ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৫ মে ২০২৫, ১৭ জিলকদ ১৪৪৬

স্বাস্থ্য

অতিরিক্ত লবণ কেড়ে নিচ্ছে ২৫ হাজার জীবন

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০:৩০, মে ১৫, ২০২৫
অতিরিক্ত লবণ কেড়ে নিচ্ছে ২৫ হাজার জীবন বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ উপলক্ষে চলছে মতবিনিময় সভা।

ঢাকা: অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের মতো অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি ক্রমশ বাড়ছে মাত্রাতিরিক্ত লবণ খাওয়ার কারণে।

 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্করা প্রতিদিন গড়ে নয় গ্রাম লবণ গ্রহণ করছেন, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত দৈনিক পাঁচ গ্রামের প্রায় দ্বিগুণ। এই প্রবণতা প্রতিবছর কেড়ে নিচ্ছে প্রায় ২৫ হাজার জীবন।

বুধবার (১৪ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ ২০২৫’ উপলক্ষে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ উদ্বেগজনক তথ্য উঠে আসে।

সভায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের লবণ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সমন্বয়ক ডা. আহমাদ খাইরুল আবরার মূল প্রবন্ধে প্রক্রিয়াজাত খাবারকে অতিরিক্ত লবণ গ্রহণের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেন।  

তিনি বলেন, আপাতদৃষ্টিতে নোনতা না লাগলেও এসব খাবারে লুকানো থাকে প্রচুর পরিমাণে লবণ, যা নীরবে হৃদরোগসহ অন্যান্য অসংক্রামক রোগের মহামারি ডেকে আনছে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অবিলম্বে একটি সমন্বিত জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল প্রণয়ন এবং খাদ্য মোড়কের সামনে ‘ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিং’ বাধ্যতামূলক করার ওপর জোর দেন তিনি।

ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিংয়ের মাধ্যমে ভোক্তারা লবণ, চিনি ও চর্বির মতো ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি সম্পর্কে সহজে জানতে পারবে এবং স্বাস্থ্যকর খাবার নির্বাচনে সক্ষম হবে বলে তিনি মনে করেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী লবণের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

তিনি বলেন, লবণ শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, অতিরিক্ত গ্রহণে এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক ও কিডনি রোগের মতো মারাত্মক অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

শিশুদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয় পাঠ্যক্রমে লবণের ক্ষতিকর প্রভাব অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান মুস্তাক হাসান মো. ইফতেখার ফ্রন্ট-অফ-প্যাক লেবেলিংয়ের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বলেন, বেশিরভাগ প্রক্রিয়াজাত খাবারে অতিরিক্ত লবণ থাকলেও সুস্পষ্ট লেবেলিংয়ের অভাবে জনগণ তা জানতে পারে না। তাই এই ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি খাদ্য মোড়কে পুষ্টি উপাদানগুলো সঠিক তথ্য দেওয়ার ওপর তিনি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক সৈয়দ জাকির হোসেন জানান, সরকার অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বদ্ধপরিকর এবং এ লক্ষ্যে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের কাজ করছে।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, অচিরেই জাতীয় লবণ গ্রহণ হ্রাস কৌশল বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ডা. মো. শিব্বির আহমেদ ওসমানী জনস্বাস্থ্য রক্ষায় খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন।

তিনি দেশের জনগণকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশ তৈরিতে সরকারের সর্বাত্মক প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পিএম-১ ডা. নরুল ইসলাম, কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুঁইয়া প্রমুখ।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ‘বিশ্ব লবণ সচেতনতা সপ্তাহ’ পালিত হয়। এবারের প্রতিপাদ্য: ‘অতিরিক্ত লবণ বর্জন করি, সুস্থ জীবন গড়ি। ’

ইএসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।