দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিরোধী নেতা লি জে-মিয়ং নিরঙ্কুশ জয় পেয়েছেন, যা দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড় ধরনের পালাবদলেরই নির্দেশ। খবর বিবিসির।
মাত্র ছয় মাস আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল সামরিক শাসন জারির চেষ্টা করেছিলেন, যা ব্যাপক জনরোষের জন্ম দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
ইউনের সামরিক আইন ঘোষণার সেই উদ্যোগ ছিল স্বল্পস্থায়ী, কিন্তু অত্যন্ত বিতর্কিত। তখন দেশজুড়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল।
পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে সংসদ তাকে অভিশংসিত করে এবং তিনি প্রেসিডেন্ট পদ থেকে অপসারিত হন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে ফৌজদারি মামলা চলছে।
ওই ঘটনার পর সৃষ্ট রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা বোঝায়, বিজয়ী লি জে-মিয়ংয়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখনো সামনে। তাকে এমন একটি বিভক্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, যারা এখনো পুরো পরিস্থিতি সামলে উঠতে পারেনি।
আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তাকে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে নতুন প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে হবে, যেন মিত্র দেশটির শুল্কের ধাক্কা কিছুটা কমানো যায়।
তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের মন্ত্রিসভার সদস্য কিম মুন-সু। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে জনমত জরিপে লি জে-মিয়ংয়ের পেছনে ছিলেন কিম মুন-সু।
বুধবার স্থানীয় সময় ভোরের দিকে তিনি পরাজয় স্বীকার করে লিকে তার বিজয়ের জন্য অভিনন্দন জানান। এর আগের এক ভাষণে লি বিজয়ের ইঙ্গিত দিলেও সরাসরি ঘোষণা দেননি। তিনি বলেছিলেন, দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করাই হবে তার প্রথম অগ্রাধিকার।
মাত্র তিন বছর আগেই নির্বাচনে ৬১ বছর বয়সী লি জে-মিয়ং ইউন সুক ইওলের কাছে অতি অল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়েছিলেন। ইওলের পতনের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
দক্ষিণ কোরিয়ার সদ্যসমাপ্ত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আলোচনায় উঠে এসেছে আরেক প্রার্থী লি জুন সকের নাম। ভোটের দিন সন্ধ্যায় প্রকাশিত এক্সিট পোল ইঙ্গিত দেয়, তিনি নির্বাচনী দৌড়ে অনেক পিছিয়ে ছিলেন। মাত্র ৭.৭ শতাংশ ভোট পেতে পারেন বলে তখন জানা যাচ্ছিল। এরপরই তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।
তবে নির্বাচনী লড়াই থেকে ছিটকে গেলেও তরুণ পুরুষ ভোটারদের মধ্যে তার সমর্থন ছিল লক্ষণীয়। নারীবাদবিরোধী মতাদর্শের জন্য তিনি এই শ্রেণির মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।
বিশ্লেষকদের মতে, তার এই অবস্থান অনেকটা মিল রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের সময়কার রাজনীতির সঙ্গে—যেখানে নারীর সমতা ছিল অন্যতম বিতর্কিত ইস্যু।
নির্বাচনে জয় লির এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তন। কারণ তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কেলেঙ্কারির মধ্যে জড়িয়েছিলেন—দুর্নীতির অভিযোগ থেকে শুরু করে পারিবারিক বিরোধ পর্যন্ত নানা বিষয়ে তদন্তের মুখেও পড়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, লির এই জয় ক্ষমতাসীন পিপল পাওয়ার পার্টির (পিপিপি) প্রতি জনগণের প্রত্যাখ্যান হিসেবেও দেখা হচ্ছে। দলটির ভাবমূর্তি ইওলের সামরিক শাসন জারির চেষ্টার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আরএইচ