ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

ফেনীতে সেই ভয়াল বন্যার দিন আজ, বারবার বন্যার সমাধান কী?

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:০৫, আগস্ট ২১, ২০২৫
ফেনীতে সেই ভয়াল বন্যার দিন আজ, বারবার বন্যার সমাধান কী? ফেনীর বন্যা (ফাইল ফটো)

ফেনী: ২১ আগস্ট ২০২৫, আজ সেই দিন। ২০২৪ সালের এই দিনে শতাব্দীর ভয়াবহ বন্যায় তলিয়ে গিয়েছিল ফেনীসহ আশপাশের জনপদ।

এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরও তিন দফা বন্যায় ভাসলো মানুষ।
প্রতিবারই একই প্রশ্ন-সমাধান কোথায়? কীভাবে রক্ষা পাবে ফেনীবাসী?

উজান থেকে নেমে এঁকে বেঁকে বয়ে চলা নদী বর্ষায় যেমন ভয়ংকর রূপ নেয়, তেমনি গ্রীষ্মে তা হয়ে পড়ে রিক্ত, চৌচির। এই দুই চরম অবস্থায়ই সীমান্তবর্তী নদী মহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়ার পাশে থাকা লাখো মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্ভোগ।

২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি করলেও, বছর ঘুরতেই আবারও তিনবার প্লাবিত হয়েছে এলাকা। সরকারের পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিলেও, নদীপারের মানুষ আজও দগদগে ক্ষত নিয়ে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছে।

স্থানীয়রা মনে করেন, টেকসই বাঁধের মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আগেই নদীর প্রস্থ ও গভীরতা ফিরিয়ে না দিলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি নেই।

ফুলগাজীর কলেজ প্রভাষক জহিরুল রাজু বলেন, নদী ভারত থেকে এসে অনেক জায়গায় চিকন হয়ে গেছে। ব্রিজ তৈরি করতে গিয়ে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান নদীর গলা চেপে ধরেছে। ফলে পানি বের হতে পারে না। তখনই বন্যা হয়।  

স্থানীয় সাংবাদিক কবির আহম্মদ নাসির বলেন, বন্যার সময় নদী তীরে ভাঙন দেখা দিলেই শুধু পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেখা মেলে। বছরজুড়ে তারা আর নজরে পড়ে না। যদি তারা বর্ষার আগেই নদীপারের গাছপালা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করত, তাহলে নদীর আচরণ এতটা বিরূপ হতো না।

পরশুরামের বাসিন্দা কাওসার আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, নদী দখল করে দোকান, ঘরবাড়ি হয়েছে বহু জায়গায়। এসব দখলমুক্ত না করলে কোনোভাবেই এই সমস্যা থেকে রেহাই নেই।

তিন নদী বর্ষায় জনপদ ডুবিয়ে দিলেও গ্রীষ্মে একেবারে শুকিয়ে যায়। কৃষকরা পানির অভাবে ফসল চাষ করতে পারেন না। স্থানীয়রা এই পানি ব্যবস্থাপনার ভারসাম্যহীনতা থেকেও মুক্তি চান। তারা ভারতের সাথে যৌথ নদী কমিশনের মাধ্যমে একটি কার্যকর পানি চুক্তি দাবি করেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক ড. মুহাম্মদ মুহিব্বুল্লাহ বলেন, নদীকে তার স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে দিতে হবে। পানি যাওয়ার পথকে সুগম করতে হবে। তবেই নদী অভিশাপ না হয়ে আশীর্বাদ হবে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আখতার হোসেন বলেন, বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।  

  • গত ৯ বছরে ফেনীর তিন নদীর বাঁধ ভেঙেছে ২১৪ স্থানে।
  • ২০২৪ সালের বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ: ২ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
  • ২০২৫ সালে ক্ষতি হয়েছে আরও ২৩৮ কোটি টাকার।
  • ২০২৪-২৫ সালের বন্যায় মোট মৃতের সংখ্যা: ৩৯ জন।
  • সমস্যার সমাধানে নেওয়া হয়েছে ৮ হাজার ৮০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প।

প্রতিবছর ভারত থেকে বর্ষায় অতিরিক্ত পানি এসে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি আটকে দেওয়ার ফলে বাংলাদেশে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা ও খরা।  

বন্যা প্রতিরোধে নানা প্রকল্প, পরিকল্পনার বাস্তবায়নই এখন সবচেয়ে বড় চাওয়া ফেনীবাসীর।

এসএইচডি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।