ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩১ জুলাই ২০২৫, ০৫ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউডি মামলা, দগ্ধদের ১৫৮ বার অপারেশন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১৭, জুলাই ৩০, ২০২৫
মাইলস্টোনে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ইউডি মামলা, দগ্ধদের ১৫৮ বার অপারেশন ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষিক ও পাইলটসহ অনেকেই নিহত হয়েছেন।

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া এখনো চলমান। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতদের যেসব লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে, সেগুলোর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত দগ্ধ রোগীদের ১৫৮টি অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।

বুধবার (৩০ জুলাই) উত্তরা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, গত ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থী, শিক্ষিক ও পাইলটসহ অনেকে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত পাইলট ও মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষিকসহ মোট ৩৩টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এদের অধিকাংশই শিশু শিক্ষার্থী। প্রতিটি লাশের সুরতহালের পাশাপাশি জিডি করা করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কেউ মামলা করতে এলে পুলিশের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু এটি একটি দুর্ঘটনা, অপমৃত্যুর (আন-ন্যাচারাল ডেথ—ইউডি) মামলা হতে পারে।

ইউডি বা অপমৃত্যুর মামলা কি
সাধারণত যখন কেউ অস্বাভাবিক বা রহস্যজনকভাবে মারা যায় এবং মৃত্যুর কারণ পরিষ্কারভাবে জানা যায় না, তখন এই ধরনের মামলা রুজু করা হয়। এটি একটি প্রাথমিক আইনি পদক্ষেপ, যার মাধ্যমে পুলিশ ওই মৃত্যুর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে তদন্ত শুরু করে।

জানা গেছে, জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন বুধবার গণমাধ্যমকে জানান, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনায় দগ্ধদের মধ্যে আরও একজনকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তার নাম ফারজানা ইয়াসমিন (৪৫)। তিনি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একজন শিক্ষিকা। এখনও দুইজন দগ্ধ রোগী ইনস্টিটিউটের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আইসিইউতে তিনজন দগ্ধ রোগী ছিলেন। তবে তাদের মধ্যে একজনের শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ায় আজ তাকে আইসিইউ থেকে হাই ডিপেডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে মোট ৩২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে ৩ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক (ক্রিটিকাল ক্যাটাগরি) এবং আরও ৭ জন আছেন গুরুতর (সিভিয়ার ক্যাটাগরি) অবস্থায়। বাকিরা বিভিন্ন ওয়ার্ড ও কেবিনে চিকিৎসাধীন। গত তিন দিনে নতুন করে কোনো রোগীর মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ডা. নাসির উদ্দিন আরও জানান, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ৩২ জন রোগীর মধ্যে ১৪ জনের শারীরিক অবস্থা উন্নতির দিকে যাচ্ছে। বাকিরা স্থিতিশীল (স্টেবল) অবস্থায় রয়েছেন। দুর্ঘটনার পর থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত এ সকল রোগীর শরীরে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ১৫৮টি অস্ত্রোপচার (অপারেশন) করা হয়েছে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। এমনও দেখা গেছে, একজন রোগীকেই চার-পাঁচবার পর্যন্ত অপারেশন করা হয়েছে। রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী এসব অস্ত্রোপচার এখনও চলমান। দগ্ধ রোগীদের জন্য ‘ড্রেসিং’ করাটাও এক ধরনের অপারেশন হিসেবে বিবেচিত হয়। কারণ এটি অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ ও জটিল প্রক্রিয়া— যেখানে রোগীদের অনেক সময় অজ্ঞান করে ড্রেসিং করতে হয়।

প্রসঙ্গত, মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় একটি ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এই কমিশনের কাজ হলো— বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ, দায়দায়িত্ব, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় চিহ্নিত করা। কমিশনকে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত রোববার রাতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়। কমিশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব এ কে এম জাফর উল্লা খান। সদস্যরা হলেন— বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক সহকারী প্রধান (প্রশাসন) এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) এম সাঈদ হোসাইন, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একজন করে অতিরিক্ত সচিব (প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের মনোনীত প্রতিনিধি), ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, বুয়েটের মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মো. আশিকুর রহমান এবং আইনজীবী আশরাফ আলী।

রাষ্ট্রপতির নির্দেশক্রমে মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আবদুর রশীদ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কমিশন ২১ জুলাই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনার পটভূমি, কারণ ও দায়দায়িত্ব উদ্ঘাটন করবে। এ ছাড়া, দুর্ঘটনায় স্কুলের ছাত্র, শিক্ষক ও অন্যান্য ব্যক্তির মৃত্যু ও গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনাসহ সব ধরনের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো চিহ্নিত করাই কমিশনের দায়িত্ব।

এজেডএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ