ঢাকা, বুধবার, ৬ কার্তিক ১৪৩২, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

খুলনাঞ্চলের সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ, এক বছরে ঝরল ৬১৩ প্রাণ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:১৩, অক্টোবর ২২, ২০২৫
খুলনাঞ্চলের সড়ক যেন মৃত্যুফাঁদ, এক বছরে ঝরল ৬১৩ প্রাণ দুর্ঘটনা কবলিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৬১৬টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬১৩ জন।

আহত হন ৬১৪ জন। এ সময়ে ৮৯২টি যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়। সবচেয়ে বেশি ঘটে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা।

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল

সরকারি সংস্থা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিসংখ্যান মতে, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন যশোরে। এ জেলায় ১০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১০৭ জন এবং আহত হন ১০৪ জন। খুলনা জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৪টি। এতে নিহত হন ৪৩ জন এবং আহত হন ৩৮ জন।

বিআরটিএ’র খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক প্রকৌশলী তানভীর আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে ৬১৬টি। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৬১৩ জন। আহত হন ৬১৪ জন। খুলনা জেলায় সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৪টি। এতে নিহত হন ৪৩ জন এবং আহত হন ৩৮ জন।

বাগেরহাট জেলায় সংঘটিত ৪৮টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৪৫ জন এবং আহত ৫৮ জন। সাতক্ষীরা জেলায় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা ৩৯টি, এতে নিহত হন ৫০ জন এবং আহত হন ৪৩ জন।

যশোর জেলায় সংঘটিত ১০৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ১০৪ জন এবং আহত হন ১০৭ জন। নড়াইলে ২৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৩০ জন এবং আহত হন ৪২ জন। মাগুরায় ৪৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৮ জন নিহত এবং ৪২ জন আহত হন। ঝিনাইদহে ৮৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন ৮৩ জন এবং আহত হন ৪৪ জন। কুষ্টিয়ায় ১০৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১০০ জন নিহত ও ১০৪ জন আহত হন। চুয়াডাঙ্গায় ৮৩টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৬০ জন নিহত এবং ৭৪ জন আহত হন। মেহেরপুরে ৪৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৭ জন নিহত এবং ৬৫ জন আহত হন। এ সময়ে ৮৯২টি যানবাহন দুর্ঘটনার শিকার হয়।  

যে কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা

সড়ক সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কে দুর্ঘটনা এত বেড়ে যাওয়ার পেছনে বড় কারণ হলো- আইন প্রয়োগের অভাব, সমন্বয়হীনতা, চালকদের প্রশিক্ষণে ঘাটতি। এছাড়া প্রতিযোগিতা, মহাসড়কে নসিমন, ইজিবাইক, রিকশাসহ ছোট যানবাহনের চলাচল এবং পথচারীদের অসচেনতাও দায়ী। এছাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় তিন চাকার যানবাহন একটি বড় কারণ, বিশেষ করে অটোরিকশা, নসিমন, করিমন, ও ব্যাটারিচালিত রিকশার মতো যানগুলো।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিনই সড়কে ঝরছে প্রাণ। এর পেছনে চালকদের বেপরোয়া আচরণসহ সড়কে অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও আইনের প্রয়োগের অভাব দায়ী। প্রকৌশলগত কিছু সমস্যার সমাধান এবং কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ালে সড়কে মৃত্যু কমবে।

সড়ক দুর্ঘটনার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, সড়ক ও মহাসড়কে গাড়িচালকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে কে কাকে পেছনে ফেলে যেতে পারবেন। কোনো কোনো মহাসড়কে বাঁক বেশি থাকে। যে কারণে সেই সব বাঁক পেরোতে গিয়ে গাড়িচালকরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। খুলনার ডুমুরিয়ার সড়কে অসংখ্য বাঁক রয়েছে। যে কারণে সেখানে দুর্ঘটনারও বেশি।

নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার উপদেষ্টা ও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. সামিউল হক বাংলানিউজকে বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার কারণ কম বেশি সবার জানা। ফিটনেসবিহীন যানবাহন, বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, রাস্তাঘাট নির্মাণে ত্রুটি, বিপজ্জনক ওভারটেক, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, অদক্ষ ও মাদকাসক্ত চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার ও আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। সবাই সেটা আওড়ালেও না সরকারি কর্তৃপক্ষ, না পুলিশ, না মালিকপক্ষ সেটা মানে। ফলে নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার দুষ্টচক্র থেকে সড়ক বেরিয়ে আসতে পারছে না।

অধ্যাপক সামিউল হকের মতে, সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। সরকার, চালক, মালিক, শ্রমিক ও যাত্রী সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে আর তাহলে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।  

এমআরএম/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।