ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩২, ১৪ অক্টোবর ২০২৫, ২১ রবিউস সানি ১৪৪৭

শিক্ষা

বেরোবিতে ৩ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ১৫

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:১৪, অক্টোবর ১৪, ২০২৫
বেরোবিতে ৩ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, আহত ১৫ বেরোবিতে ৩ বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ত্রিমুখী সংঘর্ষ

রংপুর: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ফুটবল খেলাকে কেন্দ্র করে তিনটি বিভাগের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর।

সোমবার (১৩ অক্টোবর) রাত আটটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে মার্কেটিং, পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ সংঘর্ষে জড়ান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সম্প্রতি শেষ হওয়া জেন-জি আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্টের একটি ম্যাচে মার্কেটিং ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। তার রেশ ধরে সোমবার পরিসংখ্যান বিভাগের কতিপয় শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটবর্তী চকবাজার এলাকায় মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থীকে মারধর করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মার্কেটিংয়ের শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনা জানাজানি হলে পরিসংখ্যান বিভাগের অন্যান্য শিক্ষার্থীরা মার্কেটিং বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে শহীদ আবু সাঈদ চত্বরে আসেন। তখন বিভাগ দুটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করেন। এতে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী প্রান্ত ঘোষ মাথায় গুরুতর জখম হন। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, এ ঘটনার পরপর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে। মার্কেটিং বিভাগের সঙ্গে পরিসংখ্যান বিভাগের দফায় দফায় সংঘর্ষের ফলে সমগ্র প্রধান ফটক এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ভাঙচুর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান ফটকের ভেতরের পাশে রাখা ছবির ফ্রেমও।

এরপর বিভাগ দুটির উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময়, স্বাধীনতা স্মারক মাঠে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ইউসুফ আলী নামের এক শিক্ষার্থী আতঙ্কে সংঘর্ষস্থল থেকে পালাতে গেলে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা অকস্মাৎ তার ওপর চড়াও হয়। লাঠিসোঁটা দিয়ে পিটানো হয় তাকে। এ খবর পেয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরাও একত্র হয়ে প্রধান ফটক দিয়ে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীদের ধাওয়া দিলে তারা পিছু হটে একাডেমিক ভবন ৩ এর দিকে অবস্থান নেন।

পরে পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের কয়েক শতাধিক শিক্ষার্থী একযোগে ধাওয়া দিলে মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা প্রাণভয়ে একাডেমিক ভবন ৩ এর ভেতরে গিয়ে বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ও টয়লেটে অবস্থান নেন। ভবনটির গেটে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা।

সে সময়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক ও রেজিস্ট্রার ড. মো. হারুন-অর-রশিদসহ প্রক্টরিয়াল বডি এবং ছাত্রনেতারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তেজনা প্রশমনের চেষ্টা করেন।  

কিন্তু সে দিকে কান না দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান ও পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী সম্মিলিতভাবে ভবনটির তালা খুলে নিচতলায় থাকা সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালা ভাঙচুর করেন। এ সময়, মার্কেটিং বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নিলয় নামে এক শিক্ষার্থী চোখে মারাত্মকভাবে জখম হন। তিনি এখনও ভবনটিতে আটকা রয়েছেন।

পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তবে পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে তারা তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলীও ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ব্যর্থ হন।  

মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার পর্যন্ত পর্যন্ত ভবনটির সামনে পরিসংখ্যান ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা অবস্থান করছিলেন। আর মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ভবন ৩ এর ভেতর অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন।

এ দিকে, উদ্ভূত সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জরুরি মিটিংয়ে বসে প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স রুমে। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

জেএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।