এপ্রিল মাসে সারা দেশে ৫৯৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৮৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন এক হাজার ১২৪ জন। ২১৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২২৯ জন, যা মোট নিহতের ৩৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এই সময়ে সাতটি নৌ-দুর্ঘটনায় আটজন নিহত, চারজন আহত হয়েছেন। ২২টি রেল দুর্ঘটনায় ২৪ জন নিহত এবং ছয়জন আহত হয়েছেন বলে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নয়টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং নিজস্ব তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করেছে।
ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ২৯ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্রাণহানি ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ; রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১০ দশমিক ৭৯ শতাংশ, প্রাণহানি ১১ দশমিক ২২ শতাংশ; চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ২০ দশমিক ৫৭ শতাংশ, প্রাণহানি ২২ দশমিক ৪৪ শতাংশ; খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ, প্রাণহানি ১৪ দশমিক ৬২ শতাংশ; বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৬ দশমিক ৪০ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ; সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ৭৩ শতাংশ, প্রাণহানি ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ; রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ৫ দশমিক ২২ শতাংশ, প্রাণহানি ৫ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাণহানি ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৭৩টি দুর্ঘটনায় ১৫৪ জন নিহত হয়েছেন। রংপুর বিভাগে সবচেয়ে কম ৩১টি দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত হয়েছেন। একক জেলা হিসেবে চট্টগ্রাম জেলায় ৩৫টি দুর্ঘটনায় ৪৬ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম নীলফামারী জেলায়। এই জেলায় কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকায় ৩৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত এবং ২৭ জন আহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন; বেপরোয়া গতি; চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা; বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল; তরুণ-যুবকদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো; জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা; দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা; বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি; গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সুপারিশগুলো হলো—দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি; চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করা; বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি; পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করা; মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা পার্শ্ব রাস্তা (সার্ভিস রোড) তৈরি; পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ; গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ; রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের ওপর চাপ কমানো; টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন; সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বিবৃতিতে বলেন, গত মার্চ মাসে ৫৮৭টি দুর্ঘটনায় ৬০৪ জন নিহত হয়েছিলেন। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছিলেন ১৯ দশমিক ৪৮ জন। এপ্রিল মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৯ দশমিক ৬ জন। এই হিসেবে প্রাণহানি কমেছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রাণহানি কমার লক্ষণ নেই। অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে। এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারি এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। যানবাহনের বেপরোয়া গতি এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। এজন্য সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
এমআইএইচ/এমজেএফ