ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ ভাদ্র ১৪৩২, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

শিক্ষা

ডাকসু নির্বাচনে স্থগিতাদেশ: ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ছাত্রনেতারা

ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:১১, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৫
ডাকসু নির্বাচনে স্থগিতাদেশ: ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ছাত্রনেতারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্তে ‘ষড়যন্ত্র’ দেখছেন ছাত্র সংগঠনের নেতারা।

তারা বলছেন, সারাদেশে একটি চক্র অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছে।

তার অংশ হিসেবে ডাকসু নির্বাচন পেছানোর সিদ্ধান্ত এসেছে।

‘অবশ্যই’ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রার্থীরা।

সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ডাকসুর নির্বাচনপ্রক্রিয়া ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত করে হাইকোর্ট।

এই সিদ্ধান্ত জানাজানির পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলসহ হলপাড়ার শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে হয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে আসেন।  

এসময় রাজু ভাস্কর্যের দিক থেকে একটি মিছিল এসে তাদের সঙ্গে মিলিত হয় এবং ভিসি চত্বরের দিকে যাত্রা করে। তারা ‘ডাকসু আমার অধিকার, রুখে দেওয়ার সাধ্য কার’ ‘হাইকোর্টের প্রহসন, মানি না, মানব না’-স্লোগান দেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন এবং প্যানেলের প্রার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে জড়ো হন। মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বরে আসেন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের, জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারসহ অন্যান্য প্রার্থীরা।

এরপর সমন্বিত শিক্ষার্থী সংসদের ভিপি প্রার্থী জামালুদ্দিন মোহাম্মদ খালিদ, এজিএস প্রার্থী ফাতেমা শারমিন অ্যানিসহ প্যানেলের একাধিক সদস্য মিছিল নিয়ে অন্যদের সঙ্গে ভিসি চত্বরে যোগ দেন।

এরপর মিছিল বের করে ছাত্রদল। ছাত্রদলের মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি গণেশচন্দ্র রায় সাহস, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন শাওন, ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান, জিএস প্রার্থী তানভীর বারী হামিম এবং এজিএস প্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে অপরাজেয় বাংলার সামনে সমাবেশ করে দলটি।

নির্বাচন স্থগিতের প্রতিক্রিয়ায় মধুর ক্যান্টিনের সামনে তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করে ছাত্রশিবির। পরে ডাকসু পেছানোর প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান দেয় দলটির নেতাকর্মীরা। এসময় ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম, জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিকেলে হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ পুনরায় স্থগিত করে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত। এই সিদ্ধান্তের পর ডাকসু নির্বাচন হতে আর বাধা নেই বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী শিশির মনির।

এই সিদ্ধান্ত জানার পর ভিসি চত্বর ছেড়ে হলে ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এসব ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিকেল সোয়া পাঁচটায় ডাকসু ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেল। এসময় একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন বন্ধের পায়তারা করছে বলে জানান এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের।

তিনি বলেন, একটি কুচক্রি মহলের ষড়যন্ত্রে এতদিন নির্বাচন হয়নি। এবার ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করার মধ্যে দিয়ে নির্বাচন বন্ধের পায়তারা স্পষ্ট হয়েছে।

কাদের আরও বলেন, ডাকসুর সিদ্ধান্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটি থেকে হবে। হাইকোর্ট থেকে নয়। নির্দিষ্ট সময়ে হতে হবে। কেউ যদি ষড়যন্ত্র করতে চায়, আমরা ডাকসু আদায় করে নেব।

নব্য ফ্যাসিস্ট একটি দল এই ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সমন্বিত শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাদিক কায়েম।

তিনি বলেন, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে একের পর এক ষড়যন্ত্র দেখতে পাচ্ছি। হাসিনার এবং তার সহযোগীরা সামনে এবং পেছন থেকে ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সঙ্গে নব্য ফ্যাসিস্ট হওয়ার পথে যাওয়া একটি দল যোগ হয়েছে।

অন্যদিকে একই প্যানেলের জিএস প্রার্থী এস এম ফরহাদ এই সিদ্ধান্তকে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পাসকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, একটি চক্র অনেক ক্যাম্পাসে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করেছে। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। যারা ডাকসু বানচালের চেষ্টা করেছে, তাদেরকে শিক্ষার্থীরা ৯ সেপ্টেম্বর লাল কার্ড দেখাবে।

নির্বাচন নিয়ে তালবাহানা চলবে না: ছাত্রদল

তাৎক্ষণিক মিছিলের পর সমাবেশে নির্বাচন পেছানো নিয়ে শক্ত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ছাত্রদল। একইসঙ্গে এই পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সমালোচনা করেছে দলটি।

ছাত্রদলের ঢাবি শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একের পর এক ব্যর্থতার কারণে হাইকোর্ট নির্বাচন স্থগিত করতে পেরেছে। আমরা বারবার ফ্যাসিবাদে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। প্রশাসনের গাফিলতির কারণে আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হলো।

ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্বাচন বন্ধের ফাঁক-ফোকর রেখেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তামাশা করছেন? ডাকসু নির্বাচন সঠিক সময়ে হবে। এটিকে বাধাগ্রস্ত করার সক্ষমতা কারও নেই।

তিনি বলেন, প্রশাসনকে আমরা কিছু বিষয়ে স্পষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ দিয়েছি। তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আপনাদেরকে থামতে হবে।

সন্ধ্যা ৬টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেন স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, ভোটকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র চলছে। এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে একধরনের গণতান্ত্রিক পরিবেশ ছিল।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচন কী প্রক্রিয়ায় হবে, তা অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্ত। এখানে হাইকোর্ট টেনে নিয়ে আসা ডাকসুর সঙ্গে বেইমানি। জাতীয় রাজনীতির হস্তক্ষেপ এখানে কাম্য নয়।

এফএইচ/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।