ঢাকা, সোমবার, ১৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

অর্থনীতি-ব্যবসা

১৭৬ কোটি টাকায় ২৫ হাজার মে.টন চিনি আমদানি করবে সরকার 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:০৬, আগস্ট ৩, ২০২৫
১৭৬ কোটি টাকায় ২৫ হাজার মে.টন চিনি আমদানি করবে সরকার 

স্বল্প আয়ের মানুষদের মধ্যে সাশ্রয়ী দামে বিক্রির জন্য আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ২৫ হাজার মে. টন চিনি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে ব্যয় হবে ১৭৫ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- টিসিবির বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনায় ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে ১ লাখ ৪৪ হাজার মে. টন চিনি ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে ৬০ হাজার মে. টনের ক্রয় চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।  

মোট চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সমগ্র বাংলাদেশে (সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভাসহ) টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী প্রায় এক কোটি নিম্নআয়ের পরিবারের মাঝে প্রতি মাসে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির জন্য টিসিবি কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে ২৫,০০০ মে. টন চিনি কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির অধীন আন্তর্জাতিক ক্রয়ের ক্ষেত্রে পণ্য সরবরাহ, কার্যসম্পাদন বা ভৌত সেবার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশের তারিখ থেকে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের জন্য ন্যূনতম ৪২ দিন সময় ধার্য থাকলেও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি কর্তৃক ৪ জুন ২০২৪ এবং ২৭ মে ২০২৫ তারিখের সভায় ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর জন্য আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বানের ক্ষেত্রে দরপত্র প্রণয়ন ও দাখিলের সময়সীমা ৪২ দিনের পরিবর্তে ১৫ দিন করার সিদ্ধান্ত হয়।  

আন্তর্জাতিকভাবে ২৫ হাজার মে. টন চিনি ক্রয়ের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ অনুসরণ করে গত ২১-০৪-২০২৫ তারিখে উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক আহ্বান করা হয়। দরপত্র বিজ্ঞপ্তি ২টি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ২২-০৪-২০২৫ তারিখে প্রকাশিত হয় এবং টিসিবি ও বিপিপিএ এর ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হয়। এছাড়া এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, সিসিসিআই ও চিনি রপ্তানিকারক দেশসমূহে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন, দূতাবাসের মাধ্যমে দরপত্র বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে, দরপত্র দাখিলের সর্বশেষ তারিখ ০৮-০৫-২০২৫ এবং বৈধতার মেয়াদ ছিল ১৭-০৬-২০২৫ তারিখ পর্যন্ত। পরবর্তীতে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক বৈধতার মেয়াদ ১৫-০৯-২৫ তারিখ পর্যন্ত বাড়ানো হয়।  

দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটি ০৮-০৫-২০২৫ তারিখে পাওয়া দরপত্র উন্মুক্ত করে ইস্তান্বুলভিত্তিক বেগালাতা ড্যানিসম্যানলিক হিজমেটলেরির ১টি দরপত্র পাওয়া যায়। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮ এর বিধি-১৬ (৫ক) অনুযায়ী চিনির দাপ্তরিক মূল্য প্রতি মে. টন লন্ডন উৎসের ৬৫৩.১১৬ মার্কিন ডলার।

দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির পর্যবেক্ষণসমূহ নিম্নরূপ:
ক) রেসপনসিভ দরদাতা কর্তৃক দাখিলকৃত প্রতি মে. টন চিনির দর দাপ্তরিক প্রাক্কলিত দরের চেয়ে (৬৫৩.১১৬-৫৭৭.০০)= ৭৬,১১৬ মার্কিন ডলার কম।

খ) প্রস্তাবিত দরে টিসিবির গুদাম পর্যন্ত প্রতি মে. টনে খরচ প্রায় ১,০৬,৬৬০ (এক লক্ষ ছয় হাজার ছয়শত ষাট) টাকা অর্থাৎ ১০৬.৬৬০ টাকা/কেজি। টিসিবি'র বাজার তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি চিনির গড় খুচরা মূল্য ১১৬.০০ টাকা। প্রস্তাবিত দর বর্তমান স্থানীয় বাজার এর গড় খুচরা মূল্য হতে প্রতি কেজিতে (১১৬.০০-১০৬,৬৬০)=৯.৩৪ টাকা কম।

গ) গত ১৫-০৪-২০২৫ তারিখে উন্মুক্ত দরপত্র (জাতীয়) এর মাধ্যমে প্রতি কেজি ১১০.১০ (একশত দশ দশমিক এক শূন্য) টাকা দরে দরপত্র পাওয়া যায় যা দরপত্র মূল্যায়ণ কমিটি ক্রয়ের সুপারিশ করে। উক্ত ক্রয়মূল্য হতে আলোচ্য প্রস্তাবিত দর প্রতি কেজিতে (১১০,১০-১০৬,৬৬০)=৩.৪৪ টাকা কম।

ঘ) সরকার নির্ধারিত ০১ (এক) কোটি নিম্ন আয়ের পরিবারের প্রয়োজনীয়তা এবং অতিরিক্ত ২০% আপদকালীন মজুদ হিসেবে প্রতি মাসে ১২,০০০ মে. টন চিনির প্রয়োজন। বর্তমান টিসিবি'র গুদামে মোট মজুদ ৮,২৯০ মেঃ টন এবং ২৪,১৬৮ মেঃ টন চিনির চুক্তি রয়েছে।  

অপরদিকে, এক্টিভেটেড কার্ডের সংখ্যা বিবেচনাহেতু গড়ে (জুন-আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত) ৭০ লক্ষ কার্ডধারী হিসেবে প্রয়োজনীয়তা এবং অতিরিক্ত ২০% আপদকালীন মজুদ হিসেবে ২৫,২০০ মেঃ টন চিনির প্রয়োজন। আলোচ্য চিনির প্রস্তাবিত দর, দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য এবং স্থানীয় বাজার মূল্যের চেয়ে কম এবং সংগতিপূর্ণ। এছাড়া বিগত প্রায় ১২ বছরে আন্তর্জাতিকভাবে টিসিবি কর্তৃক চিনি পাওয়া সম্ভব হয়নি। দেশীয় বাজারে চিনির মূল্য স্থিতিশীল এবং সহনীয় পর্যায়ে রাখতে আন্তর্জাতিকভাবে চিনি ক্রয় করা প্রয়োজন। গত ০২ (দুই) বছরে স্থানীয়ভাবে ৩টি প্রতিষ্ঠান সিটি সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেঘনা সুগার রিফাইনারি লিমিটেড ও এস, আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড টিসিবিতে চিনি সরবরাহ করেছে।  

অতএব, টিসিবিতে চিনি সরবরাহে একচেটিয়া আধিপত্য এবং স্থানীয় বাজারে সম্পূর্ণ নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য মজুদ থাকা সত্ত্বেও কমিটি কর্তৃক আলোচ্য চিনি ক্রয়ের সুপারিশ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, আলোচ্য প্রস্তাবের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আগামী সেপ্টেম্বর/অক্টোবর ২০২৫ হতে চিনি সরবরাহ করতে সম্মত হয়েছে।

সূত্র জানায়,সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদনের জন্য কমিটির পরবর্তী সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। কমিটির অনুমোদন দিলে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।