ইউরোপের দক্ষিণাঞ্চলের দুটি দেশ স্পেন ও পর্তুগাল। প্রায় প্রতি বছরই দেশ দুটির বন ভয়াবহ আগুনের কবলে পড়ে।
কিন্তু এসব আগুনের সবগুলোই প্রাকৃতিক কারণে নয়। অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধীদের মাধ্যমে আগুন লাগানো হয়, আবার কখনো কখনো সরকারও নিয়ন্ত্রিতভাবে আগুন লাগায়।
ফলে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন, কেন এমনটা হয়? কে আগুন লাগায়? এর উদ্দেশ্য কী?
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের মতে, স্পেন ও পর্তুগালের বড় অংশজুড়ে রয়েছে ঘন বন ও পাহাড়ি অঞ্চল। অপরাধীরা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে সেখানে আগুন লাগায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো নতুন ভূমি দখল এবং সেখানে খামার সৃষ্টি করা। বন পুড়ে গেলে নতুন ভূমি সৃষ্টি হয়, সেখানে পশুপালন করা যায় কিংবা গাছ-কাঠ নির্মাণ কাজে ব্যবহার করা সহজ হয় ।
স্পেন ও পর্তুগালের অনেক জায়গায় আগুনের পর নতুন জায়গা ইউক্যালিপটাস বা পাইন গাছের বাগানে রূপান্তর করা হয়, যা ব্যবসায়িকভাবে বেশি লাভজনক।
জার্মান গণমাধ্যম এবং এপি ও রয়টার্সের মতে, অসাধু ব্যবসায়ীরা বনভূমি নষ্ট করে পরে কম দামে কাঠ বিক্রি করে থাকে। এ ছাড়া বিমা ক্ষতিপূরণ দাবি করার জন্যও অপরাধীরা বন জ্বালিয়ে দেয়। কেননা, কিছু বনের বিমা করা থাকে।
কখনো কখনো প্রতিবাদ বা দেশকে অস্থিতিশীল করার অভিযোগও থাকে অগ্নিসংযোগকারীদের বিরুদ্ধে। স্পেনে ২০২৫ সালের আগস্টের ২০ তারিখ পর্যন্ত তিন লাখ ৮২ হাজার হেক্টর বনভূমি পুড়েছে। আগুন লাগানোর অভিযোগে এ পর্যন্ত দেশটিতে অন্তত ২৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং আরও ৮৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তাধীন।
অন্যদিকে পর্তুগালেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৩৫ হাজার হেক্টরের বেশি বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। নিহত হয়েছেন অন্তত ৯ জন । গ্রেপ্তারও হয়েছেন একাধিক অপরাধী।
শুধু ২০২৫ সালেই নয়, ২০১৭ সালের এক আগুনে পর্তুগাল ও স্পেনে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সেই অগ্নিকাণ্ডও মানবসৃষ্ট ছিল।
স্পেন ও পর্তুগালের স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেক সময় পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয় না। অনেক কৃষক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, আগুনের পর জমির দাম কমে যায় এবং সেই জমিতে পরে ইউক্যালিপটাস বাগান তৈরি হয়।
সরকার কেন আগুন লাগায়?
অনেক ক্ষেত্রে পর্তুগাল ও স্পেনের সরকার নিজেই বনভূমিতে আগুন দেয়। তবে তা অপরাধের জন্য নয়। এটি নিয়ন্ত্রিত অগ্নিসংযোগ। বনভূমিতে শুকনো পাতা, ঝোপঝাড় জমে থাকলে তা বড় ধরনের দাবানলের কারণ হতে পারে।
সরকার অল্প পরিসরে পরিকল্পিতভাবে আগুন দিয়ে এসব জ্বালিয়ে দেয়। এছাড়া আগুন প্রতিরোধক লাইন তৈরি করতেও নিয়ন্ত্রিত আগুন লাগানো হয়। সমুদ্র সৈকত, পর্যটনকেন্দ্র বা জনবসতিপূর্ণ জায়গার পাশে আগুন লাগিয়ে প্রতিরক্ষামূলক ফাঁকা জায়গা তৈরি করা হয়, যেন বড় দাবানল সেখানে পৌঁছাতে না পারে। এ ছাড়া ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অনেক উদ্ভিদ আগুনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে বাঁচে। মাঝে মাঝে নিয়ন্ত্রিত আগুন জীববৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে।
জার্মান-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান হেলাল বাংলানিউজকে বলেন, ৪০ বছর ধরে ইউরোপে রয়েছি। ২০১৭-১৮ সালের দিকেও পর্তুগালে ১০ হাজার হেক্টর বনভূমি নিয়ন্ত্রিত আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আরএইচ