ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২১ মহররম ১৪৪৭

কর্পোরেট কর্নার

মেসেজিং অ্যাপে জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সাহায্য চাইলে আগে যাচাই করুন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৫২, জুলাই ১৭, ২০২৫
মেসেজিং অ্যাপে জরুরি প্রয়োজনে অর্থ সাহায্য চাইলে আগে যাচাই করুন মেসেজিং অ্যাপ

ডিজিটাল স্পেসে প্রতারকের হাত থেকে নিরাপদ থাকতে ব্যাংকিং ও মোবাইল আর্থিক সেবার অ্যাপ সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত অন্যান্য স্মার্টফোন অ্যাপের নিরাপত্তার বাড়ানোর প্রতিও। কেননা কোনোভাবে সোশ্যাল মিডিয়া বা মেসেজিং অ্যাপগুলোর নিয়ন্ত্রণ যদি বেহাত হয়, তাহলে প্রতারকরা আপনার নাম ব্যবহার করে জালিয়াতি বা অপরাধমূলক কার্যকলাপ চালাতে পারে।

এমনকি নিয়ন্ত্রণ হারানো মেসেজিং অ্যাপ ব্যবহার করে প্রতারকরা আপনার ছদ্মবেশে টাকা-পয়সাও হাতিয়ে নিতে পারে পরিচিতদের কাছ থেকে।

প্রিয়জনদের বিপদে বা জরুরি প্রয়োজনে সাড়া দিয়ে আর্থিকভাবে পাশে দাঁড়ানো আমাদের জন্য বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই ডিজিটাল যুগে এ ধরনের অনুরোধগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসে মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে। এ রকম জরুরি পরিস্থিতির প্রতি মানুষের আবেগ-অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে প্রতারক কর্তৃক অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা শোনা যায় হর হামেশাই। এই ধরনের প্রতারণাকে বলা হচ্ছে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং।

তাই আর্থিক সাহায্য চেয়ে কেউ ফোন করলে বা মেসেজ পাঠালে সঙ্গে সঙ্গেই সাড়া না দিয়ে আগে ভালো করে অনুরোধগুলো যাচাই করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যক্তিগত তথ্য যেমন– পরিবার সম্পর্কিত তথ্য, এনআইডি ও পাসপোর্টের তথ্য, কর্মস্থল সংক্রান্ত তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার সময় সবসময় সতর্ক থাকা উচিত। আবার আমরা যারা বিভিন্ন মেসেজিং গ্রুপে যুক্ত থাকি সেখানে পরিচিতদের পাশাপাশি অপরিচিত অনেকেও যুক্ত থাকতে পারেন, তাই এসব গ্রুপে ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করলে তা ভুল মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে। আর আপনার তথ্য ব্যবহার করে হোয়াটসঅ্যাপ, ম্যাসেঞ্জার, ইমো, টেলিগ্রাম, ভাইবার-এর মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মেসেজিং অ্যাপগুলোতে প্রতারণা ঘটনা ঘটার নজির রয়েছে বিশ্বজুড়েই।

ডিজিটাল স্পেসে প্রতারকের খপ্পর থেকে বাঁচতে যা করতে পারেন—
>> কোনো বন্ধু, পরিবারের সদস্য বা সহকর্মীর কাছ থেকে মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে জরুরি আর্থিক সাহায্যের অনুরোধ আসে, তাহলে সরাসরি সেই মেসেজের উত্তর না দিয়ে ভিন্ন কোনো মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। সাধারণত যে নম্বরে বা পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ হয়ে থাকে, সেই নম্বরে সরাসরি কল দিয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। তবে যে মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম থেকে অনুরোধটি এসেছে সেটি এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।

>> এ ধরনের অনুরোধ পেলেই সতর্কতা অবলম্বন করা: যদি এমন হয় যে আর্থিক সাহায্য চেয়ে আসা অনুরোধে নিয়মিত যে মাধ্যমে লেনদেন করেন সেটি বাদ দিয়ে যদি অন্য কোনো মাধ্যমে চাওয়া হয়, তাহলে সহজাতভাবেই বিষয়টি সন্দেহ করা উচিত। বিশেষ করে অনুরোধকারী যদি ক্রিপ্টোকারেন্সি, অপরিচিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা পেমেন্ট অ্যাপে টাকা পাঠাতে বলে তাহলে অত্যন্ত সতর্ক থাকুন। জরুরি পরিস্থিতিতে খুব কম সময়ই এমন নির্দিষ্ট, অস্বাভাবিক বা অচেনা পদ্ধতিতে লেনদেনের অনুরোধ আসে।

>> কথা বলার ধরণ এবং কণ্ঠে অস্বাভাবিকতা: অর্থ সাহায্য চেয়ে মেসেজটি যেভাবে লেখা হয়েছে সেদিকে মনোযোগ দিন। আপনার বন্ধু বা প্রিয়জন কি এভাবেই বলেন? স্ক্যামার বা প্রতারকরা এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহার করে অনেক সময় প্রতারণার চেষ্টা করেন, তারপরও এসব চেষ্টায় ভুল থেকে যায়।

>> হ্যাকাররা অনেক সময় মেসেজে ম্যালওয়্যার লিংক পাঠায়, যাতে অসাবধানবশত ক্লিক করলে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হওয়া বা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য বেহাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এ ধরনের সন্দেহজনক মেসেজের কোনো লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকা বুদ্ধিমানের কাজ।

>> ব্যক্তিগত বা ব্যাংকিং সম্পর্কিত তথ্য কখনোই শেয়ার না করা: আপনার ব্যাংক স্ট্যাটমেন্ট (অ্যাকাউন্ট/কার্ড নম্বর, পিন/পাসওয়ার্ড, ওটিপি, সিভিভি ইত্যাদি), ব্যক্তিগত তথ্য (পরিবারের সদস্য, বন্ধু, কর্মস্থলের তথ্য ইত্যাদি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ও মেসেজিং গ্রুপে কখনোই শেয়ার করা উচিত নয়।

>> সন্দেহজনক মেসেজ পেলে প্রিয়জনদের অবহিত করুন: পরিচিত কারও অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে বলে যদি সন্দেহ হয় তাহলে সময়ক্ষেপণ না করেই তাদের জানানো উচিত। এতে সেই ব্যক্তি যেমন সতর্ক হতে পারবেন তেমনি তার কন্টাক্ট লিস্টে থাকা অনেকেও হয়তো টাকা খোয়ানো থেকে বেঁচে যাবেন।

>>    এমন ঘটনা চোখে পড়লে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা: সন্দেহজনক মেসেজ পেলে বা প্রতারণার শিকার হলে সেটি সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট অ্যাপ এবং সেবাপ্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে রিপোর্ট করুন। উদাহরণস্বরূপ যদি কোনো অনলাইন ব্যাংকিং বা এমএফএস অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক মেসেজের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর অনুরোধ আসে, তাহলে সেই নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হেল্পলাইনে রিপোর্ট করা যেতে পারে। গুরুতর ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ দায়ের করার দরকার হতে পারে।

ডিজিটাল মাধ্যমে আর্থিক জালিয়াতি এড়াতে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। তাই কেউ যদি সন্দেহজনক বা অস্বাভাবিক উপায়ে অর্থ চায়, তাহলে যেকোনো লেনদেনের আগে তা যাচাই করা উচিত। বিশেষ করে জরুরি অর্থ সাহায্যের অনুরোধগুলো সর্বদা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি কথা বলে যাচাই করার চেষ্টা করা উচিত, যার ফলে আপনার ও আপনার প্রিয়জনের অর্থ ডিজিটাল স্পেসে নিরাপদ থাকবে।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

কর্পোরেট কর্নার এর সর্বশেষ