গণমাধ্যমকর্মী, নাগরিক সমাজের কর্মী এবং গণতন্ত্রের সমর্থকদের জন্য উদ্বেগজনক। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব সাংবাদিকসহ সব গণমাধ্যমকর্মীদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা প্রদান করা।
আর্টিকেল নাইনটিনের গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, ১৫ এক্সপ্রেশন স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ ১২৭তম স্থানে রয়েছে এবং ‘সংকটে’ শ্রেণিতে অবস্থান করছে। আর্টিকেল নাইনটিন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিনের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মীদের ওপর সহিংস আক্রমণের উদ্বেগজনক ধারার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যে সাংবাদিকরা সহিংসতা বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
টিআর/আরআইএস