ঢাকা, বুধবার, ৩০ আশ্বিন ১৪৩২, ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ২২ রবিউস সানি ১৪৪৭

নির্বাচন ও ইসি

ইভিএম নিয়ে ধোঁয়াশায় ভোটাররা

শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২:২৭, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
ইভিএম নিয়ে ধোঁয়াশায় ভোটাররা ইভিএম

ঢাকা: আর মাত্র ৯ দিন বাদেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সারাদেশে এ মুহূর্তে ভোটের হাওয়া বইছে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যেই পুরদমে চলছে নির্বাচনী প্রচারণা। কোন দলের প্রার্থীই থেমে নেই। শেষ মুহূর্তে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিভিন্ন দিক দিয়ে অন্যান্য নির্বাচনের চাইতে ভিন্ন। এবারই প্রথম দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশ গ্রহণে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

আবার এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার হতে যাচ্ছে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সীমিত পরিসরে ইভিএম ব্যবহার করে ভোট নেয়া হয়েছিল। শুরুতে বেশ কয়েকটি আসনে ইভিএম ব্যবহারের কথা থাকলেও সমালোচনার মুখে শেষ পর্যন্ত ৬টি আসনে পূর্ণরূপে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
 
একাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৬ ও ১৩ আসনে ইভিএম এর মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম-৯, রংপুর-৩, খুলনা-২ ও সাতক্ষীরা-২ আসনে ইভিএম ব্যবহার করা হবে। যে যন্ত্রের মাধ্যমে ভোট নেওয়া হবে সেই যন্ত্র সম্পর্কে এখনো পুরোপুরি ধাতস্ত নন ভোটররা।
 
ঢাকা মহানগরের সংসদীয় আসন-১৩ এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে অন্তত নিশ্চিত হওয়া গেছে তারা ইভিএম সম্পর্কে অবগত নন। এ আসনে ৩ লাখ ৭২ হাজার ৭৬৯টি ভোট রয়েছে। আদাবর-শেরে-বাংলা-নগর ও মোহাম্মদপুর থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৩ আসন। এ আসনের ভোটারদের অর্ধেকই শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের লোক।
 
মোহাম্মদপুরের আদাবর, শেখেরটেক, বেড়িবাঁধ এলাকা এবং আগারগাঁও এলাকায় বেশ কয়েকটি বস্তির বাসিন্দা এ আসনের ভোটার। এদের বেশির ভাগই অক্ষরজ্ঞানহীন।
 
আদাবর, শেখেরটেক, জহুরী মহল্লার অন্তত ১০জন ভোটারের কাছে ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা এবিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান। জহুরী মহল্লার ভোটার নজরুল ইসলামের কাছে ইভিএম সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, ‘শুনেছি এখানে মেশিনে ভোট হবে। আগে তো সিল মারতাম এবার নাকি সিল হবে না, টিপ হবে। এখন কোনো মার্কায় টিপ মারবো আর কোনটায় যাবে কে জানে।
 
তারমতই আরেক ভোটার আজিবর মন্ডল বাংলানিউজকে বলেন, আমি এলাকায় আছি ছোটা থেকে এ নিয়ে ৫ বার ভোট দিতে যাবো। আগের সব ভোটেই সিল মারছি এবার শুনছি টিপ মারতে হবে। কেমন করে মারব সেটা তো জানি না। শুনছি কয়েক ধাপ পার করে নাকি মেশিনে টিপ দিতে হবে কেমনো ভোট দেব হেইডাই বুঝতে পারছি না।

প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে পৃথক লিফলেট বিতরণ করে বোঝানোর চেস্টা করছেন। তবে সেই প্রক্রিয়া কতটুক কাজে আসবে তা বুঝতে অপেক্ষা করতে হবে ভোটের দিন পর্যন্ত। এছাড়া নির্বাচন কমিশন থেকেও ক্যাম্পেইন করে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

এবিষয়ে ঢাকা-১৩ আসনে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী বিএনপি নেতা আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় অনেক ভোটারই খেটে খাওয়া মানুষ। তাদের বেশির ভাগই ইভিএম সম্পর্কে ওয়াকিবহাল না। ইভিএম সম্পর্কে ভোটারদের ব্যবহারী ধারণা নেই, অনেকের অস্পষ্ট ধারণা রয়েছে। আমরা ভোটারদের মধ্যে লিফলেট দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছি এমনকি নির্বাচন কমিশনও ভোটারদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করছে। আমার ভরসা মানুষ ভোট কেন্দ্রে আসতে পারলে বিজয়ী হবো।
 
অপর প্রার্থী আওয়ামী লীগের সাদেক খানের মোবাইলে ফোন করা হলে রিসিভ করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের প্রচার সম্পাদক আজিজুল হক রানা তার পক্ষে কথা বলেন। তিনি বলেন, ভোটারদের মধ্যে তেমন সংশয় নেই। নির্বাচন কমিশন থেকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে তিন দিন করে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছে, আমরাও ভোটারদের বোঝাচ্ছি সেখানে যেতে উদ্ভুদ্ধ করছি, কাজেই ইভিএম নিয়ে কোন সমস্যা হবে না।
 
মোহাম্মদপুর থানা নির্বাচন  কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রত্যেকটি কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের প্রশিক্ষণ দেব। ১৮ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া প্রশিক্ষণ চলবে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ঢাকা-১৩ আসনের ১৩৪টি কেন্দ্রেই ভোটারদের মাঝে এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
 
প্রশিক্ষণ নিতে ভোটারদের মধ্যে সাড়া কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম দিকে কম হলেও এখন আস্তে আস্তে ভালো সাড়া পাচ্ছি। আমাদের লোকজন বুঝিয়ে দিচ্ছে ইভিএম এ কিভাবে ভোট দেবেন। আমি মনে করি ভোটররা কেন্দ্রে এলে বুঝতে পারবে কিভাবে ভোট দিতে পারবে, এতে কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
 
ইভিএম সম্পর্কে মোহাম্মদপুর যুবলীগের সভাপতি এম এ লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, এবার অনেক ভোটারই ভোট দিতে চাইবে না এ যন্ত্রের কারণে। এখানে অনেকেই জানেন না কিভাবে ভোট দিতে হবে। যদিও প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে কিন্তু তাতে কতটুক কাজে আসবে সেটা বলা মুশকিল। আমার মনে হয় ইভিএম এ ভোট দিতে সময় বেশি লাগবে।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৮
এসএম/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।