চট্টগ্রাম: কম্পিউটার, মোবাইল ফোন, সফটওয়্যারের যুগেও এতটুকু কমেনি বাংলা নববর্ষে হালখাতার কদর। নগরের প্রাচীনতম বিপণিকেন্দ্র খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই, আসাদগঞ্জ, হাজারী লেইন, মাঝিরঘাট থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার প্রধান প্রধান বিপণিকেন্দ্রে হালখাতার ঐতিহ্য টিকে আছে এখনো।
বংশ পরম্পরায় প্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা করছেন বিপ্লব দাশ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছিলেন স্বর্গীয় অশ্বিনী কুমার দাশ ১২৮ বছর। তিনি আমার দাদু। আমার বাবা স্বর্গীয় কৃষ্ণ কুমার দাশ ২০২০ সালের ৬ জুলাই মারা যান। তাঁর ছবি দোকানে বাঁধাই করা আছে।
বিপ্লব বলেন, সরকারি সিটি কলেজে পড়ালেখা শেষ করে খাতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছি। আমাদের কারখানায় তিন-চারজন দক্ষকর্মী সারা বছর কাজ করেন। ইদানীং ব্যবসা কমে গেছে। আমাদের এখানে কাজ শিখে অনেকে নতুন নতুন দোকান-কারখানা খুলেছে। এটা একটা দিক। আরেকটা দিক হচ্ছে আধুনিক ডিভাইসের কারণে খাতার প্রয়োজন কিছুটা কমেছে। খাতার দাম কিছুটা বাড়ছে কারণ প্রচ্ছদের পপলিন কাপড়, কাগজসহ সব উপকরণের দাম বাড়তি। শ্রমিকদের মজুরিও বেশি।
তিনি জানান, কর্ণফুলী আর্ট অ্যান্ড বাইন্ডিং হাউসের খাতা দেশের গণ্ডী ছাড়িয়ে প্রবাসেও যাচ্ছে। সৌদিআরবসহ বিভিন্ন দেশে যেসব প্রবাসী ব্যবসা করছেন তারা আমাদের খাতা নিয়ে যাচ্ছেন সহজে হিসাব রাখার জন্য।
রোববার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে কর্ণফুলী আর্ট অ্যান্ড বাইন্ডিং হাউসের শোরুমে খাতা কিনতে আসেন আসাদগঞ্জের মেসার্স নীরঞ্জন দাশের ব্যবস্থাপক রাম প্রসাদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আন্দরকিল্লা, চকবাজারসহ বিভিন্ন লাইব্রেরিতে প্রচুর খাতা। কিন্তু একবছরের বেশি সময় বাঁধাই টিকবে, খাতার পাতার সংখ্যা ঠিক থাকবে, ভালো মানের কাগজ থাকবে এসব বিবেচনা করে আমরা প্রতিবছর এ দোকান থেকেই খাতা কিনি। আজ লেজার, জাবেদা, খতিয়ান, ডে বুক, ত্রি কোয়াটার মিলিয়ে আড়াই হাজার টাকার খাতা কিনেছি।
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যত ডিভাইস, কম্পিউটার, সফটওয়্যার থাক না কেন লেনদেন হয় নগদ বা চেকে। সব লেনদেনই খাতায় টুকে রাখতে হয়। রাফ করতে হয়, পরে কম্পিউটারে স্টোর করতে হয়। এককথায় খাতা ছাড়া ব্যবসা এখনো চলছে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের প্রধান প্রধান বিপণিকেন্দ্রের আড়তদার, পাইকার, স্বর্ণকার ও জুয়েলারি ব্যবসায়ীরা হালখাতা উপলক্ষে অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নিয়মিত গ্রাহক বা সেবাগ্রহীতাদের মিষ্টিমুখ করানো, শুভেচ্ছা বিনিময়ের পাশাপাশি বকেয়া আদায়ও এ অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। স্বাভাবিকভাবেই তারা সংগ্রহ করছেন নতুন হালখাতাও।
বকশিরহাট থেকে খাতুনগঞ্জ যাওয়ার পথে বেশ কিছু হালখাতার দোকান দেখা গেছে। এর মধ্যে ৩৬০ চান্দমিয়া লেনের এসবি বাইন্ডিং হাউস, ৩৭ নম্বর বক্সিরহাটের নিউ খাতাঘর ইত্যাদিতে ক্রেতাসমাগম বেশি। এসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে লেজার, ক্যাশবুক, স্টক বুক, রেজিস্টার, ডে বুক, জাবেদা, খতিয়ান ইত্যাদি। চট্টগ্রাম জেলা ছাড়াও রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান, কক্সবাজার, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, কুমিল্লা যায় চট্টগ্রামের খাতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি