ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

সোহাগ হত্যাকাণ্ডে আনসারের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ ভিত্তিহীন: ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:১৭, জুলাই ১৩, ২০২৫
সোহাগ হত্যাকাণ্ডে আনসারের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ ভিত্তিহীন: ডিজি মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। ফাইল ছবি

রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগকে (৩৯) জনসম্মুখে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলার যে অভিযোগ উঠেছে তা ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন বাহিনীটি মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ।

রোববার(১৩ জুলাই) বিকেলে খিলগাঁওয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদরদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

ডিজি আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ঘটনার দিন আনসার সদস্যরা হাসপাতালের নির্ধারিত রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন। রোস্টারের বাইরে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গেটেই দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই, সেখানে গেটের বাইরে স্বপ্রণোদিত হয়ে আনসার সদস্যদের দায়িত্ব পালনের সুযোগ ছিল না।

তিনি বলেন, সোহাগ হত্যার ঘটনা হাসপাতালের তিন নম্বর গেটে ঘটে। সেদিন সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ৩ নম্বর গেটে রোস্টার অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেছেন ১ জন আনসার সদস্য। এরপর সেখানে আনসার সদস্যের উপস্থিতি ছিল না রোস্টার অনুযায়ী। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মোট নিয়োজিত আনসার সদস্যের সংখ্যা ৮০ জন। এর মধ্যে রোস্টার অনুযায়ী, সকাল ৬ টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত ২৪টি স্পটে দায়িত্ব পালন করেন ২৫ জন আনসার সদস্য।

আনসারের ডিজি বলেন, হাসপাতালের কোথায় কীভাবে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন সেটা নির্ধারণ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ, ডিরেক্টর ও ডিডি (প্রশাসন)।  বিকেল ৫ টা ৫০ মিনিটে সোহাগ হত্যার ঘটনা ঘটে। তখন ঘটনাস্থল তিন নম্বর গেটে দায়িত্ব পালন অবস্থায় কোনো আনসার সদস্যকে রাখেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সুতরাং, সোহাগ হত্যার ঘটনায় আনসার সদস্যদের অবহেলা বা ব্যত্যয়
দেখার কোনো সুযোগ নেই।

ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ড হৃদয় বিদারক উল্লেখ করে মেজর জেনারেল সাজ্জাদ মাহমুদ বলেন, ঘটনার সময় কয়েকশ লোক সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কেউ কেউ ভিডিও করছিলেন। কিন্তু তাদের কেউ নিকটস্থ আনসার ক্যাম্পে খবর দেননি, কল করেননি। কেউ ক্যাম্পে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে বলেননি। শুধু তাই নয়, হাসপাতালের আনসারের প্লাটুন কমান্ডারকেও জানান নাই। যখন প্লাটুন কমান্ডার খবর পেয়েছে তখন তিনি ঘটনাস্থলে দৌড়ে আসেন। তখন ভুক্তভোগীর বুকের ওপরে উন্মত্ততা চলছিল। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে খবর দেন। তিনি জানান, গেটের বাইরে এরকম একটা
ঘটনা ঘটছে। এরপরই ভিকটিমকে গেটের ভেতরে টেনে নেয়া হয়।

এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, হাসপাতালের বাইরের ঘটনা বলে আনসারকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

আনসারের ডিজি বলেন, আনসারের কর্তব্য দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কিন্তু ৩ নম্বর গেট এলাকায় তখন সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা নাই। তখন রোস্টার অনুযায়ী, আনসার সদস্যদের ডিউটিও ছিল না। তাহলে আনসার সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলা কোথায়? কেউ তো খবর দেননি। যতোক্ষণে প্লাটুন কমান্ডার খবর পেয়েছেন ততোক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। ঘটনা শেষ! তাছাড়া

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেননি।

এই মর্মান্তিক ঘটনায় দেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মতো বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৬১ লাখ সদস্য গভীরভাবে শোকাহত বলে জানান ডিজি।

তিনি বলেন, আমরা নিহতের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যায় রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ নামে এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও পরে এলোপাতাড়িভাবে পাথর নিক্ষেপ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এ সময় লাশের ওপর তাদের লাফাতে দেখা যায়।

গত ১১ জুলাই পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এজাহারভুক্ত আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় গ্রেপ্তার তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। একই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) আলমগীর (২৮) ও মনির ওরফে ছোট মনির (২৫) নামে আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

গত শনিবার (১২ জুলাই) রাতে মো. টিটন গাজী (৩২) নামে আরও এক এজাহারভুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। ওইদিন গভীর রাতে নেত্রকোণা জেলা থেকে সজীব ব্যাপারী (২৭) ও মো. রাজিব ব্যাপারী (২৫) নামের আরও দুইজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ নিয়ে মোট সাতজনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এসসি/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

জাতীয় এর সর্বশেষ