ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টা করতে গিয়ে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে ধরা পড়েছেন বাংলাদেশের সাবেক এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা। তার নাম মো. আরিফুরজ্জমান (৪৮)।
জানা গেছে, তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদের নিহত হওয়ার ঘটনার সময় সেই এলাকায় দায়িত্বে ছিলেন। তিনি আবু সাঈদ হত্যা মামলারও আসামি।
গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন আরিফুরজ্জমান। বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে থাকার পর সম্প্রতি সাতক্ষীরা সীমান্তে কয়েক মাস অবস্থান করেন তিনি। শনিবার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে নিম্নচাপজনিত ঝড়-বৃষ্টির সুযোগ নিয়ে হাকিমপুর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশের চেষ্টা করলে বিএসএফের ১৪৩ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা তাকে আটক করে।
সূত্র জানায়, আটক করার পর বিএসএফ প্রথমে তাকে বাংলাদেশে ‘পুশ-ইন’ চায়। কিন্তু আরিফুরজ্জমান কাকুতি-মিনতি করে বলেন, দেশে পাঠালে তাকে হত্যা করা হবে। পরে রাতেই তাকে বসিরহাট মহকুমার অন্তর্গত স্বরূপনগর থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসময় তার কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করা হয়, যা রোববার (২৪ আগস্ট) সকালে পশ্চিমবঙ্গের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিষয়টি যৌথভাবে পশ্চিমবঙ্গের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদেরও জানিয়েছে বিএসএফ ও স্বরূপনগর থানা পুলিশ।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনা করে কূটনৈতিক স্তরেও যোগাযোগ চলছে। ভারতের তরফে বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনকে জানানো হলেও কলকাতার বাংলাদেশ মিশন তা অস্বীকার করেছে।
রোববার স্থানীয় আদালতে তোলা হলে বিচারক আরিফুরজ্জমানকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তার বিরুদ্ধে ফরেনার্স অ্যাক্টে মামলা (নম্বর ৫৬৬/২০২৫) দায়ের করা হয়েছে। এদিন আদালতে তার পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বিএসএফ তাকে আসলে তিন দিন আগে আটক করে নিজেদের হেফাজতে রেখেছিল এবং শনিবার রাতে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। দীর্ঘ ছয় মাস ধরে তিনি অবৈধভাবে যাতায়াত করছিলেন বলেও জানা গেছে। এমনকি নাজমুল সর্দার নামে জাল নথিও তৈরি করেছিলেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থী আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন। সেদিন দুপুর আড়াইটার দিকে শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হলে ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করা হয়। সবাই সরে গেলেও আবু সাঈদ হাতে লাঠি নিয়ে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। প্রায় ৫০ ফুট দূর থেকে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। টানা কয়েক রাউন্ড গুলিতে শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে তার মৃত্যু হয়।
ভিএস/এমজে