ঢাকা, সোমবার, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২, ১২ মে ২০২৫, ১৪ জিলকদ ১৪৪৬

আন্তর্জাতিক

‘শাহিন-থ্রি’র জোরে কতটা এগিয়ে পাকিস্তান?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৬, মে ১১, ২০২৫
‘শাহিন-থ্রি’র জোরে কতটা এগিয়ে পাকিস্তান? অন্যান্য

পাল্টাপাল্টি হামলার চার দিনের মাথায় যুদ্ধবিরতিতে গেল ভারত ও পাকিস্তান। যদিও কয়েকঘণ্টা না যেতেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ভারত।

তবে এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। যে কারণে ফের শঙ্কা জেগেছে যুদ্ধের। পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মানুষদের জন্য সুসংবাদ আসছে তো! নাকি যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগে তা নিভে যাবে? পারমাণবিক শক্তিধর দুই দেশের যুদ্ধ ডেকে আনবে আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কুপ্রভাব। কতটা ভয়ংকর হতে পারে সেই যুদ্ধ?

পাকিস্তানের তৈরি সবচেয়ে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের নাম শাহিন-থ্রি। কঠিন জ্বালানি দিয়ে চলা মাঝারি পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটির পাল্লা ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার। এতে উৎক্ষেপণের পর উচ্চতা সংশোধনের (পিএসএসি) ব্যবস্থাও আছে। পারমাণবিক এবং প্রচলিত উভয় ধরনের অস্ত্র নিয়ে ক্ষেপণাস্ত্রটি উড়তে পারে। কঠিন জ্বালানি দ্রুত প্রতিক্রিয়ার ক্ষমতার জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে পিএসএসি বৈশিষ্ট্য একে অধিকতর নির্ভুলতা নিশ্চিত করা এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এড়ানোর জন্য গতিপথ পরিবর্তনে সক্ষম করে তোলে। সব মিলিয়ে এটি পাকিস্তানের কৌশলগত অস্ত্রাগারে থাকা সবচেয়ে দীর্ঘ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র। মূলত ভারতের বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পাকিস্তান অস্ত্রটি ডিজাইন করে।

২০১৬ সালে একটি সামরিক কুচকাওয়াজে পাকিস্তান প্রথম শাহিন-থ্রি ক্ষেপণাস্ত্র সামনে আনে। অস্ত্রটির কমপক্ষে ২টি সফল পরীক্ষা চালিয়েছে দেশটি। ভারতের অগ্নি-থ্রি ক্ষেপণাস্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করতে পাকিস্তান এই ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে। স্থলপথে যেকোনো স্থানে এটি বয়ে নেওয়ার জন্য আছে চীনের তৈরি ট্রান্সপোর্টার ইরেক্টর লঞ্চার।

ভারতের মূল ভূখণ্ড ছাড়াও বঙ্গোপসাগরের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের ভারতীয় স্থাপনাতেও শাহিন-থ্রি আঘাত হানতে পারবে। মূলত এই পরিকল্পনা থেকেই পাকিস্তান ক্ষেপণাস্ত্রটি ডিজাইন করে। কারণ, দেশটির ধারণা ওই অঞ্চলে ভারত তার কৌশলগত ঘাঁটি তৈরি করেছে এবং সেখানে অস্ত্র মজুদ করে। আরব সাগর, পারস্য উপসাগর ও লোহিত সাগরে থাকা লক্ষ্যবস্তুকেও এই অস্ত্র দিয়ে ঘায়েল করা সম্ভব। পাকিস্তানের পশ্চিমে ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় পুরোটাই এটির পাল্লার মধ্যে আছে।

শাহিন-থ্রি তৈরির পরও অনেকদিন অস্ত্রটির ক্ষমতা পাকিস্তান গোপন রাখে। শুরুতে এটি দেশটির মহাকাশ কর্মসূচির জন্য স্পেস পেলোড পাঠাতে বুস্টার রকেট হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা ছিল বলে শোনা যায়। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে নানা জল্পনা-কল্পনার পর অবশেষে তা ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে উন্মোচিত হয়। ২০১৫ সালে ২ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার পাল্লা দেখিয়ে এটির সফল পরীক্ষা চালানো হয়। ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ উপকূল থেকে তা উড়ে গিয়ে আরব সাগরে আঘাত করে।

পাকিস্তানের হাতে শাহীন-থ্রি আসার পর দেশটির হাত থেকে ভারতের কোনো অংশই আর নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেন পাকিস্তান বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র কমান্ডার এয়ার মার্শাল শহীদ লতিফ। পাকিস্তানি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এবং সাংবাদিক ফারুখ সেলিম মনে করেন, ভারতীয় উপমহাদেশে কৌশলগত স্থিতিশীলতা আনতে ক্ষেপণাস্ত্রটি ভূমিকা রেখেছে।

ভারত ও পাকিস্তানের তুলনামূলক পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার 

১৯৭৪ সালের মে মাসে ভারত সর্বপ্রথম পারমাণবিক পরীক্ষা চালায়। এরপর ১৯৯৮ সালের মে মাসে একাধিক পরীক্ষা চালিয়ে ভারত নিজেকে একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করে। এর কিছুদিনের মধ্যেই পাকিস্তানও ধারাবাহিকভাবে ছয়টি পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় এবং আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

এর পর থেকে দুই দেশই পাল্লা দিয়ে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ও মজুত করে যাচ্ছে। এ প্রকল্পে দুই দেশই কোটি কোটি ডলার অর্থ খরচ করছে।

বর্তমানে ভারতের হাতে ১৮০টির বেশি পারমাণবিক ওয়ারহেড রয়েছে। আর পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে রয়েছে ১৭০টির বেশি ওয়ারহেড। পাকিস্তান এ ক্ষেত্রে তাদের আঞ্চলিক মিত্র চীন থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেয়ে থাকে। পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারে মূলত রয়েছে স্বল্প ও মাঝারিপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো ভারতের ভেতরের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার মতো দূরত্ব অতিক্রম করতে সক্ষম।

পারমাণবিক নীতি

২০০৩ সালে প্রকাশিত ভারতের পারমাণবিক নীতি অনুযায়ী, একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই পারমাণবিক হামলার অনুমোদন দিতে পারেন। ভারতের পারমাণবিক নীতির চারটি মূল স্তম্ভ আছে— ১. প্রথমে ব্যবহার নয়, ২️. নির্ভরযোগ্য ন্যূনতম প্রতিরোধক্ষমতা, ৩. ভয়াবহ প্রতিশোধ এবং ৪. জীবাণু অস্ত্র বা রাসায়নিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যতিক্রম।

অর্থাৎ শত্রুপক্ষ যদি পারমাণবিক হামলা চালায়, সে ক্ষেত্রেই কেবল ভারত পাল্টা হামলা চালাবে।

অন্যদিকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে পাকিস্তান কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পূর্ণাঙ্গ ও লিখিত নীতিমালা প্রকাশ করেনি। এটাই মূলত তাদের কৌশল বলে মত সমর বিশেষজ্ঞদের। ভারতের সামরিক শক্তির বিপরীতে একটি প্রতিরোধমূলক চাপ তৈরি করার উদ্দেশে পাকিস্তান তাদের পারমাণবিক নীতিমালায় অস্পষ্ট করে রেখেছে।  

এরপরও পাকিস্তানে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের জন্য চারটি মূল ‘রেড লাইন’ বা ট্রিগার নির্ধারণ করে। এই চার ট্রিগার হলো— ১. স্থানগত সীমা ২. সামরিক সীমা ৩. অর্থনৈতিক সীমা এবং ৪. রাজনৈতিক সীমা।

পাকিস্তানের বড় অংশের বা গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ডের ক্ষতি হলে দেশটি পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে জবাব দিতে পারবে।

এমএইচডি/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।