স্বাস্থ্যখাত সংস্কারের দাবিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের মারধর করে বের করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে আন্দোলনরতরা।
তবে হাসপাতাল কর্মচারীরা জানিয়েছেন, তাদের ওপর দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ছাত্ররা হামলা চালালে তারা তা প্রতিরোধ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, বেলা ১১টার দিকে ঝড়ো বাতাস ও বৃষ্টি শুরু হলে ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়া অনশনরত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন প্রধান ফটকের সামনে চিকিৎসক, নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ও তাদের হয়রানির প্রতিবাদে মানববন্ধন শুরু করেন।
এক পর্যায়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের ধাওয়ায় অনশনরত শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করতেও দেখা গেছে। এর মধ্যে দুইজনকে মারধর করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। পরে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা হাসপাতাল ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী মহিউদ্দিন রনিকে কটূক্তি করে স্লোগান দেন। বিক্ষোভ শেষে হাসপাতালের প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তখন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রধান গেটের সামনে আসেন। পুলিশের অনুরোধে তারা চলে গেলে কর্মচারীরা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। পুলিশ এসে তাদেরও থামিয়ে দেয়। এরপর হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আন্দোলনরত কোনো শিক্ষার্থীকে দেখা যায়নি।
তবে কর্মচারীরা জানিয়েছেন, গত ১৮ দিন যাবত তারা নানাভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, চিকিৎসকদের ওপর শিক্ষার্থী নামধারীরা একাধিকবার হামলা চালিয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপদস্ত করেছে। এ অবস্থায় শের-ই বাংলা মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে, এ অবস্থায় চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হয়েছেন।
কর্মচারীরা আরও জানান, মানববন্ধনে যাওয়ার সময় আন্দোলকারী ছাত্ররা স্টাফদের ওপর হামলা চালানে। এতে এক স্টাফের হাত ভেঙে যাওয়াসহ কয়েকজন আহত হন। পরে স্টাফরা এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
শুক্রবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ধর্মঘটে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
ঘটনাস্থলে থাকা বরিশাল মহানগরের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) বেলাল হোসাইন বলেন, হাসপাতালের নিরাপদ কর্মস্থল ফিরে পাওয়ার দাবিতে চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আন্দোলনে নেমেছিলেন। সেখানে একটি অপ্রীতিকর ঘটনার কারণে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তাই হাসপাতাল ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোনো তৃতীয় পক্ষ যদি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে চায়, তাহলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। অপ্রীতিকর ঘটনায় কোনো আটক বা গ্রেপ্তার নেই।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ কে এম মুশিউল মুনীর বলেন, নিরাপদ কর্মস্থলের দাবিতে ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টরা কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্বান্ত নিয়েছিল। কারণ তারা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবে না। তাদের অনুরোধ করে কর্মবিরতি থেকে ফেরানো হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালের পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আতংক নিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছেন। এমনকি তারা হাসপাতাল থেকে বের হতেও ভয় পাচ্ছেন। দুপুরে তাদের খাবারের ব্যবস্থা হাসপাতালে করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলনের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নাভিদ নাফিস বলেন, তাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। কয়েকজন মিসিং রয়েছেন। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
এর আগে বুধবার রাতে স্বাস্থ্য সংস্কার আন্দোলন থেকে সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীরা নিজেদের সরিয়ে নেন। বিএম কলেজের শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল জেলার সাবেক আহ্বায়ক সাব্বির হোসেন বলেন, স্বাস্থ্যখাত সংস্কার আন্দোলন বা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংস্কারের আন্দোলনে বরাবরের মতোই বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সামনের সারিতে ছিলেন। সবার মতামতের ভিত্তিতে দীর্ঘ ১৭ দিন আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছি। আমাদের সবার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ একটি প্রতিনিধিদল বরিশালের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা এবং অনশনরত শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙাতে পাঠান। তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বরিশালের সুধীজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থী ও সুধীজনদের সঙ্গ ফলপ্রসূ আলোচনার মাধ্যমে মহাপরিচালক শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং শের-ই-বাংলা মেডিক্যালের পরিচালক মহোদয় সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। বাকি দাবিগুলো অতিদ্রুত বাস্তবায়ন করার আশা ব্যক্ত করেছেন। স্বাস্থ্য উপদেষ্টার পাঠানো প্রতিনিধিদল এবং হাসপাতালের পরিচালকের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ৩০ কার্যদিবস সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করলাম।
তবে ওই স্থগিতের বিষয়টি নিয়ে প্রধান সমন্বয়ক মহিউদ্দিন রনি বলেন, যারা আন্দোলন প্রত্যাহার করেছেন তাদেরও আমরা স্বাগত জানাই। তারা আশ্বস্ত হয়েছেন কিন্তু আমরা এখনো আশ্বস্ত হতে পারিনি। আমাদের আন্দোলন চলবে।
এমএস/এমজেএফ