চন্দ্র-সূর্যের উদয় অস্ত, জোয়ার-ভাটা- এরকম হাজারো পরিবর্তন প্রকৃতির নিত্যদিনকার ঘটনা। তারপরেও প্রকৃতির বিচিত্র সব আচরণ সবাইকে কম বেশি দোলা দেয়।
সবকালেই এসব বিষয়ে জানতে কৌতূহলী-অনুসন্ধিৎসু মানুষ নানান চেষ্টা তদ্বির আর অ্যাডভেঞ্চারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। এরই সূত্রে অনেকেই প্রকৃতির নিয়মবদ্ধ নানান ঘটনাকে কেন্দ্র কেরে মেতে ওঠেন উৎসবে। বাংলাদেশে গত ১২ বছর ধরে চলে আসা তেমনি এক উৎসবের নাম সূর্য উৎসব।
প্রতিবছর দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান বিশেষ করে সাগর ঘেঁষা বা সাগরের মাঝের কোনও দ্বীপ বা চরে এ উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।
এর উদ্যোক্তা, প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের নানা রহস্য জানতে ও জানাতে আগ্রহীদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন। এ সংগঠন তাদের নানা কর্মসূচির মাধ্যমে প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের চমকপ্রদ সব বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছে।
ইংরেজী নববর্ষের প্রারম্ভে ‘সূর্যোৎসব’ তেমনি একটি কর্মসূচি। ‘থার্টি ফার্স্ট নাইটে’ চর্চিত বিদেশি সংস্কৃতি বর্জন করে দেশিয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ধারণ করে প্রকৃতির সান্নিধ্যে বর্ষবরণই সূর্যোৎসবের শুরুর দিকের লক্ষ্য ছিল। তবে ক্রমশ তা আরো সম্প্রসারিত হয়। শহুরে জীবন-ব্যবস্থা থেকে দূরে অভিনব এ উৎসব উদযাপনের সঙ্গে সঙ্গে অজপাড়া গাঁ’য়ের অনগ্রসর শিশু-কিশোরদের বিজ্ঞান ও প্রকৃতির নানা রহস্যময়তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়াও এর অন্যতম উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০০০ সালে প্রথম শুরু হয় ব্যতিক্রমী এ সূর্যোৎসব। যথারীতি এবারও পুরোদমে চলছে সূর্যোৎসব যাত্রার প্রস্তুতি। এবার এ উৎসব পা রাখবে ১২তম বছরে।
অনেক ক্ষেত্রেই প্রকৃতি দর্শন তথা অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থানগুলো ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ। অ্যাডভেঞ্চারের জন্য যারা সব ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা হাসিমুখে মেনে নেন, কেবল তারাই সূর্যোৎসব যাত্রায় সঙ্গী হতে পারেন। এমন বাস্তবতার কথা জানিয়ে সূর্যোৎসব আয়োজনের নানা কথা জানালেন বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য জিকরুল আহসান।
তিনি জানালেন, চলতি সহস্রাব্দের সূচনা ২০০০ সালে নাকি ২০০১-এ, এই বিভ্রান্তি দূর করতেই মূলতঃ সূর্যোৎসব আয়োজনের সূত্রপাত। এর সাথে তৃণমূল জনগোষ্ঠীর মাঝে বিজ্ঞানকে জানার স্বপ্ন-বীজ রোপণ করা অর্থাৎ বিজ্ঞান বিষয়ে সচেতন করে তোলা, দেশীয় সংস্কৃতিকে ধারণ করার মানসিকতা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। এছাড়া গ্রামের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান মনস্ক এবং তাদের মাঝে উদ্ভাবনী মনোভাবের উন্মেষ ঘটানোও এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল।
জিকরুল আহসান বলেন, ‘আমরা মনে করি বিজ্ঞান কোনও ধর্ম-বর্ণের নয়, বিজ্ঞান সকলের। ’
তিনি জানালেন, উৎসবের জন্য দেশের বৈচিত্র্যময় নয়নাভিরাম স্থানসমূহকেই বেছে নেওয়া হয়। সূর্যোৎসবের প্রথম অনুষ্ঠান হয় সেন্টমার্টিনে। পরবর্তীতে সুন্দরবন, কেওক্রাডং পাহাড়, নিঝুমদ্বীপ, তেঁতুলিয়া, বিরিশিরি, টাঙ্গুয়ার হাওর, রাঙ্গামাটির পাবলাখালি জঙ্গল, খাগড়াছড়ি, সুন্দরবন ও শেরপুরে হয় সূর্যোৎসব। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের সুর্যোৎসব হবে ভোলার নৈসর্গিক চর কুকরি-মুকরিতে।
এ বছরের সূর্যোৎসব উদযাপন কমিটির চেয়ারম্যান আবু জাফর স্বপন বাংলানিউজকে জানান, ‘তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে বছরের প্রথম সূর্য দেখা ও বর্ষবরণ করতে প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা সূর্যোৎসবের আয়োজন করেছি। উৎসবের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রকৃতি প্রেমিক যে কেউ আমাদের সঙ্গী হতে পারেন। ’
দেশীয় সংস্কৃতির নানা বিষয় তুলে ধরা হয় সূর্যোৎসবে। এসবের মধ্যে হাজার বছরের পুরনো ঐতিহ্য জলে প্রদীপ ভাসিয়ে দেয়া, ফানুস ওড়ানো, শিশুদের আকাশ দেখানো, দেশীয় ফল খাওয়া ইত্যাদি। এছাড়া এ উৎসবের অন্যতম অংশ হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠী, বিশেষত স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে তাদের ভেতর উদ্ভাবনী আগ্রহ জাগ্রত করে দেয়া।
২৯ ডিসেম্বর এ বছরের সূর্যোৎসব যাত্রা শুরু হবে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে। বাংলাদেশ অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনে আয়োজিত সূর্যোৎসবের এ অ্যাডভেঞ্চারে যে কেউ সঙ্গী হতে পারেন। এজন্য জনপ্রতি সাকুল্যে খরচ ধরা হয়েছে ৭ হাজার টাকা। উৎসব শেষে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন ২ জানুয়ারি।
বিস্তারিত জানতে আগ্রহীরা নিচের সেলফোন নাম্বার দু’টিতে যোগাযোগ করতে পারেন:
০১৫৫২৪৮৪২০১, ০১৫৫২৩৮১৯৯২
বাংলাদেশ সময় : ১৭২৭ ঘণ্টা, ০৭ ডিসেম্বর, ২০১১