ঢাকা, সোমবার, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৬ মে ২০২৫, ২৮ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

শাহবাগে জুলাই ঐক্যের সমাবেশ, ফ্যাসিবাদ ফেরার পথ বন্ধের আহ্বান 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:২৬, মে ২৫, ২০২৫
শাহবাগে জুলাই ঐক্যের সমাবেশ, ফ্যাসিবাদ ফেরার পথ বন্ধের আহ্বান  শাহবাগে জুলাই ঐক্যের সমাবেশ। ছবি: জিএম মুজিবুর

জুলাইয়ের সকল শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখে দিতে রাজধানীর শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছে ‘জুলাই ঐক্য’ প্ল্যাটফর্ম।

রোববার (২৫ মে) বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে এই প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।

এতে সংহতি জানায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক দল ও সংগঠন।  ফ্যাসিস্ট সরকারের ফেরার পথ চিরতরে বন্ধের আহ্বান জানান বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা।

সমাবেশে আয়োজক ও আগতদের ‘পেতে চাইলে মুক্তি, ছাড়ো ভারত ভক্তি’, ‘একটা একটা লীগ ধর, ধইরা ধইরা জেলে ভর’, ‘সাঈদ, ওয়াসিম, মুগ্ধ, শেষ হয়নি যুদ্ধ’, ‘গোলামি না আজাদি, আজাদি আজাদি’, ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন, রুখে দাও জনগণ’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের রণসংগীতের মাধ্যমে বিকাল ৪টায় শুরু হয় মূল সমাবেশ। এরপর জুলাই-আগস্ট শহীদদের স্মরণে পালন করা হয় এক মিনিট নিরবতা।

'জুলাই ঐক্যে’র সংগঠক এবি জোবায়েরের সঞ্চালনায় সমাবেশের উদ্বোধন করেন শহীদ হৃদয়ের বড় ভাই আনিস। উদ্বোধনী বক্তব্য দেন জুলাই ঐক্যের সংগঠক মোসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ। এরপর সংহতি জানিয়ে একে একে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী কওমি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি মাকসুদুর রহমান, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আহ্বায়ক মাসুদ রানা, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী ডা. জাহিদুল বারী, শহীদ মিরাজের বাবা আব্দুর রব, ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদেক কাইয়ুম, ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব, জামায়াত ইসলামীর নেতা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব।

সমাবেশে ইসলামী ছাত্রশিবিরের প্রকাশনা সম্পাদক সাদিক কায়েম বলেন, গত ১৬ বছর ধরে হাসিনা ও তার দোসররা ভারতের প্রেসক্রিপশনের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, বিচার বিভাগকে ধ্বংস করেছে, শাসন বিভাগকে ধ্বংস করেছে, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করেছে আমাদের দেশের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, আমাদের আলেম ওলামাকে হত্যা করেছে, শাপলায় হাজার হাজার আলেম-ওলামাদের হত্যা করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবে শহীদদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজকে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। জুলাইয়ের পরে আমাদের স্বপ্ন ছিল একটি ইনসাফভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং জুলাইয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে যারা লড়াই করেছে সেই সব অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একটি ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণ। কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি জুলাইয়ে ঠিকাদাররা সেই ঐক্যকে বিনষ্ট করেছে।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, বাংলাদেশে যে ভারতীয় আধিপত্যবাদ গেঁড়ে বসেছে, এর প্রথম মিশন হচ্ছে পিলখানা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা। তারপর আমরা দেখেছি, এদেশের দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে। তারপর শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড। সর্বশেষ ২ হাজার শহীদের বিনিময়ে ও ৫০ হাজার আহত সহযোদ্ধার বিনিময়ে আজকের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা হয়েছে। অতএব আগামীর বাংলাদেশে, আগামীর রাজনীতিতে যারা ভারতের সুরে কথা বলবেন, তাদেরকে দেশের জনগণ ভারতে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।  

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার ছিল একটি খুনি সরকার। তারা অসংখ্য মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে, নির্যাতনে করেছে, কারাগারে রেখেছে, বাড়ি-ঘর দখল করেছে। তাদের অত্যাচারে অনেকে বাড়ি-ঘরে থাকতে পারেনি। জুলাই আন্দোলনে খুনি হাসিনার সরকার শত শত ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালিয়েছে। আজকে প্রায় দশ মাস হতে চলেছে, এখনো পর্যন্ত শহীদদের তালিকা আমরা করতে পারিনি। এখনো পর্যন্ত শহীদদের পরিবার কীভাবে চলছে, কে কোথায় কীভাবে আছে আমরা সেই খবর রাখিনি।

তিনি আরো বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের রক্তের শপথ, আমরা কোনোভাবে খুনিদের বিচারের বাইরে রাখবো না। আজ হোক আর কাল হোক তাদেরকে ফাঁসিতে ঝোলাতেই হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরো বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। আমাদের মধ্যে ভুল হতে পারে, তর্ক-বিতর্ক হতে পারে, ভুল বোঝাবুঝি হতে পারে, কিন্তু দিনশেষে আমাদের ঐকমত্য হতে হবে এবং ঐক্যমত্যের মধ্য দিয়ে বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের ফিরে আসার পথ চিরতরে বন্ধ করতে হবে।

এসসি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।