ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

জাতীয়

ইলিশের দাম ঠিক না থাকলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০১ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
ইলিশের দাম ঠিক না থাকলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না: মৎস্য উপদেষ্টা

ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল অডিটোরিয়ামে (বিএআরসি) ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রজনন সাফল্য নিরূপণ, জাটকা সংরক্ষণ ও ভবিষ্যৎ করণীয়’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।  

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. অরুরাধা ভদ্রের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন।  

ইলিশের অর্থনৈতিক গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ফরিদা আখতার বলেন, মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি ইলিশ রপ্তানি করা যেতে পারে। আমরাও ইলিশ রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আনতে পারি। তবে আগে আমাদের দেশের মানুষকে ইলিশ খাওয়াতে হবে। এবার জুন মাসের পরে যখন ইলিশ বাজারে আসবে তখন যেন দামটা ঠিক থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা না হলে জনগণ আমাকে ক্ষমা করবে না।  

তিনি বলেন, আমরা যদি যথেষ্ট সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারি। তাহলে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। আর ৯৫ ভাগ জেলেরা যদি ইলিশ ধরা বন্ধের সময় তারা না ধরেন তাহলে কেন আমরা বাকি কাজটা করতে পারবো না। সরকারের সহায়তা যেন জেলেরাই পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এটা এলাকাভিত্তিক করতে হবে।  

উপদেষ্টা বলেন, ইলিশ শুধু জালের কারণে নষ্ট হচ্ছে। এটা নিয়ে অভিযান চলছে, অনেক কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। মুন্সীগঞ্জে জালের কারখানা রয়েছে। সেখানে বৈধ ও অবৈধ জাল তৈরি হয়। এজন্য অবৈধ জাল তৈরি বন্ধ করতে হবে, কারখানা নয়। এক্ষেত্রে মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক আন্তরিক আছেন।  

কর্মশালায় বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আশরাফুল আলম মূল প্রবন্ধে বলেন, দেশে ইলিশের মোট উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়লেও গত ২ বছর যাবৎ বড় আকৃতির ইলিশের সংখ্যা কমছে। এছাড়া দূষণের কারণে নদ-নদীতে ইলিশের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমছে। সেই সঙ্গে কারেন্ট জালসহ ক্ষতিকর জাল ইলিশ মাছের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইলিশ গবেষণায় আরো জোর দেওয়ার তাগিদ দিতে হবে। জাটকা নিধন বন্ধ করতে পারলে বছরে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ইলিশ উৎপাদন সম্ভব।

ইলিশ গবেষণায় জোর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে মূল প্রবন্ধে বলা হয়েছে, ইলিশসহ নদ- নদীর অন্যান্য মৎস্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নদীদূষণ প্রতিরোধ করতে হবে। ইলিশের সহনশীল উৎপাদন বজায় রাখতে ন্যূনতম ৬ দশমিক ৫ সেমি. ফাঁসের জাল ব্যবহার করতে হবে। জাটকাকে বড় হওয়ার সুযোগ দিতে হবে। দেশের ৬টি ইলিশ অভয়াশ্রমে মার্চ- এপ্রিল জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে। একই সঙ্গে অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধকালীন জাটকা ধরা থেকে বিরত থাকতে হবে।  

জাটকা সংরক্ষণ নতুন গবেষণা ও কৌশল প্রয়োগ নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগ প্রফেসর ড. মো. ইয়ামিন হোসেন বলেন, ইলিশ সংরক্ষণে ইলিশের জিনগত বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে যৌথভাবে নদীতে ইলিশ ধরা বন্ধ করতে হবে। ইলিশ সংরক্ষণে গুরুত্ব পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করে তরুণ প্রজন্মকে সচেতন করতে হবে। আন্তর্জাতিক সংস্থা সহায়তার জলবায়ু সহনশীল প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। বছরে একদিন ইলিশ ডে পালন করে ইলিশের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধিতে মন্দির, মসজিদ ও গীর্জায় খুতবায় বা প্রার্থনায় ইলিশের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০২৫
জিসিজি/এসএএইচ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।