মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) ও প্যালেস্টাইন লিবারেশন অরগানাইজেশনের (পিএলও) ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অভিযোগ, তারা সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দিচ্ছে এবং শান্তি প্রচেষ্টা ব্যাহত করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, পিএ ও পিএলও সদস্যদের আর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা দেওয়া হবে না। ঘোষণা অনুযায়ী, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও পিএলও তাদের প্রতিশ্রুতি মানেনি এবং শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করেছে, এজন্য তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও পিএলও ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির জন্য কাজ করে আসছে।
তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর কংগ্রেসকে জানিয়েছে, এ দুটি সংগঠন মধ্যপ্রাচ্য শান্তি চুক্তিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তারা অভিযোগ করেছে, ফিলিস্তিনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত (আইসিসি) ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) আশ্রয় নেওয়ার মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে বিরোধ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এছাড়া, পিএ ও পিএলওর ওপর সন্ত্রাসবাদে মদদ, সহিংসতা উৎসাহ দেওয়া ও সন্ত্রাসীদের ও তাদের পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার অভিযোগও আনা হয়েছে। এর একটি উদাহরণ হিসেবে ফিলিস্তিনে পাঠ্যবইয়ের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদে উৎসাহ দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
ইসরায়েল গত ২২ মাস ধরে গাজায় যে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে, তা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা ‘গণহত্যার মতো’ বলে বর্ণনা করেছেন। ইসরায়েলি অভিযানে ইতোমধ্যে ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং অবরোধের কারণে লাখ লাখ মানুষ অনাহারের ঝুঁকিতে রয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অধিকৃত পশ্চিমতীরে বেআইনি ইসরায়েলি বসতি আরও বেড়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর সহিংসতাও বেড়েছে। সেখানে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। কখনো ইসরায়েলি সেনাদের হাতে, কখনো ইহুদি বসতকারীদের হাতে তাদের প্রাণ গেছে।
এদিকে, ইসরায়েলের এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক আইনি পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্তের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
দক্ষিণ আফ্রিকাসহ একাধিক দেশ আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে অভিযোগ করেছে, গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে। গাজায় যুদ্ধের সময়ও ইসরায়েলকে সামরিক সহায়তা দিয়ে গেছে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিচার চেষ্টার বিরোধিতা করেছে।
তবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি জাতিসংঘে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সদস্যও। এর ফলে আদালতগুলোতে মামলার সুযোগ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন নিষেধাজ্ঞা এমন সময় এলো, যখন ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং কানাডাসহ বেশ কয়েকটি পশ্চিমা দেশ আগামী সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
ট্রাম্প অবশ্য এসব প্রচেষ্টাকে গুরুত্বহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন, এতে হামাসকে পুরস্কৃত করা হবে। সংগঠনটি ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে রয়েছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র আরও কিছু নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যেগুলো সমালোচকদের চোখে পড়েছে। যেমন, আইসিসির বিচারকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে যারা নেতানিয়াহু ও গ্যালান্তের বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেছিলেন। এমনকি জাতিসংঘের ফিলিস্তিনবিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেসকা আলবানেজের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তখন যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল, আলবানেজ যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক যুদ্ধ চালাচ্ছেন।
এর জবাবে জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ওপর এমন আক্রমণ ও হুমকি বন্ধ হওয়া উচিত।
আরএইচ