ঢাকা, সোমবার, ৬ আশ্বিন ১৪৩২, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উৎসবমুখর পরিবেশে চেম্বার নির্বাচনের মনোনয়ন জমা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩:০২, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৫
উৎসবমুখর পরিবেশে চেম্বার নির্বাচনের মনোনয়ন জমা ...

চট্টগ্রাম: উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শতবর্ষী বাণিজ্য সংগঠন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনের প্রার্থীরা।  

রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে এ উপলক্ষে সর্বস্তরের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের মিলনমেলা বসেছিল।

চারটি গ্রুপে ২৪ পরিচালক পদে ৭১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আনুষ্ঠানিক প্যানেল ঘোষণা না হলেও ভোটারদের ধারণা কমপক্ষে দুইটি প্যানেল হবে এবারের নির্বাচনে।
তিনটি প্যানেল হলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই।  

গত ১১ আগস্ট চিটাগাং চেম্বারের ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ মেয়াদের পরিচালকমণ্ডলীর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় (বাণিজ্য সংগঠন-১) কর্তৃক গঠিত নির্বাচন বোর্ড। আগামী ১ নভেম্বর বিভিন্ন ক্যাটাগরির ২৪ পরিচালক পদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোটগ্রহণ হবে। এর মধ্যে অর্ডিনারি মেম্বার ক্যাটাগরিতে ১২ জন, অ্যাসোসিয়েট মেম্বার ৬ জন, ট্রেড গ্রুপে ৩ জন এবং টাউন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ৩ জন পরিচালক নির্বাচিত হবে।  যাচাই, বাছাই শেষে চূড়ান্ত হয়েছে ভোটার তালিকাও। ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় প্রকাশিত হয় চেম্বারের সদস্যদের ভোটার তালিকা। এতে সাধারণ সদস্য হিসেবে চার হাজার এক জন, সহযোগী সদস্য হিসেবে দুই হাজার ৭৬৪, টাউন অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হিসেবে ৫ জন এবং ট্রেড গ্রুপের সদস্য হিসেবে ১০ জন তালিকাভুক্ত রয়েছেন।

একটি প্যানেলের প্রধান হিসেবে সীকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক অর্ডিনারি গ্রুপে ২২ জন, অ্যাসোসিয়েট গ্রুপে ৮ জন এবং ট্রেড ও টাউন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ৬ জন প্রার্থীর ফরম জমা দিয়েছেন।  

তিনি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাংলানিউজকে বলেন, চেম্বার নির্বাচনের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে খুবই আনন্দমুখর অবস্থা, রীতিমতো উৎসব। এটা ব্যবসায়ীদের ব্যাপার, কোনো রাজনীতি নয়। এখানে আমরা ব্যবসায়ী। প্রত্যেকে তার যোগ্যতা বলে এখানে এসেছেন। বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রত্যেক ব্যবসায়ীর অবদান আছে। আমরা এক ছাতার নিচে থাকতে চাই। একটি টিম হিসেবে কাজ করবো। চট্টগ্রামের ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান নিয়ে আমরা কাজ করবো। চট্টগ্রামের প্রতি বৈষম্য দূর করতে আমরা কথা বলবো।  

তিনি বলেন, বাণিজ্যিক রাজধানীর পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন চাই আমরা। বে টার্মিনাল নির্মাণ, মীরসরাই শিল্পাঞ্চলের পানি সংকট দূর করতে কাজ করতে চাই আমরা। চট্টগ্রামকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ হাব করতে চাই আমরা।  

এশিয়ান অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ সালাম বাংলানিউজকে বলেন, চিটাগাং চেম্বার নির্বাচনের নমিনেশন ফরম জমা দেওয়ার শেষ দিন আজ। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে যে পরিবর্তন হয়েছে যে নতুন বাংলাদেশের আমরা স্বপ্ন দেখছি সেই হিসেবে চেম্বারের নতুন নির্বাচন। অনেক অবহেলিত নেতা আছেন, অনেক অভিজ্ঞ নেতা আছেন। সবাই নির্বাচন করতে চান। সবারই একটা স্বপ্ন নতুন বাংলাদেশ তৈরি করা। সবাই নতুন চেম্বার করতে চায়। সবার আগ্রহ দেখে ভালো লাগছে। ভবিষ্যতে যেন একটি ভালো চেম্বার হয়। এক বছর প্রশাসকের অধীনে কাজ করেছি আমরা। নির্বাচিত যে হবে হোক, নির্বাচন যেন সুন্দরভাবে হয়। ব্যবসায়ীরাই যেন চেম্বার চালাতে পারে। সবাইকে অনুরোধ করবো, জটিলতা তৈরি না করে আমরা সবাই ব্যবসায়ী আমাদের সবার কিছু না কিছু দোষ থাকতেই পারে। সবাই মিলেমিশে চলুন। নির্বাচন করে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করি, নতুন চেম্বার তৈরি করি, নতুন বাংলাদেশ তৈরি করি।  

চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্ববায়ক এসএম নুরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চিটাগাং চেম্বারে গত ২০ বছর ধরে সুন্দর নির্বাচন কেউ পায়নি। আমরা চাই প্রত্যেক ব্যবসায়ী (ভোটার) যেন এসে ভোট দিতে পারেন। তারা যাকে পছন্দ করবে সেই নির্বাচিত হবে, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব করবে। নির্বাচনী কার্যক্রমে কোনো বাধা নেই। আমরা খুশি।

ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিট্যাবলস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবু রানা বলেন, দীর্ঘদিন পর সত্যিকার নির্বাচন হচ্ছে চিটাগাং চেম্বারে। তাই আমরা ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাব কেন্দ্রে এসে ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। সঠিক নেতৃত্ব নির্বাচন করুন।

দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ছালামত আলী বলেন, আমরা চাই চিটাগাং চেম্বারে ভালো নেতৃত্ব আসুক। যাতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করতে পারেন। চট্টগ্রাম চেম্বারে এবার একটি সুষ্ঠু সুন্দর ভোট হবে আশা করি।  

মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী বলেন, এতগুলো বছর চেম্বারে কোনো দাবির কথা বলার সুযোগ পাইনি। ১৭ বছর সত্যিকারের নির্বাচন হয়নি। পরিবারতন্ত্রের দখলে ছিল চেম্বার। ফ্যাসিস্টমুক্ত পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই আমরা।  

ব্যবসায়ীদের স্বার্থরক্ষায় কাজ করবেন এমন প্রার্থীদের পক্ষে সাধারণ ভোটাররা। একটি আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগবান্ধব, তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ চেম্বার চান তারা। বিশেষ করে, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর, দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আহরণকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস থেকে শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, অর্থ, বাণিজ্য  ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে এমন নেতৃত্ব বাছাই করবেন তারা।  

আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে দেখা দিয়েছে ভোটের হাওয়া। হেভিওয়েট প্রার্থীদের কাছে দৌড়ঝাপ করছেন নবীনরা। পছন্দের প্যানেল সাজানোর যেমন প্রক্রিয়া চলছে তেমনি আবার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কৌশলও কাজে লাগাচ্ছেন কেউ কেউ। সব কিছু ছাপিয়ে নির্বাচিত পরিচালক ও প্রেসিডিয়াম ঐতিহ্যবাহী চেম্বারের নেতৃত্ব নেবেন, বৃহত্তর চট্টগ্রামে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পকারখানার সংকট নিরসন, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য বাধা এবং ওজন স্কেলের মতো বৈষম্য দূর করবেন- এসবই চাওয়া সংশ্লিষ্টদের।  

এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।