ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

এবার আ.লীগের পরিত্যক্ত অফিসে শিশু ধর্ষণ, বলাৎকারের পর খুন কিশোর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩১, জুলাই ১৫, ২০২৫
এবার আ.লীগের পরিত্যক্ত অফিসে শিশু ধর্ষণ, বলাৎকারের পর খুন কিশোর

পুরান ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনার মধ্যে রাজধানীতে ঘটেছে আরও দুটি বর্বরতা। মহাখালীতে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের পরিত্যক্ত এক কার্যালয়ে একটি পথশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।

আর যাত্রাবাড়ীর একটি হোটেলের কক্ষে মিলেছে এক কিশোরের লাশ। পুলিশের ধারণা, ওই কিশোরকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়েছে।

সোমবার (১৪ জুলাই) রাতে মহাখালী ক্যানসার হাসপাতালের পেছনে ওই কার্যালয়ে নয় বছরের শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। রাতেই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) নেওয়া হয়।  

এর আগে দুপুরে যাত্রাবাড়ীর দক্ষিণ সায়দাবাদের আনোয়ারা হোটেলের ২৫৬ নম্বর কক্ষ থেকে ১২ বছর বয়সী ওই কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়। কক্ষটি বাইরে থেকে তালাবদ্ধ ছিল। খবর পেয়ে দরজা ভেঙে মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ধারণা করছে, প্রথমে ওই কিশোরকে বলাৎকার করা হয়। পরে তাকে খাবারের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে বা শ্বাসরোধ ও আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।  

মহাখালীতে শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত মিলেছে
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিকেলে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারোয়ার জানান, শিশু ধর্ষণের বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে জানা যায় মহাখালী ক্যান্সার হাসপাতাল এলাকার আশপাশে ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু পরবর্তী তদন্তে জানা যায়, সাবেক ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবহৃত (বর্তমানে পরিত্যক্ত) একটি অফিসে শিশুটি ধর্ষণের শিকার হয়। অভিযুক্তের বয়স আনুমানিক ১৫ থেকে ২০ বছর। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করেছে পুলিশ। ভিকটিম শিশুটির বাড়ি ময়মনসিংহের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। ইতোমধ্যে তার মাকে ময়মনসিংহ থেকে খুঁজে আনা হয়েছে।   এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

ওসি আরও বলেন, শিশুটি ভবঘুরের মতো ওই কার্যালয়ের আশপাশে ঘোরাঘুরি করতো। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ নেতারা গত ১৫ বছর ধরে অফিসটি ব্যবহার করে আসছিল। গণঅভ্যুত্থানের পর সেটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ঘটনার সময় যখন শিশুটি চিৎকারের চেষ্টা করে, অভিযুক্ত তার মুখ চেপে ধরেছিল।

শিশুটি বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে চিকিৎসাধীন। ওসিসির একজন নারী চিকিৎসক জানান, শিশুটিকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তার ফরেনসিক পরীক্ষা হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন এলে বিস্তারিত জানা যাবে।

‘কিশোরকে বলাৎকারের পর শ্বাসরোধ বা আঘাতে হত্যা’
যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. হাসান বশির জানান, ওই কিশোরকে সম্ভবত বলাৎকারের পর বিষক্রিয়া, শ্বাসরোধ অথবা আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। মঙ্গলবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে।  

তদন্তে জানা গেছে, একজন ব্যক্তি শিশুটিকে সঙ্গে নিয়ে ওই হোটেলে প্রবেশ করেন এবং পরে পালিয়ে যান। ওই ব্যক্তি মাঝে মাঝে সেই হোটেলে থাকতেন। তার নাম-ঠিকানা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে, পালিয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এর আগে, গত ৯ জুলাই পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের পাশে ভাঙারি ব্যবসায়ী মো. সোহাগকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে পাথর দিয়ে আঘাত হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে নিন্দার ঝড় ওঠে। সোহাগের বোন বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এতে আসামি করা হয় ১৯ জনকে।

ওই ঘটনার জের না যেতেই ১৩ জুলাই রাতে ওয়ারীতে ঘটে আরেক ঘটনা। সৈয়দ রেদোয়ান মাওলানা নামে এক কিশোরকে অপর কয়েকজন কিশোর মিলে মারধর করে। এতে রেদোয়ান রক্তাক্ত হয়। সাধারণ জনতা তৎক্ষণিকভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুললে ওই ঘটনা কোনো দুঃখজনক পরিণতিতে যেতে পারেনি।

হত্যাকাণ্ডের দুদিন আগে সোহাগের সঙ্গে ‘মারামারি’ হয় খুনিদের

সোহাগ হত্যায় কেউ এগিয়ে না এলেও, ওয়ারীতে হত্যাচেষ্টায় জনতার প্রতিরোধ

এজেডএস/এমজে/এএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।