ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

ফিচার

কাপ্তাই হ্রদের বুকে মায়াবী এক দ্বীপ

অপু দত্ত, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১৭, জুলাই ১৬, ২০২৫
কাপ্তাই হ্রদের বুকে মায়াবী এক দ্বীপ কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে সবুজে ঘেরা এক দ্বীপ।

রাঙামাটির ফিশারি ঘাট থেকে ইঞ্জিন নৌকা করে আমাদের যাত্রা শুরু। কাপ্তাই হ্রদের বুক ছিঁড়ে ছোট ইঞ্জিন নৌকার শব্দের সাথে পানির ছলছল শব্দ এক অদ্ভূত অনুভূতি সৃষ্টি করলো।

১০/১৫ মিনিট কাপ্তাই হ্রদে ভাসতে ভাসতে সন্ধ্যানামা বিকেলে পৌঁছে গেলাম মায়াবী দ্বীপে।

কাপ্তাই হ্রদের মাঝখানে সবুজে ঘেরা এক দ্বীপ। দ্বীপে পৌঁছাতে পৌঁছাতে দূরের ফুরোমন পাহাড়ের পেছনে সূর্যের অস্ত যাওয়ার প্রস্তুতি। ততক্ষণে দ্বীপ ঘিরে পাখির কিচিরমিচির শব্দ কানে বাজতে শুরু করেছে। ততক্ষণে চোখে ধরা দিল প্রকৃতির খেলা। হ্রদজুড়ে কোথাও রোদ, কোথাও ছায়া, কোথাও মেঘ আবার কোথাও বৃষ্টি। কাঁধের ব্যাগটা রেখে ভিজবো বলে প্রস্তুতি নিলাম। তবে মায়াবী দ্বীপ পর্যন্ত আর বৃষ্টি এলো না।

মায়াবী দ্বীপে ভ্রমণপিপাসুদের আড্ডা।

স্নিগ্ধ গৌধুলী আলো গায়ে মাখতে মাখতে জুমঘরের বারান্দায় আমাদের আড্ডা জমলো। যতদূর চোখ যায় হ্রদের বিশালতা চোখে পড়ে। মনে হয় দূরের পাহাড় হ্রদকে ঘিরে রেখেছে। দ্বীপের মাঝখানে সবুজ ঘাসের কার্পেট বিছানো মাঠ। বিশাল কয়েকটি গাছ ছায়া বিলাচ্ছে। আর চারপাশে ঘুম অপ্সরি, জুমঘর নামের কয়েকটি কটেজ।

দ্বীপের বেঞ্চে বসে জীবনের যাবতীয় হিসাব-নিকাশ এক পাশে রেখে বিশাল হ্রদের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে ভাবায় যায় এইতো জীবন। হ্রদের হিমেল হাওয়া গায়ে মাখতে মাখতে দুলতে পারেন দোলনায়। ডানাওয়ালা দ্বীপে প্রাকৃতিক সুইমিংপুলে যেন ষোলকলা পূর্ণ। পাখির চোখে দেখলে মনে হবে দ্বীপটির আকৃতি প্রজাপতির মতো। মূল দ্বীপ থেকে দুই দিকে সরু দুটি ছোট দ্বীপ রয়েছে।

দ্বীপের একাংশ।

কর্মময় যান্ত্রিক জীবনে হঠাৎ নীরব নিরিবিলি পরিবেশ যদি হাজির হয় তাহলে! সন্ধ্যার পর এক নিস্তব্ধতা তৈরি হয় দ্বীপে। হ্রদের পাড়ে বসে ঢেউয়ের শব্দ, হিমেল বাতাস আপনার জীবনের যাবতীয় হিসেব নিকেশ ভুলিয়ে দিতে পারে। দূরের ছোট বড় দ্বীপগুলোতে জ্বলতে থাকা আলো দেখতে দেখতে সময় যে ফুরিয়ে যাচ্ছে তা টের পাওয়া কঠিন।

রাতের খাবার সেরে জুমের বারান্দায় শুয়ে শুয়ে অর্ধেক রাত কাটিয়ে দিলাম। সূর্যোদয় দেখবো বলে রুম ছেড়ে বেরিয়ে দেখি। দূরের পাহাড়ে রক্তিম সূর্য উকিঁ দিচ্ছে। লালচে আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে, হ্রদের পানিতেও! শান্ত শীতল হ্রদের বুকে এমন দৃশ্য মনে থাকবে বহুদিন।

মনে হলো কয়েক ঘণ্টা আগেই দ্বীপে এলাম। অথচ দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল। সময়টা যদি কচ্ছপ গতিতে শেষ হলে ভালো হতো। দ্বীপে বৃষ্টিতে ভেজার অপূর্ণতা থেকে গেল।

সকালের নাম্তা সেরে বের হয়ে দেখি আমার মতো দ্বীপে নতুন আগন্তুকের আগমন। উচ্ছ্বল তরুণ-তরুণীর দল ছুটে বেড়াচ্ছে দ্বীপে। ঠিক আমার মতো করে তারা দ্বীপটি দেখছে, একে অপরকে সৌন্দর্য্যের বর্ণনা দিচ্ছে।

দ্বীপের মাঝে আড্ডা।

ভাবছি, শেষ না হওয়া সৌন্দর্য নিয়ে মায়াবী দ্বীপের জন্ম। আজ আমাকে কাল আপনাকে মুগ্ধ করতে হ্রদের বুকে স্থির হয়ে আছে দ্বীপটি। ততক্ষণে ইঞ্জিন নৌকায় ফিরতি পথে। ইঞ্জিন আর পানির একই শব্দ। চোখের সামনে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে এলো দ্বীপটি।

চারপাশ মিলে ধরা দিল নাগরিক জীবন। পেছনে ফেলে আসা অনুভূতি নিয়ে ব্যস্ত জীবনে মিশে গেলাম। বুকে আঁকা হলো মায়াবী দ্বীপের মায়াবী এক স্মৃতি....।

মায়াবী দ্বীপে যেতে চাইলে যোগাযোগ করুন- 01871-544422

এডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।