ঢাকা, রবিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

ফিচার

বসন্তকালেই প্রজন্ম উৎপন্ন করে ‘দাগি বসন্ত’ 

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৫২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৯, ২০২৫
বসন্তকালেই প্রজন্ম উৎপন্ন করে ‘দাগি বসন্ত’  পাতার নিচ থেকে পোকা ধরে খাচ্ছে ‘দাগি বসন্ত’। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: বসন্তকাল প্রকৃতি রাজ্যে নবযৌবন নিয়ে আসে। সংস্কৃতিপ্রিয় মানুষেরা ‘বসন্ত উৎসব’ নামে একে ঘটা করে পালন করলেও প্রাণী বা পাখিরাজ্যে কিন্তু তার আয়োজন ঘটে একান্তই নিভৃতে।

প্রচণ্ড ডাকাডাকির পর্ব শেষ হতে না হতে ততক্ষণে গলা ভেঙে আসে পুরুষপাখিটির! কিন্তু তবু তার বিরতি নেই! ডাক আর ডাক: ‘পুকুক-পুকুক-পুকুক’। নারীপাখিটিকে আকৃষ্ট করতে তার যত রকম শক্তি আছে তা তার সুমিষ্ট ডাকের ভেতর দিয়ে প্রকাশিত করতে হয় তাকে।

ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে তার সেই বিরামহীন ডাকে একসময় মুগ্ধ হয় নারীপাখিটি। এগিয়ে আসে তার কাছে! নয়তো, ভাগ্য ‘দুর্ভাগা’ হলে তাকে এবং তার ডাক-কে প্রত্যাখান করে নারীপাখিটি চলে যায় ওই দূর আকাশের দিকে। ব্যথিত হৃদয়ে পুরুষপাখিটি আবার হৃদয়ের গান বাতাসে ছড়ায় নতুন কোনো নারী-পাখির উদ্দেশে।

পাখিরাজ্যের প্রায় সব পাখিদেরই এই একই অবস্থা! অর্থাৎ নারীপাখিদের মন গলাতে পুরুষপাখিদের ক্রমাগত ডাকতেই হয়! নয়তো সেই কাঙ্ক্ষিত মিলন অভিসার সুসম্পন্ন হয় না।

পুরুষপাখির ভাগ্য যখন সুপ্রসন্ন হয় তখনই পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষার দাবি তাদের ভেতর চিরন্তন ভালোবাসা নিয়ে আসে। ‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে’ দু’জন দু’জনের কাছে চলে আসতে চায় বারবার। এ ডাল থেকে সে ডাল বা কোনো ছোট-বড় ডালের কোণে কিংবা পাতার আড়ালে পুরুষপাখি এবং নারীপাখি প্রকৃতির আহ্বানে নিজেদের বিলিয়ে দেয়। এ যেন একে অপরের প্রতি নীরব আত্মসমর্পণ।

বসন্তকালে যে পাখিটিকে বা যে পাখিটির ডাক প্রায়শই আমাদের প্রকৃতিতে শোনা যায় তার নাম ‘দাগি বসন্ত’। অবশ্য তার অপর একটি বাংলা নাম হলো, ‘ডোরা বসন্তবৈরী’। গলাজুড়ে বেশ দাগ রয়েছে বলেই এর ‘দাগি বসন্ত’ নামকরণ। এর ইংরেজি নাম Lineated Barbet এবং বৈজ্ঞানিক নাম Megalaima lineata

‘দাগি বসন্ত’ পাখির দেহের বেশিরভাগ অংশই সবুজ। ডানা, পেট ও লেজ সবুজ রঙে রাঙ্গা। তবে মাথা ও ঘাড়ে রয়েছে হালকা খয়েরি রং। পিঠ ও বুকে সরু সাদা দাগ। ঠোঁট হালকা হলুদ বর্ণের। পাখিটিকে চেনার সহজ উপায় হলো, এর চোখের চারপাশে রয়েছে হালকা হলুদ পালকহীন চামড়া বৃত্ত।

পাতার নিচ থেকে পোকা ধরে ধরে খেতে ওরা খুব বেশি অভিজ্ঞ। গাছের যেখানটায় ঘন ডালপালার আবরণ যেখানেই হঠাৎ উড়ে এসে মাথা গুঁজে দিয়ে পোকার সন্ধানে এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে। হঠাৎ ঠোঁটের আগায় ভরে উঠতে দেখা যায় তার ব্রেকফাস্টের দু’-চারটি পর্ব!
   
বন অধিদপ্তরের বাংলাদেশ ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টারের দায়িত্বরত পাখি বিশেষজ্ঞ শিবলী সাদিক বাংলানিউজকে বলেন, ‘লিনিয়েড বারবেট’ পাখিগুলো বেশ সুন্দর। ওরা সারাদেশেই রয়েছে। শহর থেকে বনে ওদের উপস্থিতি মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে। তবে বসন্তকালেই কেবল তাদের ডাক বেশি শোনা যায়। তখন তাদের প্রজনন মৌসুম। পরবর্তী প্রজন্ম রক্ষার জন্য নারীপাখিটিকে আকৃষ্ট করতে পুরুষপাখিটি ক্রমাগত ডাকতে থাকে।  

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রজনন মৌসুমে ছানা উৎপন্ন করে পুরুষপাখি এবং নারীপাখি দু’জনেই পুরো বছরজুড়ে কিন্তু একত্রে বসবাস করে না। আলাদা হয়ে যায়। এটাই তাদের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। আবার প্রজনন মৌসুম এলে তারা নতুনভাবে একই প্রজাতির নতুন পাখির সাথে ঝুঁটি বাঁধে। তাদের প্রজন্ম রক্ষার উদ্দেশে। এটা শুধু লিনিয়েড বারবেটের ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য নয়। বেশির ভাগ প্রজাতির পাখিরাই এমন।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৯, ২০২৫
বিবিবি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।