বরিশাল: আন্দোলনের নামে কিছু শিক্ষার্থী শেবাচিমে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার প্রতিবাদে হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব কর্মকর্তা ও কর্মচারী বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন।
বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) বেলা ১১টায় হাসপাতালের সামনে এ মানববন্ধন হয়।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি মো. আলী আজগর বলেন, শের-ই-বাংলা মেডিডেল কলেজ হাসপাতাল মাত্র ১০০ শয্যার, কিন্তু আছে মাত্র ৫০০ শয্যার জনবল ও অবকাঠামো। কিন্তু এখানে প্রতিদিন রোগী ভর্তি থাকেন তিন হাজারেরও বেশি রোগী। আমাদের দায়িত্ব ৫০০ রোগীর সেবা দেওয়া, কিন্তু আমরা তিন হাজার রোগীকে সেবা দিই। সে কারণে আমরা যেমন সমস্যায় আছি, তেমন রোগীদেরও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু সেবা দিতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়তি হামলা ও হুমকির শিকার হতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা চাই, শয্যার বাইরে কোনো রোগী ভর্তি না করুক। হাসপাতালে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করা হলে আমরা আগামী শনিবার থেকে আমরা কর্মবিরতি যাব।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের প্রতিনিধি নাজমুল হুদা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন যে কারণে হচ্ছে, সে স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার আমরাও চাই। তবে সেটি অবশ্যই যৌক্তিক পথে যৌক্তিকভাবে হোক। তবে আন্দোলনের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি আমরা সাপোর্ট করতে পারছি না। সম্প্রতি সময়ে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে। যেখানে গত ৩ আগস্ট শিশু বিভাগে দায়িত্বপালনকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের ওপর মব তৈরির মাধ্যমে হয়রানির ঘটনা ঘটে এবং ওয়ার্ডে ভাঙচুর করা হয়। এরপর ৬ আগস্ট সার্জারি ইউনিট-৩ এ রোগীর ছাড়পত্র দেওয়াকে কেন্দ্র করে তার লোকজন চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফদের সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটায়। ১০ আগস্ট সার্জারি-২ ইউনিটে ভর্তি না হয়েও জোরপূর্বক চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসককে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে। এভাবে ১২ আগস্ট পর্যন্ত হাসপাতালে আটটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটানো হয়। এ অবস্থায় আজকের মানববন্ধনের আমাদের পক্ষ থেকে সাত দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। এ দাবিগুলোর বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না পেলে এবং চিকিৎসক, নার্স ও স্টাফরা হয়রানির শিকার হলে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে যাবে।
মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলোর সঙ্গে এক মতপ্রকাশ করে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. ফয়সাল আহম্মেদ বলেন, হাসপাতাল কখনো আন্দোলনের জায়গা হতে পারে না। আমরা মনে করি এখন যারা আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ করছে, তাদের ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য আছে। তারা আমাদের চিকিৎসকের ওপর হামলা ও হেনস্তা এবং চিকিৎসা সেবা দেওয়ার সময় চিকিৎসককে নানাভাবে হয়রানির চেষ্টা করছে। এ অবস্থাতে আমাদের কর্মস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো আমরা কর্মবিরতিতে যাব।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. শাখাওয়াত হোসেন সৈকত বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা দেওয়া এবং নিয়মিত কাজের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে এবং চিকিৎসকরা সঠিকভাবে দায়িত্বপালনে বাধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ অবস্থায় আমাদের প্রয়োজন নিরাপদ কর্ম পরিবেশ। এ পরিবেশ সৃষ্টি না হলে আমরা আন্দোলনে যাব। রোগীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনায় কর্মবিরতি সাময়িকভাবে স্থগিত করে পুনরায় আগামী ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিচ্ছি।
এদিকে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছেন হাসপাতালের সব নার্স, টেকনোলজিস্টসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। চিকিৎসকদের সঙ্গে তারাও কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন শেষে মিড লেভেল ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টার্ন চিকিৎসক, বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন বরিশাল জেলা শাখার ও তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীরের কাছে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টির দাবি জানিয়ে আলাদা স্মারকলিপি দেন।
এ ব্যাপারে হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মশিউল মুনীর বলেন, হাসপাতালে কোনো ধরনের আন্দোলন কারো জন্য কাম্য নয়। তাই আমি এ বিষয়ে চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তাদের ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে।
এমএস/এসআই