ঢাকা, বুধবার, ১ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৬ জুলাই ২০২৫, ২০ মহররম ১৪৪৭

বাংলানিউজ স্পেশাল

দুই হাত প্রসারিত করা আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা

ইলিয়াস সরকার, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৮, জুলাই ১৬, ২০২৫
দুই হাত প্রসারিত করা আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা

২০১৮ সালে বিস্তৃত ছাত্র আন্দোলনের চাপে কোটা সংস্কার প্রশ্নে পিছু হটে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। সে সময় সরকারি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি কার্যত বাতিল ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু ২০২৪ সালের জুনে হাইকোর্টের এক রায়ে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে কোটা ব্যবস্থা পুনর্বহাল করা হয়। রায়ের পরপরই ছাত্রসমাজের মধ্যে প্রবল অসন্তোষের সৃষ্টি হয়, দানা বাঁধে নতুন আন্দোলনের। এই আন্দোলন অচিরেই রূপ নেয় এক সর্বব্যাপী গণজাগরণে, যা ইতিহাসে ‘জুলাই বিপ্লব’ নামে স্মরণীয় হয়ে আছে। ২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রায় পাঁচ সপ্তাহ জুড়ে চলা এই অভূতপূর্ব গণআন্দোলনে ছাত্র, যুবক, চাকরিপ্রার্থীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষ একত্রিত হয়ে রাজপথে নামে। আন্দোলনের উত্তাল ঢেউয়েই অবসান ঘটে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘদিনের কর্তৃত্ববাদী শাসনের।

কিন্তু এ পথ সহজ ছিল না। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবল চেষ্টা রক্ষা করতে গিয়ে তার ঘাতকবাহিনী শুরু করে নারকীয় কর্মকাণ্ড। যার সূচনা ঘটে ১৬ জুলাই। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সংগঠন এদিন সারা দেশব্যাপী সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দেন। তার ধারাবাহিকতায় সেদিন দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশের গুলিতে অন্তত ছয়জন নিহতের খবর প্রকাশ করে গণমাধ্যমগুলো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল দুই হাত প্রসারিত করে তীব্র প্রতিবাদ করা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র শিক্ষার্থী আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার ঘটনা। পুলিশ স্বপ্রণোদিত হয়ে তাকে খুব কাছ থেকে গুলি করে হত্যা করে।  

জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠিত হয়। আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে তার স্বৈরাচারী, ফ্যাসিবাদী ও একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কীভাবে জুলাই বিপ্লবের মাধ্যমে উৎখাত হয়েছিল, তার বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দায়ের করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি করা হয় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও একই সময় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে। ১৬ জুলাইয়ের ঘটনাগুলোও তুলে ধরা হয়েছে এ অভিযোগপত্রে।

মামলার অগ্রগতির একপর্যায়ে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন রাষ্ট্রপক্ষের রাজসাক্ষী হন। এ মামলায় মোট ৮১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। মামলার ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রটি ১৩৫ পৃষ্ঠার বিশদ বিবরণে তৈরি হয়, যেখানে আন্দোলন দমন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, এবং রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের নানা দিক তুলে ধরা হয়। এই অভিযোগপত্র আদালতে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. আব্দুস সোবহান তরফদার ও মো. মিজানুল ইসলাম। যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয় টেলিভিশনে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও নথি অনুসারে, ঢাকায় ২০২৪ সালের জুলাই মাসের শুরুতে ছাত্রদের আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ছিল শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি। তবে কোটা বিষয়ে এই সিদ্ধান্ত পরবর্তীতে দেশব্যাপী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। কারণ, শিক্ষার্থীরা অর্থনৈতিক মন্দা এবং বেকারত্বের সঙ্গে লড়াই করছিল। তাই স্থায়ী কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান সুযোগ সরকারি চাকরির বিভিন্ন পদে নিয়োগেও তাদের সীমিত সুযোগগুলো মেধার ভিত্তিতে পূরণ হবে এরূপ প্রত্যাশা বেহাত হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে দেশব্যাপী ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ডাক দেয়। ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই ঢাকাসহ সারা দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানানোর জন্য তাদের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী মিছিল ও সমাবেশে অংশ নিতে শুরু করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাজু ভাস্কর্যের সামনে পাল্টা সমাবেশ করে। ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বে সমাবেশ শেষে তাদের কর্মীদের মধ্যে স্ট্যাম্প, হকিস্টিক, লোহার রড, পাইপ, লাঠি, হেলমেট এমনকি আগ্নেয়াস্ত্র বিতরণ করা হয়।  

একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল আজিজ পিস্তলসহ চানখারপুল এলাকায় তার অনুসারীদের নিয়ে অবস্থান নেন। এরপর ছাত্রলীগ এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীরা একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন প্রবেশদ্বার দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা শুরু করে। আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা চানখারপুল হয়ে শহীদুল্লাহ হলের দিকে এলোপাতাড়িভাবে গুলি ছুড়তে থাকে। এ ঘটনায় কমপক্ষে পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন এবং শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

অপরদিকে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের ওপরও হামলা চালায়। ছাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে তাদের মারধর করা হয়। পুরো ঘটনায় পুলিশ সদস্যরা পাশে থাকলেও কোনো প্রতিরোধ করেনি। বরং অনেকেই অভিযোগ করছেন, পুলিশ ছাত্রলীগকে হামলার সুযোগ করে দিয়েছিল। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।

ঢাকা মহানগরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা, প্রাণহানি ও সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত

পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে ঢাকার অন্তত ১৬টি স্থানে অবস্থান নেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তারা যেখানে অবস্থান নেন, সেখানেই আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা পুলিশের সহায়তায় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ঢাকা কলেজের সামনের সড়ক, সায়েন্স ল্যাব, পুরান ঢাকা, নতুন বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা পুলিশের উপস্থিতিতে বা সহায়তায় শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, আইইউবিএটি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, উত্তরা হাইস্কুল, এবং গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যখন রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন, তখন তাদের ওপরও একই কায়দায় হামলা চালানো হয়। এসব ঘটনায় ঢাকায় সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আহত হন এবং সবুজ আলী ও মো. শাহজাহান নামের দুজন নিহত হন। অন্যদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে ককটেল, পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়। এই ঘটনায় ঘটনাস্থলে অন্তত চারজন নিরস্ত্র আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হন এবং শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ ও পুলিশের যৌথ হামলা, শতাধিক শিক্ষার্থী আহত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ও নিরস্ত্র শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করছিলেন, তখন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পেট্রোল বোমা, পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। একই সময় ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশ সদস্যরাও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস, রাবার বুলেট এবং ছররা গুলি ছুঁড়ে হামলায় যোগ দেয়। এই বর্বর হামলায় ঘটনাস্থলেই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার লুৎফুল এলাহি ছররা গুলিতে তার শরীর ও ডান চোখে গুরুতর আঘাত পান। এছাড়া কমপক্ষে চারজন সাধারণ শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাত্রদের ওপর এই সহিংসতার ভিডিও ও ছবি ভাইরাল হয়।

চট্টগ্রামে শান্তিপূর্ণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা, তিনজন নিহত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বিভিন্ন কলেজ ও স্কুলের সাধারণ শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছিলেন। তারা নিরস্ত্র ছিলেন এবং কোনো সহিংসতা ছাড়াই প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। তবে এ সময় পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, নুরুল আজিম রনি ও অন্যান্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়। এই হামলায় ঘটনাস্থলেই ফয়সাল আহমেদ শান্ত, মো. ওয়াসিম ও মো. ফারুক শহীদ হন। এছাড়াও শতাধিক নিরস্ত্র ও নিরীহ ছাত্র-ছাত্রী গুরুতরভাবে আহত হন। চট্টগ্রামে সংঘটিত এই সহিংসতার পরপরই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে হামলার দৃশ্য, যা জনমনে তীব্র ক্ষোভ ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে।

রংপুরে পুলিশ ও সশস্ত্র হামলায় নিহত আবু সাঈদ, সারাদেশে আহত শত শত শিক্ষার্থী

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের সরকারি কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যখন শান্তিপূর্ণভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন, তখন বিনা প্ররোচনায় তাদের ওপর পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা যৌথভাবে হামলা চালায়। এই হামলার পেছনে ছিল আন্দোলন দমন এবং শেখ হাসিনার উস্কানিমূলক বক্তব্য ও কঠোর দমননীতির বাস্তবায়ন। শিক্ষার্থীদের ওপর শর্টগান, টিআরসেল, রাবার বুলেট ও লাঠিপেটা চালানো হয়। হামলার একপর্যায়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে পুলিশের হামলার প্রতিবাদ জানান। তখন পুলিশ খুব কাছ থেকে তার বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তিনি একাধিকবার উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি শাহাদাৎ বরণ করেন। সেই দিন পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ ও মারধরে শতাধিক শিক্ষার্থীও গুরুতরভাবে আহত হন। আবু সাঈদের হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য শেখ হাসিনা তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সরাসরি নির্দেশে আবু সাঈদের হত্যাকারী হিসেবে প্রকৃত খুনি পুলিশ ও তার সহযোগীদের বাদ দিয়ে আন্দোলনকারীদের দায়ী করে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, মামলায় প্রকৃত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিকভাবে মনোনীত অভিযুক্তদের নাম যুক্ত করা হয় এবং একটি শিশুকেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এমনকি তাদের মনমতো সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদানের জন্য স্থানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ এবং স্বাচিপ নেতাদের মাধ্যমে সুরতহাল প্রস্তুতকারী ও ময়নাতদন্ত প্রস্তুতকারী ডাক্তারকে বাধ্য করা হয়। এই রকম হামলা ও দমন অভিযান শুধু রংপুরেই সীমাবদ্ধ ছিল না। একই সময়ে রাজশাহী, কিশোরগঞ্জ, বগুড়া, ঝিনাইদহ, দিনাজপুর ও বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সশস্ত্র বাহিনীর হামলায় আরও কয়েকজন শহীদ হন।

সরকারের নির্দেশনায় সহিংসতা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি সংশ্লিষ্ট হত্যাকাণ্ডে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস আক্রমণ বন্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেননি। যারা পুলিশি দায়িত্বে থেকেও নিরীহ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে, কিংবা যারা আওয়ামী লীগের সশস্ত্র সহযোগী হিসেবে ছাত্রদের ওপর আক্রমণ করেছে, তাদের কাউকেই শাস্তির আওতায় আনা হয়নি। বরং সরকার এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন মহল থেকে এসব হামলাকে নীরবভাবে মদদ দেওয়া হয়।  

এই প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনার নির্দেশ মোতাবেক প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতি ও নির্দেশনা অধঃস্তন কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়, এতে অপরাধজনক কর্মকাণ্ড ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘঠিত হয়।  

জুলাই আন্দোলনের পুরো ঘটনায় যৌথ দায় হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিবন্ধন (১২৭ নং) করা হয়েছে। ওই অভিযোগের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপপরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)। সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তীতে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনার মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় আগামী ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য এবং ৪ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১। ৫ আগস্টের পর ট্রাইব্যুনালে গত ২৫ জুন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে, কারাগারে মারা গেছেন এক আসামি।

ইএস/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।