ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনের পর নড়েচড়ে বসেছে সরকার। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) অগ্নিনিরাপত্তায় কোর-কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে (কেপিআই) প্রয়োজনীয় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করে কোর-কমিটির কাছে নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠানোর জন্য সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৮ অক্টোবর দুপুরে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুনে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। আগুনে নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘ সময় কাজ করে ৩৭টি ইউনিট। ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আগুনে ১২শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আগুনের ঘটনায় পরদিন সচিবালয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় অগ্নি দুর্ঘটনা রোধে এবং সুপারিশ দিতে একটি শীর্ষ পর্যায়ের কোর-কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
বুধবার (২২ অক্টোবর) কোর-কমিটির সদস্যদের নাম প্রকাশ করা হয় এবং কার্যপরিধি উল্লেখযোগ্য করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ফারুক ই আজম সই করা এ সংক্রান্ত নথি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কোর-কমিটির কার্যপরিধি:
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি অগ্নিকাণ্ড ঘটার কারণ, দায়দায়িত্ব নিরুপণ করবে এবং অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ঘাটতি নির্ধারণক্রমে এ কোর-কমিটির কাছে প্রতিবেদন দেবে। এ কমিটি অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রয়োজনীয় সুপারিশমালা আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির কাছে পাঠাবে।
কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তা ঝুঁকি নিরুপণ এবং ঝুঁকি থেকে উত্তরণের উপায় নির্ধারণ সুপারিশ করবে।
কেপিআইভুক্ত প্রতিষ্ঠানের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার কার্যকারিতা পরীক্ষাক্রমে অগ্নি প্রতিরোধে সুপারিশ করবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার সিদ্ধান্ত:
সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে একটি কোর-কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কমিটি সভার আলোচনার প্রেক্ষাপট অনুসরণে যাবতীয় পদক্ষেপ নেবে এবং সুপারিশগুলো আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য সভায় উপস্থাপন করবে। কমিটি বিমানবন্দরসহ উল্লিখিত (মিরপুরে গার্মেন্টস, চট্টগ্রামে ইপিজেড) অগ্নিদুর্ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু ও দ্রুত তদন্ত নিশ্চিত করবে। ক্ষেত্র বিশেষে দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োজিত করে পরামর্শ নেওয়ার বিষয়েও সুপারিশ করবে। প্রয়োজনে কমিটির সদস্যরা বিভিন্ন কেপিআই সরজমিনে পরিদর্শন করতে পারবেন।
সব মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে (কেপিআই) সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবে এবং এ কমিটি বরাবর নিয়মিত প্রতিবেদন পাঠাবে।
উপদেষ্টারা/মন্ত্রিপরিষদ সচিব/প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব/সিনিয়র সচিব/সচিব এবং উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে তাদের পরিদর্শনকালীন কেপিআইভুক্ত স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করবেন। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে।
১০টি বড় শপিং মল এবং ১০টি বহুতল ভবন/স্থাপনা নির্বাচন করে জনসমক্ষে তাদের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা নিরুপণে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
কোর-কমিটিতে যারা:
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটিতে রয়েছেন- শিল্প মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), বিদ্যুৎ বিভাগের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের), সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি (ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পর্যায়ের), বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি (অতিরিক্ত আইজিপি), ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতিনিধি (সদস্য পর্যায়ের), বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (সদস্য পর্যায়ের), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধি (সদস্য পর্যায়ের), প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক, বিস্ফোরক পরিদপ্তর।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (দুব্য-১) কোর-কমিটির সদস্য-সচিব হিসেবে রয়েছেন। এ কমিটি প্রয়োজনীয় সংখ্যক সদস্য কো-অপ্ট করতে পারবে।
এমআইএইচ/এসআই