জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ কোনো ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে জড়াতে চায় না। দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষাই সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
রোববার (১০ আগস্ট) রাতে গুলশান ক্লাব লিমিটেডে বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক নিয়ে সৃষ্ট কিছু উদ্বেগের জবাব দিয়ে বলেন, অনেকে মনে করছেন যে, পণ্যের ২০ শতাংশ বা তার বেশি অংশ যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি হয়, তবে পুরো পণ্যের ওপর শুল্ক বসানো হবে। পণ্যের ২০ শতাংশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়, তাহলে সেটা বাদ দিয়ে শুল্ক আরোপ করা হয় বলে জানান তিনি।
এ তথ্য মার্কিন প্রতিনিধিদলের প্রধান ব্রেন্ড লিন্ডের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করে নিশ্চিত হয়েছেন বলেও জানান নিরাপত্তা উপদেষ্টা।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর ওপর এখনও শুল্ক পুরোপুরি নির্ধারিত হয়নি এবং ভবিষ্যতে যে শুল্ক নির্ধারিত হবে, তা বাংলাদেশের জন্য প্রতিযোগিতামূলক হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের ওপর শুল্ক আরও কমতে পারে।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে হওয়া বাণিজ্য আলোচনার তিনটি মূল নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, প্রথমত, এটি এমন একটি চুক্তি, যা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার চাইলে পরিবর্তন, পরিমার্জন বা বাতিল করতে পারবে। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ এমন কোনো বাধ্যবাধকতা গ্রহণ করবে না, যা পালন করা সম্ভব হবে না। কারণ এতে ভবিষ্যতে আরও কঠোর শুল্কের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। তৃতীয়ত, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো, এই আলোচনা ছিল সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যকেন্দ্রিক।
খলিলুর রহমান আরও বলেন, আমরা তৃতীয় কোনো দেশের ওপর কোনো ভূরাজনৈতিক ফাঁদে পা দিতে চাই না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যে আইনের ভিত্তিতে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, সেটির আইনি বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নিউইয়র্কের ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড কোর্ট এবং ওয়াশিংটন ডিসি ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট এই সিদ্ধান্ত বাতিল করেছে। তবে আপিল প্রক্রিয়া চলমান থাকায় এবং সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় না আসায়, সবাই আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছে।
নিরাপত্তা উপদেষ্টা এই চুক্তিকে বাংলাদেশের জন্য একটি বিশাল সুযোগ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে এমন কিছু সংস্কার বাস্তবায়িত হতে পারে, যা বছরের পর বছর ধরে প্রত্যাশিত ছিল। এই প্রক্রিয়ায় সরকার এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো মতপার্থক্য নেই; এটি সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল।
কিছু সমালোচনার জবাবে তিনি বলেন, অনেক দ্বিপাক্ষিক চুক্তিই সাধারণত অ-প্রকাশযোগ্য বা নন-ডিসক্লোজার হয়ে থাকে, যা অনেকে না জানার কারণে সমালোচনা করেছেন। তবে এখন এই বিষয়গুলো নিয়ে খুব একটা সংশয় বা সমালোচনা নেই।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ডব্লিউটিও অনুবিভাগের প্রধান ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী, বিটিএমএ সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল, বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রমুখ।
ইএসএস/এমজেএফ