স্টিভ নেই। তবুও আছে তার বিশ্বব্যাপী তর্জমা।
তাই সবাই এখন আরেক স্টিভের অপেক্ষায়। কে হবেন সেই মহান ব্যক্তি যিনি শুধু ব্যবসা নয়, মানুষের জন্য রেখে যাবেন তাঁর ভালোবাসার স্বাক্ষর। স্টিভের জন্য তাঁর জীবন বদলে দেওয়া প্রতিষ্টানের নাম ‘নেক্সট’। আবারও সেই নেক্সটকেই দেখতে চাইছে বিশ্ব। জীবন বদলে একটি পণ্যই সবকিছু তা অ্যাপলই প্রমাণ করেছে।

মানব ইতিহাসে জীবন বদলের পণ্যগুলো সব সময়ই স্টিভের প্রেরণায় শক্তি যুগিয়েছে। এ ধারাতেই টমাস এডিসন এবং হেনরি ফোর্ডের দূরদৃষ্টি স্টিভকে জাগ্রত রেছেছিল সর্বদাই।
তাই পরের স্টিভ কতটা স্টিভ অনুসারী হবে তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনার ধুম্রজাল। পরের তালিকায় আছে অনেক সম্ভবনাময় ব্যক্তির নাম। এদের প্রত্যেকেই নিজগুণে এরই মধ্যে পৌঁছেছেন খ্যাতি আর সাফল্যের শীর্ষে।
সান মাইক্রোসিস্টেমসের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিনোদ খোসলা এদেরই একজন। সুদীর্ঘ সময় পুঁজিবাদী রাজত্বের নেপথ্যে অবাধ আস্থা আর দাম্ভিকতা। এটাই বিনোদের মূলমন্ত্র বলে বিশ্লেষকেরা তথ্য দিয়েছেন।
আরেক পুঁজিবাদী বিশেষজ্ঞ অ্যাকসেলের সহযোগী আর্থার পিটারসন জানান, অ্যাপল প্রতিষ্ঠাতা স্টিভকে দূর্ভাগ্যজনকভাবে অ্যাপল ছেড়ে যেতে হয়েছিল। তবে স্টিভ একে তাঁর জীবনের অর্জিত সাফল্যের আর্শিবাদ বলে উল্লেখ করেন।
অ্যাকসেল এটাও বলেন, অ্যাপল সৌভাগবান যে ১২ বছর পরে হলেও তাঁড়িয়ে দেওয়া স্টিভকে যথাযথ সম্মান দিয়ে একেবারে শীর্ষ পদে ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল। এরপর অ্যাপল শুধুই এগিয়েছে। এ ১২ বছর যদি স্টিভ অ্যাপলেই থাকত তাহলে বিশ্বপ্রযুক্তি উদ্ভাবনায় বিশ্ব আরও ১২ বছর এগিয়ে যেত। এতে অ্যাপলের তুলনায় বিশ্ব উদ্ভাবনারই সবচে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
১৯৯৭ সালে অ্যাপলে ফিরে এসেই স্টিভ তাঁর স্বপ্নপণ্যের বীজ বুনতে শুরু করেন। এ বীজের সবচে সক্রিয় এবং শক্তিশালী ফসল হচ্ছে ‘খুদে পণ্যেয় ইন্টারনেট’। ১২ বছরের পুষে থাকা উদ্ভাবনী শক্তিতে দ্রুতই মানববিকাশে উৎসর্গ করতে স্টিভ নিরলস পরিশ্রম শুরু করেন। আর এর সাফল্যগাঁথা আজ তো সরাই জানা।
অ্যাকসেল হচ্ছে ফেসবুকের অন্যতম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান। এ প্রসঙ্গে এসে যায় ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মার্ক জুকারবার্গের নাম। জুকারবার্গকেও স্টিভের মতো স্বপ্নচারী বলে বিশেষজ্ঞেরা মন্তব্য করেছেন। স্টিভের মতো জুকাবার্গও কলেজের গতানুগতিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ঝড়ে (ড্রপ আউট) পড়ে। এমন সব পণ্য আর উদ্ভাবনা জুকারবার্গ উপহার দিচ্ছেন যা সবারই চাহিদা। কিন্তু এ চাহিদার কথা কেউ কখনও অনুমান করেনি। স্টিভের মধ্যে এমন গুণই খুঁজে পেয়েছিল সবাই।
জেট ব্লু এয়াওয়েজের চেয়ারম্যান এবং স্টানফোর্ড ভার্সিটির অধ্যাপক জোয়েল পিটারসন এ ধরনের গুণসম্পন্ন মেধাবীদের ‘উৎপাদনক্ষম সৃজনশীল ব্যক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন।
আর পথপ্রদর্শকদের অর্জনকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া ছিল স্টিভ সাফল্যের অন্যতম গুণ। আর সে কারণেই ১৯৮৫ সালে অ্যাপল থেকে যাওয়া স্টিভের তুলনায় ১৯৯৭ সালে ফিরে আসা স্টিভ ছিলেন একেবারেই ভিন্ন, অপ্রতিরোধ্য।
তাই এসব বিচার বিশ্লেষণে জুকারবার্গই হতে পারেন পরবর্তী স্টিভ। স্টানফোর্ড ভার্সিটির ব্যবসাবিষয়ক অধ্যাপক জেফরি পিফিফার তাই জুকারবার্গকেই পরের স্টিভ বলে অভিহিত করেছেন।
জাপান সফটব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও মাসাওশি সন স্টিভ সম্পর্কে বলেন, স্টিভের আগে কোনো স্টিভ ছিল না। এবং স্টিভের পরেও কোনো স্টিভ নেই। এতটাই অতুলনীয় হয়ে আছেন স্টিভ।
নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোনি প্রতিষ্ঠা এবং একে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত করতে সন সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ২০০৮ সালে সন অ্যাপলকে রাজি করিয়ে সফটব্যাংকের মাধ্যমে জাপানে আইফোন নিয়ে আসেন।
এ মুহূর্তে বিশ্বের ইন্টারনেট জনসংখ্যায় চীনই এগিয়ে। আলিবাবা গ্রুপের সিইও জ্যাক মা চীনের ইন্টারনেট শিল্প বিপ্লবের ইতিহাসে সবচে সফল ব্যক্তি। সর্বাধিক ইন্টারনেট জনসংখ্যার দেশে ই-বিকিকিনিতে এখন ছুটে বেড়াচ্ছে আলিবাবা।
আলিবাবা এখন ইবের চেয়েও বাণিজ্যিক সফল। সর্ববৃহৎ ই-জনসংখ্যার চীনে খুদে ব্যবসাকে অনলাইনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সুপরিচিত করেছে আলিবাবা। ই-শপিং সংস্কৃতিতে ভোক্তা এবং পণ্য সেবাদাতার মধ্যে সমন্বয়ে আলিবাবা অঢেল অর্থের মালিক হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আলিবাবা এখন ইয়াহু ক্রয়ের জন্য দেন-দরবার করছে। এতে সফল হলে ইয়াহু হবে আলিবাবার।
জ্যাক মা তাঁর প্রতিষ্ঠান পরিচালনার গুণে কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। জ্যাক মা অনলাইন বিশ্বে চীনের পিছিয়ে থাকার হিসেবে সরকারি ব্যাংকগুলোর সেকেলে কার্যক্রমকেই চিহ্নিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে জ্যাক মা জানান, যদি ব্যাংকগুলো নিজে থেকেই না বদলে যায়, তাহলে আমরাই তাদের বদলে দেব।
স্টিভের বিশ্বপ্রযুক্তি বিপ্লবের সঙ্গে জ্যাক মার উদ্যোগের অনেক মিল খুঁজে পেয়েছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাই সংশ্লিষ্ট অনেকেই জ্যাক মাকেও স্টিভের পরের সক্রিয় সিইও বলছেন। সত্যিই ভক্তশ্রেষ্ঠ স্টিভের মতো এতটা জনপ্রিয়তা আর কোনো সিইও অর্জন করতে পারবে- এ প্রশ্নেই মুখর হয়ে আছে বিশ্বপ্রযুক্তি অঙ্গন।
বাংলাদেশ সময় ১৮১২ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১১