মাদারীপুরে আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করে মুক্তিযোদ্ধার শতাধিক গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে। এতে ওই পরিবারে বাড়ছে আতঙ্ক।
মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলার কাজীবাকাই ইউনিয়নের পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামে শুক্র ও শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুইদিন ধরে চলে এই গাছ কাটার কার্যক্রম। ভুক্তভোগী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম হাওলাদার ওই গ্রামের বাসিন্দা ও অভিযুক্ত প্রতিবেশী মৃত আব্দুল লতিফ কাজীর ছেলে শাহাদাৎ কাজী।
জানা গেছে, ডাসার উপজেলার পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম হাওলাদারের সঙ্গে প্রতিবেশী মৃত আব্দুল লতিফ কাজীর ছেলে শাহাদাৎ কাজীর জমি নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধপূর্ণ জমিতে গাছ কাটতে যান শাহাদাৎ কাজী। মুক্তিযোদ্ধার পরিবার এর প্রতিবাদ জানালে কোনো কর্ণপাত করেনি অভিযুক্ত। পরে কাশেম হাওলাদারের মেয়ে শিউলি আক্তার বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৫ ধারায় একটি অভিযোগ করেন।
সেখানে উল্লেখ করা হয় বিআরএস ২০৩ নম্বর খতিয়াতের ১৭৩৬ ও ১৭৪৩ নম্বর দাগের ১২২ শতাংশ, বিআরএস ২০০ নম্বর খতিয়ানের ১৭৩৯ নম্বর দাগের ৯১ শতাংশ জমি এবং বিআরএস ১২১৯ নম্বর দাগের ১৭৩৮ নম্বর খতিয়ানের ৩১ শতাংশ জমির মালিক আবুল কাশের হাওলাদার। এই জমিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত।
পরে ২৭ আগস্ট নোটিশের মাধ্যমে দুইপক্ষকে আইন মেনে চলতে ও বিরোধপূর্ণ জমিতে কোনো কর্মকাণ্ড না চালাতে ডাসার থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) শহিদুল হক চিঠি দেন। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই ৫ ও ৬ সেপ্টেম্বর দুইদিনব্যাপী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কাশেম হাওলাদারের শতাধিক গাছ কেটে নেয় প্রতিবেশী শাহাদাৎ কাজী ও তার লোকজন। বিষয়টি নিয়ে পুরো পরিবারে বাড়ছে আতঙ্ক।
কাশেম হাওলাদারের মেয়ে শিউলি আক্তার বলেন, ‘আমাদের পৈত্রিক সম্পত্তিতে লাগানো পুরোনো শতাধিক গাছ কেটে নিয়ে গেছে শাহাদাৎ কাজী ও তার তিন ভাই। গাছের মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা। বাড়িতে আমার বাবা নেই। তিনি ৫ আগস্টের পর পলাতক রয়েছেন। এই সুযোগটিকে কাজে লাগিয়েছেন শাহাদাৎ কাজী ও তার ভাইয়েরা। আমরা এখন খুবই আতঙ্কে আছি। ’
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শাহাদাৎ কাজী বলেন, ‘আমাদের জমিতে থাকা গাছ আমরা কাটছি। অন্য কারো জমির গাছ কাটছি না। আদালতে যে অভিযোগ করেছে সেটা এই জমির দাগ নয়। প্রয়োজনে সরকারি সার্ভেয়ার দিয়ে জমি পরিমাপ করে আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দাবি করছি। ’
শাহাদাৎ কাজীর ছোট ভাই আসিফ কাজী বলেন, ‘আমার বিআরএস ১৭৩৭ নম্বর দাগের জমির গাছ কেটে নিচ্ছি। এটা নিয়ে আদালতে কোনো অভিযোগ দেয়নি কেউ। তারা যে দাগের জমির বিষয়ে আদালতে ১৪৫ ধারায় অভিযোগ দিয়েছে সেটা এই জমির অংশ নয়। আমাদের জমির গাছ আমরা কাটতেই পারি। এ নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা নয়। আমরা চাই জমি নিয়ে কোনো ঝামেলা মনে করলে পুরো জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করা হোক। ’
ডাসার থানার এএসআই শহিদুল হক বলেন, ‘আদালতের নির্দেশে দুইপক্ষকেই নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তাদের শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতেও বলা হয়েছে। যদি কেউ এই নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে আদালতের নির্দেশে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
ডাসার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মো. এহতেশামুল ইসলাম জানান, ‘আদালত থেকে নির্দেশনা পেয়ে থানা পুলিশ গিয়ে নোটিশ দিয়ে এসেছে। কেউ আইনশৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’
আরএ