ঢাকা, রবিবার, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৮ মে ২০২৫, ২০ জিলকদ ১৪৪৬

জাতীয়

ফুটপাতে বাইকারদের দৌরাত্ম্য

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৩১, মে ১৮, ২০২৫
ফুটপাতে বাইকারদের দৌরাত্ম্য ফুটপাতে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: রাজধানী ঢাকা বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহর। জনসংখ্যার অতি ঘনত্বের পাশাপাশি এখানে সভা-সমাবেশ ও মিছিল-মিটিং লেগেই থাকে।

এর সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নমূলক কাজসহ নানা অব্যবস্থাপনায় নগরের রাস্তায় যানজট নিত্যদিনের চিত্র। তবু জীবনের প্রয়োজনে, দায়িত্বের তাগিদে কিংবা প্রতিদিনের অভ্যস্ততায় রাজধানীর মানুষকে রাস্তায় নামতে হয়।

এর মধ্যে অনেকে যানজট এড়াতে ও সময় বাঁচাতে চলাফেরা করেন ফুটপাত দিয়ে। অনেকে স্বাস্থ্য সচেতনতার জায়গা থেকেও হাঁটাহাঁটি করেন ফুটপাতে। কিন্তু মোটরসাইকেলচালকদের দৌরাত্ম্যে নগরবাসীর এই সামান্য হাঁটার জায়গাটুকুও যেন সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বাইকাররা মূল সড়ক ছেড়ে ফুটপাতে উঠে পড়েন। তাতে তৈরি হয় দুর্ঘটনার ঝুঁকি, থমকে যায় পথচারীদের চলাচল।  

যদিও কিছু মোটরসাইকেল চালকের দাবি, অনেক ক্ষেত্রে ব্যস্ততার জন্য বা জরুরি প্রয়োজনে তারা ফুটপাত গলে একটু সামনে এগিয়ে যেতে চান। আর ট্রাফিক পুলিশ বলছে, আইন লঙ্ঘন করে ফুটপাতে উঠে যাওয়া মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হলেও এ প্রবণতা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এক্ষেত্রে বাইকারসহ জনগণেরই সচেনতা প্রয়োজন।

রোববার (১৮ মে) সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের বিপরীত পাশে দেখা যায়, ট্রাফিক সিগন্যাল পড়তেই এক মিনিটও দেরি না করে ফুটপাতের ওপর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে গন্তব্য ছুটছেন চালকেরা।

ফুটপাতে মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য।  ছবি: জিএম মুজিবুরফুটপাত দিয়ে উঠে যাওয়া একটি রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্মের মোটরসাইকেলচালক মোহাম্মদ ইউনূস আলীর সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। পথচারীর হাঁটার ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘কী করব ব্যস্ততা আছে, তারপর যানজট তো ঢাকা শহরে লেগেই থাকে। ১০ মিনিটের রাস্তা যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগে, তবু পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে ফুটপাত ব্যবহার করতে হচ্ছে। ’

পুলিশ মামলা করলে তখন কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এর আগেও মামলা খেয়েছি, এরপরও যদি মামলা দেয় কিছু করার নেই। কারণ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত একটা ট্রিপ মারতে পারিনি। ’ 

রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ জব্বার মিয়া সাধারণত ফুটপাত দিয়ে চলাচল করেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমি আগারগাঁ থেকে প্রতিদিনই হেঁটে মহাখালী আমার অফিসে যাই। কিন্তু এই মোটরসাইকেলের অত্যাচারে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার উপায় নেই। কারণ সব সময়ে ভয়ে থাকতে হয়, কখন পেছন থেকে এসে মেরে দেয়। এই বিষয়ে পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে কি না আমার জানা নেই। এভাবে চলতে থাকলে রাজধানীতে পায়ে হেঁটে চলাচলের আর কোনো উপায় থাকবে না। ’

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের শেরেবাংলা জোনের তেজগাঁও বিভাগের সার্জেন্ট মোহাম্মদ রাজিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘ফুটপাত দিয়ে মোটরসাইকেল চালানোর অপরাধে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ সালের ৯২ ধারা অনুযায়ী শাস্তি আছে। প্রথমবার উঠলে এক হাজার টাকা দ্বিতীয়বার উঠলে দুই হাজার টাকার মামলা করা হচ্ছে। তারপরও কোনোভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। সকাল ৯টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মধ্যে আমি ১১টা মামলা করেছি, আবারও করব। কিন্তু জনগণ যদি সচেতন না হয় হলে মামলা দিয়ে কি সচেতন করা সম্ভব?’

জিএমএম/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।