ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

জুলাই বিপ্লবের এক বছর: নতুন সূর্য, পুরনো ক্ষত ও অটুট প্রত্যয়

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৭, জুলাই ১৬, ২০২৫
জুলাই বিপ্লবের এক বছর: নতুন সূর্য, পুরনো ক্ষত ও অটুট প্রত্যয়

একটি বছর পার হয়ে গেছে। কিন্তু অনেক মায়ের কান্না আজও থামেনি, অনেক বাবার চোখে এখনো ঝরছে আগুন।

২০২৪ সালের জুলাইয়ের সেই ৩৬ দিন, ছাত্র আন্দোলনের যে ঢেউ গোটা জাতিকে নাড়া দিয়েছিল, তার ক্ষত আজো তাজা।

শুরুটা হয়েছিল সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে। কিন্তু খুব দ্রুত তা পরিণত হয় সর্বস্তরের মানুষের সম্মিলিত গণপ্রতিরোধে। ফ্যাসিবাদী দমননীতির বিরুদ্ধে রাজপথে এক কাতারে দাঁড়ায় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শ্রমজীবী মানুষ।

জুলাই বিপ্লবের ইতিহাসে প্রথম রক্ত ঝরে ১৬ জুলাই। বিক্ষোভ দমন করতে গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। একদিনেই প্রাণ হারান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ পাঁচ তরুণ। ১৬ জুলাই এখন থেকে জুলাই শহীদ দিবস। এরপর ঝরে আরও রক্ত, বাড়ে আরও শোক। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই দমন-পীড়নে অন্তত ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারান। আহত হন কয়েক হাজার। নিখোঁজ, পঙ্গু, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত বহু মানুষ আজো সেই ট্রমা নিয়ে বেঁচে আছেন।

এত রক্ত, এত কান্না—একে কেউ হয়তো বলবেন ‘অস্থির সময়’; কিন্তু ইতিহাস জানে, এটি ছিল একটি জাতির আত্ম-অনুসন্ধানের সময়। দেশের মানুষের ধৈর্য, সাহস ও প্রতিবাদের শক্তি কতটা গভীরে প্রোথিত—তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল তখন।

এক বছর পর ফিরে তাকালে কিছু প্রশ্ন আমাদের তাড়া করে। আন্দোলনের ফল কী হলো? শহীদদের পরিবার আজ কেমন আছে? যারা প্রতিবাদ করেছিলেন, তাদের বর্তমান অবস্থা কী? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রে কোন পরিবর্তন এনেছে কি? সত্যিই কি আমরা ফ্যাসিবাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছি?

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতেই আমাদের এই বিশেষ আয়োজন। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। এই আয়োজনে থাকবে— শহীদ পরিবারের না-বলা গল্প, আহতদের চোখে স্বাধীনতার স্বপ্ন, ছাত্রনেতাদের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার, আন্দোলনের দিনপঞ্জি, ডেটা বিশ্লেষণভিত্তিক প্রতিবেদন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরের মূল্যায়ন।

এদিকে বিপ্লব-পরবর্তী বাংলাদেশে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছে চারটি মূল এজেন্ডা—তা হলো জুলাই গণহত্যার আন্তর্জাতিক মানের বিচার, ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন, যা ভবিষ্যতে ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে রূপরেখা দেবে, প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও প্রশাসনিক সংস্কার এবং দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন।

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এইসব প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে এনসিপিসহ নতুন কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যারা রাজনীতির ভাষা ও চরিত্র বদলে দেওয়ার অঙ্গীকার নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, গণঅভ্যুত্থান সফল করার পর এখন পর্যন্ত প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল।

গণতন্ত্রের সৌন্দর্যই হলো ভিন্নমতের সহাবস্থান। কেউ সংস্কারের পক্ষে, কেউ বিপক্ষে—এটাই স্বাভাবিক। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কখনোই দমনীয় নয়। আর সেই সত্য মেনেই ভবিষ্যতের পথে এগোতে হবে। আমরা আর কখনো চাই না, কেউ গুম হোক, রাজপথে গুলিবিদ্ধ হোক, কিংবা ভিন্নমতের অপরাধে ভীতসন্ত্রস্ত জীবন যাপন করুক।

আমরা বিশ্বাস করি, ইতিহাস কেবল বইয়ে থাকে না—তা থাকে মানুষের বুকের গভীরে। দায়িত্বশীল সাংবাদিকতার প্রধান দায়িত্ব হলো সেই ইতিহাসকে সংরক্ষণ করা, স্মরণ করানো এবং প্রশ্ন তোলা।

তাই এই প্রতিবেদনগুলো শুধুই স্মৃতিচারণ নয়, বরং সত্য উদঘাটনের প্রয়াস। আমরা চাই, কেউ যেন ভুলে না যায়। কেউ যেন ভাবতে না পারে—‘এই রক্ত বৃথা গেছে’।

জুলাই বিপ্লব স্মরণেই আমাদের এই আয়োজন, এই দায়বদ্ধতার যাত্রা।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।