মাত্র ৩৩ রান দূরে ছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক থেকে। চাইলে নাম লিখিয়ে ফেলতে পারতেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডবুকে।
আজ দ্বিতীয় টেস্টে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ডিক্লেয়ার করার পর ২৭ বছর বয়সী মুল্ডার বলেন, 'রেকর্ড লারারই থাকা উচিত। দেখুন, লারা একজন কিংবদন্তি। তার মতো একজনের কাছে এই রেকর্ড থাকাটা খুব স্বাভাবিক। আমি যদি আবারও এমন সুযোগ পাই, সম্ভবত একই সিদ্ধান্তই নেব। '
দলের স্কোর তখন ৬২৬-৫, মুল্ডার মধ্যাহ্ন বিরতির পর ইনিংস ডিক্লেয়ার করে দেন, স্রেফ ইতিহাস গড়ার মোহে পড়ে সময় নষ্ট করতে চাননি। তাতে করে টেস্ট ক্রিকেটে ইতিহাসের পঞ্চম সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এবং দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে সর্বোচ্চ স্কোরটা এখন তারই।
টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর (সর্বকালের)
৪০০ — ব্রায়ান লারা (ওয়েস্ট ইন্ডিজ), বনাম ইংল্যান্ড, অ্যান্টিগা ২০০৪*
৩৮০ — ম্যাথু হেইডেন (অস্ট্রেলিয়া), বনাম জিম্বাবুয়ে, পার্থ ২০০৩
৩৭৫ — ব্রায়ান লারা, বনাম ইংল্যান্ড, অ্যান্টিগা ১৯৯৪
৩৭৪ — মাহেলা জয়বর্ধনে (শ্রীলঙ্কা), বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, কলম্বো ২০০৬
৩৬৭ — উইয়ান মুল্ডার (দ.আ.), বনাম জিম্বাবুয়ে, বুলাওয়েও ২০২৫*
মুল্ডারের কথায় স্পষ্ট, এই সিদ্ধান্তটা একা তার ছিল না। দলের কোচ শুকরি কনরাডও নাকি বলেছিলেন, 'কিছু রেকর্ড কিংবদন্তিদের কাছেই থাকুক। '
সেই কথাতেই সায় দিয়েছেন মুল্ডার। ঠিক যেমন ১৯৯৮ সালে মার্ক টেইলর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩৪ রান করে ইনিংস ডিক্লেয়ার করেছিলেন, ডন ব্র্যাডম্যানের স্কোর ছোঁয়ার পর—সেই ইতিহাস যেন আবার ফিরে এল বুলাওয়েওর মাটিতে।
এটা ছিল মুল্ডারের টেস্ট ক্যারিয়ারের মাত্র তৃতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রান করেছিলেন, দ্বিতীয় ইনিংসে পৌঁছে গেলেন ৩৬৭-এ! এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ট্রিপল সেঞ্চুরি ছিল শুধু হাশিম আমলার (৩১১*, ২০১২ সালে)।
মুল্ডারের ইনিংসে নাটকীয় মূহুর্তও এসেছিল। তখন ২৪৭ রানে ব্যাট করছিলেন তিনি, বল হাতে তাকে বোল্ড করে দেন তানাকা চিভাঙ্গা। কিন্তু দেখা যায় ওটা ছিল নো বল! সে যাত্রায় জীবন পেয়ে ৩৬৭ পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান তিনি।
লারা যখন ২০০৪ সালে ৪০০ করেছিলেন, সেটা ছিল তার হাতে দ্বিতীয়বার টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড ভাঙার ঘটনা। এর আগে ১৯৯৪ সালে করেছিলেন ৩৭৫ রান। এরপর হেইডেন একবার তাকে ছাপিয় গেলেও ৪০০ করে রেকর্ড আবার নিজের করে নেন লারা। এতদিন পর সেই রেকর্ডে হুমকি হয়ে উঠেছিলেন মুল্ডার, তবু সুযোগ ছেড়ে দিলেন তিনি। বললেন, 'এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত। '
চার দিনের মতো খেলা বাকি ছিল। চাইলে সময় নিয়ে ৪০০ ছুঁতে পারতেন মুল্ডার। কিন্তু কিংবদন্তিকে সম্মান জানিয়ে ত্যাগ স্বীকার করে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেলেন তিনি।
এমএইচএম