মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কথা না শোনায় হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ২.৩ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে হোয়াইট হাউস।
সোমবার ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক দাবি স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তহবিল স্থগিতের ঘোষণা আসে।
এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন জানিয়েছিল, হার্ভার্ডের ৯ বিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি ও অনুদান পর্যালোচনার আওতায় আনা হয়েছে। এই খবরের এক মাস পর হবিল স্থগিতের পদক্ষেপ নেওয়া হল।
প্রশাসনের দাবি গত ১৮ মাসে প্রো-প্যালেস্টাইন আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিরোধী মনোভাব ছড়িয়ে পড়েছে, তা বন্ধ করতেই এই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অ্যান্টি-সেমিটিজম টাস্ক ফোর্স হার্ভার্ডকে অভিযুক্ত করে জানায়, সর্বোচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এমন একটি মানসিকতা গড়ে উঠেছে যে— সরকারি অর্থ সহায়তা পেলেও তারা নাগরিক অধিকার রক্ষায় কোনো দায়বদ্ধতা অনুভব করে না।
এই টানাপোড়েন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বৃহৎ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যকার বাক-স্বাধীনতা ও একাডেমিক স্বাধীনতা নিয়ে দ্বন্দ্ব। প্রশাসন ইতোমধ্যে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে।
এদিকে প্রো-প্যালেস্টাইন বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বেশ কয়েকজন বিদেশি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিতারণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, আর শতাধিক শিক্ষার্থীর ভিসাও বাতিল করা হয়েছে।
হার্ভার্ডের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার সোমবার (১৪ এপ্রিল) প্রকাশিত এক চিঠিতে জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবিগুলো বিশ্ববিদ্যালয় কমিউনিটির ওপর সরাসরি নিয়ন্ত্রণ আরোপের চেষ্টা এবং এর মূল আদর্শ ও স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
তিনি লেখেন, কোনো সরকার— সে যেই দলেরই হোক— প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়তে কী শেখানো হবে, কাকে ভর্তি করা হবে বা নিয়োগ দেওয়া হবে, কিংবা কোন বিষয়ে গবেষণা হবে— তা নির্ধারণ করতে পারে না।
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস জানিয়েছেন, ট্রাম্প ‘উচ্চশিক্ষাকে আবারও মহান’ করতে চাচ্ছেন, যাতে ‘নিয়ন্ত্রণহীন ইহুদি-বিরোধিতা’ বন্ধ হয় এবং হার্ভার্ডে কোনো জাতিগত বৈষম্য বা সহিংসতা যেন ফেডারেল অর্থায়নে উৎসাহিত না হয়।
শুক্রবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠিতে জানানো হয়েছে, হার্ভার্ড ফেডারেল বিনিয়োগ পাওয়ার জন্য যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও নাগরিক অধিকার মেনে চলার শর্ত রয়েছে, তা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এমন অনুষদ, কর্মী ও শিক্ষার্থীদের প্রভাব কমাতে হবে যারা শিক্ষার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিজমে জড়িত এবং প্রত্যেক বিভাগে মতবাদের বৈচিত্র্য নিশ্চিত করতে বাহ্যিক প্যানেল দ্বারা নিরীক্ষা চালাতে হবে।
আগস্টের মধ্যে হার্ভার্ডকে কেবল মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নির্বাচন করতে হবে, এবং জাতি, বর্ণ বা জাতীয়তার ভিত্তিতে কোনো অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে না। একইসঙ্গে, আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যাচাই-বাছাই করে দেখতে হবে, তারা যেন ‘আমেরিকান মূল্যবোধের বিরোধী না হয়’ এবং আচরণবিধি লঙ্ঘনকারী বিদেশি শিক্ষার্থীদের অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কাছে রিপোর্ট করতে হবে।
হার্ভার্ডের একদল অধ্যাপক ইতোমধ্যে ট্রাম্প প্রশাসনের এই অনুদান পর্যালোচনা প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন করেছেন।
ফেডারেল তহবিল বন্ধের ফলে যে আর্থিক চাপ তৈরি হয়েছে, তা সামাল দিতে হার্ভার্ড এখন ওয়াল স্ট্রিট থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
অন্যদিকে মার্কিন প্রশাসন কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কেও ‘কনসেন্ট ডিক্রি’-তে বাধ্য করার কথা ভাবছে, যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেডারেল নির্দেশিকা মেনে চলা আইনি বাধ্যবাধকতা হয়ে যাবে। কলাম্বিয়ার শিক্ষকরাও সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ইতোমধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বরাদ্দ ৪০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান স্থগিত করা হয়েছে।
সূত্র: রয়টার্স
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৫, ২০২৫
এমএম