ঢাকা, সোমবার, ১০ আষাঢ় ১৪৩২, ২৩ জুন ২০২৫, ২৬ জিলহজ ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

শেষ দিনে নিবন্ধন পেতে হিড়িক, দেড়শ নতুন দলের আবেদন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৭, জুন ২২, ২০২৫
শেষ দিনে নিবন্ধন পেতে হিড়িক, দেড়শ নতুন দলের আবেদন নির্বাচন কমিশনে দলের নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম

নিবন্ধন পেতে এবার দেড়শ নতুন রাজনৈতিক দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে। আবেদন করা দলগুলোর মধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিও রয়েছে।

রোববার (২২ জনু) সকাল থেকেই আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে দলগুলোর নেতাকর্মীদের আনাগোনা দেখা যায়। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ভিড়। দিনভর মিছিল, স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পশ্চিম আগারগাঁও এলাকা।

গত ১০ মার্চ নিজ প্রতীকে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে আবেদন আহ্বান করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়। তবে এনসিপিসহ বেশ কিছু দল সময় বাড়ানোর আবেদন করলে ২২ জুন পর্যন্ত সময় বাড়ায় নির্বাচন আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠানটি।

ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে একশটির মতো দল নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছিল। তার মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি আর বিএনএম কেবল নিবন্ধন পেয়েছিল। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আদালতের আদেশ আরও কয়েকটি দল নিবন্ধন পায়।

গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করে। তবে সময় বাড়ানোর পর সবমিলিয়ে এবার আবেদন পড়ল ১৫০টির মতো। এই সংখ্যা কিছুটা এদিক সেদিক হতে পারে।

আইন অনুযায়ী, নিবন্ধন পেতে ইচ্ছুক দলের একটি কেন্দ্রীয় কমিটি, এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়াও কোনো দলের কেউ পূর্বে সংসদ সদস্য থাকলে বা পূর্বের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়।

নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর কমিশন প্রথমে এগুলো প্রাথমিক বাছাই করে। এরপর দলগুলোর তথ্য সরেজমিন তদন্ত শেষে বাছাই সম্পন্ন করে দাবি আপত্তি চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয়। সেখানে কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ দেয় ইসি। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দিতে পারে না।

বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫০টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি (বিএমজেপি), এবি পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ (জিওপি), নাগরিক ঐক্য এবং গণসংহতি আন্দোলনকে নিবন্ধন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এগুলোর প্রায় প্রতিটিই আবেদনের পাঁচ থেকে ছয় বছর পর আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছে। এর আগে ২০১৮ সালেও শর্ত পূরণ না করার কারণ দেখিয়ে ৭৬টি দলের কোনোটিকেই নিবন্ধন দেয়নি ইসি। পরে ২০১৯ সালে ববি হাজ্জাজের দল এনডিএম আদালতের আদেশে নিবন্ধন পেয়েছিল।

নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৫টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরবর্তীতে শর্ত পূরণ, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের নিবন্ধন বাতিল করে ইসি। দলগুলো হলো— জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা। সম্প্রতি নতুন দলগুলোকে নিবন্ধন দিতে আবেদন আহ্বান করেছে ইসি। সস্প্রতি আদালতের আদেশে জামায়াতে ইসলামী ও জাগপা নিবন্ধন ফিরে পেলেও ইসি এখনো প্রজ্ঞাপন জারি করেনি।

এবার আলোচনায় থাকা দলগুলো যা বলছে:
এনসিপি সব শর্ত পূরণ করে আবেদন জমা দেওয়ায় নিবন্ধন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, আজকে ইসিতে নিবন্ধনের জন্য সব শর্ত পূরণ করে কাগজপত্র দাখিল করেছি। গঠনতন্ত্রসহ আমরা আবেদন জমা দিয়েছি। আমরা তিনটি মার্কার জন্য আবেদন করেছি শাপলা, কলম ও মোবাইল। আমরা আশাবাদী শাপলা মার্কা পাব এবং তা নিয়ে জনগণের মাঝে কাজ করব।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের যে আইন, সে আইনগুলো আমরা পর্যালোচনা করেছি। আইনে কোনো ধরনের সমস্যা নেই আমরা দেখেছি। জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি দলের মার্কা হিসেবে আছে। সেক্ষেত্রে কোনো সমস্যা দেখিনি বলে আমরা এ প্রতীকে আবেদন করেছি। জাতীয় প্রতীক কিন্তু কেবল শাপলা নয়; শাপলা, ধানের শীষ, তারকা এগুলো মিলে জাতীয় প্রতীক। সেক্ষেত্রে তারকা ও ধানের শীষ দুটি দলের মার্কা হিসেবে রয়েছে। কোনো ধরনের আইনগত সমস্যা আমরা দেখি না।

এদিকে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেছেন, প্রস্তাবিত জাতীয় সংসদের ৪০০ আসনের মধ্যে ৩০০ আসন পেয়ে এনসিপি জাতীয় সরকার গঠন করবে। জনগণের ম্যান্ডেন্ট নিয়ে ব্যালট বিপ্লব সম্পন্ন করবে তার দল।

তিনি আরও দাবি করেন, জনগণের দাবি হিসেবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনও (ইসি) পুনর্গঠন হবে। কোনো বিকল্প ‘বি’ অপশন নেই।

ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের গড়া দল আম জনগণ পার্টি আনারস, কলম বা ঘণ্টা প্রতীক চেয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। আবেদন জমা দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটিসহ যেভাবে ইসি চেয়েছে, সেভাবেই আমরা সব কাজগপত্র জমা দিয়েছি। আগামী দিনে আমরা ওয়ার্ড পর্যায়ে কমিটি এবং রাজনীতি চালু করতে পারব বলে আশা করি। আমরা বিশ্বাস করি বহুদলীয় গণতন্ত্র। আমরা আনারস, কলম বা ঘণ্টা প্রতীক চেয়েছি।

হাতি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে জনতা পার্টি বাংলাদেশ (জেপিবি)। দলটির মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছি। নিবন্ধন বিধিমালার যে শর্ত আছে, সেগুলো পালন করা খুব কষ্টকর। নির্বাচন সংস্কার কমিশনের এ বিধিমালার কিছু কিছু বিধিমালা সংস্কারের প্রস্তাব রেখেছে। এ প্রস্তাবগুলো কিন্তু এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। তারপরও পুরনো বিধিমালা অনুযায়ী আমরা আবেদন জমা দিয়েছি এবং আমরা আশা করি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পাব।

এ ছাড়া চাবি প্রতীকে নিবন্ধন পেতে আবেদন করেছে জনতার দল। আহ্বায়ক ব্রি. জে. (অব.) শামীম কামাল সাংবাদিকদের বলেন, নিবন্ধনের সব শর্ত পূরণ করে আমরা আবেদন করেছি। আমাদের জেলা ও উপজেলা কমিটি আইন অনুযায়ী গঠন করা হয়েছে। এখন বাকি সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন।

তিনি বলেন, আমরা দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তনের জন্য সাহসী, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক মানুষদের সংগঠিত করার চেষ্টা করছি। আমাদের উদ্দেশ্য পরবর্তী প্রজন্ম, সামনে নির্বাচন যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে পরবর্তী প্রজন্ম। গত ৫৪ বছরে দেশের রাজনীতিতে সুষ্ঠু ধারা তৈরি হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এই জায়গাতে আমরা মনে করি যদি সৎ, শিক্ষিত, ভালো মানুষ একত্র হই তাহলে সুষ্ঠু ধারা তৈরি করতে পারব।

ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।