ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেছেন, হাজার শহীদ, অর্ধলক্ষাধিক আহত এবং লাখ লাখ মানুষের কান্না- এই লিগেসির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে পরবর্তী যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তারা আমাদের সংস্কার ভুলে যাবে, এটা কল্পনাও করতে পারি না।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এই কথা বলেন।
গুম করাকে হত্যা থেকেও ভয়াবহ অপরাধ উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, বাংলাদেশে যত গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে, তার বিচার করা এই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। গুমের শিকার পরিবারের সদস্যরা ঠিকমত তাদের দোয়াও করতে পারেন না। তারা বেঁচে আছেন, নাকি মারা গেছেন, তা পরিবার জানেন না। আমরা দেখেছি, গুমের শিকার একজনের বাবা বলেছিল, আমি কোনো বিচারও চাই না। শুধু আমার ছেলের কবর কোথায় আছে, তা জানতে চাই।
গুম হত্যার চেয়েও ভয়াবহ অপরাধ। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে যে গুম, খুন ও মানবতাবিরোধী অপরাধ নৃশংসতা ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেগুলোর বিচার করা এই সরকারের অগ্রাধিকারের মধ্যে অন্যতম। বাংলাদেশের কোনো শাসক এমন কাজ করতে পারে, তা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। ভবিষ্যতে এ ধরনের চিন্তা যাদের থাকে, তাদের কাজগুলোকে ডিফিকাল্ট করে দেওয়া আমাদের কাজ।
আইন উপদেষ্টা বলেন, সেজন্য আমরা বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করছি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পক্ষ নিচ্ছি। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক পদক্ষেপ নিচ্ছি। একইসাথে আমরা বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করেছি। বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে আপনাদের অনেক ধরনের উৎকণ্ঠা থাকে, চিন্তা থাকে, এখানে কোনো দেরি করা হচ্ছে কিনা। আমার মনে হয় না এখানে কোনো গাফিলতি আছে। এটা আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা অনেক আইন করে যাব। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলেও অনেক ভালো ভালো আইন হয়েছে। সেগুলো আওয়ামী লীগ সরকার রাখেনি। তো আমাকে প্রশ্ন করা হলো, আপনারা যেসব আইন করেন এসব পরবর্তী সরকার রাখবে কিনা? পরের যে সরকার আসবে, সে কমপক্ষে একহাজার মানুষের রক্তের উপর দিয়ে গঠিত একটি ফ্রেমওয়ার্কের মধ্য দিয়ে আসবে। তার পেছনে স্মৃতি ৫০ হাজার মানুষের আহত হওয়ার স্মৃতি। লাখ লাখ মানুষের কান্না- এত বড় একটা লিগেসির পর আমাদের পরবর্তী সরকার আমাদের সংস্কার ভুলে যাবে, এটা আমি কল্পনাও করতে চাই না।
আসিফ নজরুল বলেন, আমরা সমস্ত সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক দল ও স্টেকহোল্ডারদের সংযুক্ত করতে চাচ্ছি। কখনো তারা যেন বলতে না পারে, এখানে আমাদের কোনো অংশগ্রহণ ছিল না। এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে গিয়ে মাঝেমাঝে আমাদের সময় লাগে। আপনারা অধৈর্য হবেন না। আমরা আমাদের কাজে অটল রয়েছি। আমরা বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের জঘন্যতম অপরাধের বিচার করব।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২৫
এফএইচ/এমজে