ঢাকা, বুধবার, ১৮ ভাদ্র ১৪৩২, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

রাতে হলে ফিরতে দেরি করায় রাবির ৯১ ছাত্রীকে তলব 

অতিথি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩০, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৫
রাতে হলে ফিরতে দেরি করায় রাবির ৯১ ছাত্রীকে তলব  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

রাতে হলে ফিরতে দেরি করায় রাবির ৯১ ছাত্রীকে তলব করেছেন প্রাধ্যক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘জুলাই-৩৬’ হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার স্বাক্ষরিত এক নোটিসে হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ৯১ ছাত্রীর তালিকা প্রকাশ করে অফিসে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেন।

 

সোমবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাতে হলে ফিরতে দেরি করায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৯১ ছাত্রীকে প্রাধ্যক্ষের তলব নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে।  

দিবাগত রাতে নোটিশটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। তবে হল প্রশাসন বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই ছাত্রীদের ডাকা হয়েছে, এখানে অন্য কোনো কারণ নেই।

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার স্বাক্ষরিত নোটিসে বলা হয়েছে, ‘এতদ্বারা জুলাই-৩৬ হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ছাত্রীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেরিতে (রাত ১১.০০টার পরে) হলে ফেরার কারণে নিম্নে উল্লিখিত ছাত্রীদের ক্রমিক নম্বর ০১-৪৫ পর্যন্ত আগামী ৯ সেপ্টেম্বর রোজ মঙ্গলবার এবং ক্রমিক নম্বর ৪৬-৯১ পর্যন্ত ১০ সেপ্টেম্বর রোজ বুধবার বিকেল ৪টায় প্রাধ্যক্ষ মহোদয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো। ’

এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষ এ ঘটনাকে নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা বলছেন, প্রশাসন থেকে এসব নিয়ম তুলে নেওয়া হলে মেয়েরা যখন খুশি তখন হলে প্রবেশ এবং বাহির হতে পারবে। দুর্ভাগ্যবশত কোনো ছাত্রীর যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটনা ঘটে সেই সময় প্রশাসনেরই দারস্থ হতে হবে। অন্যদিকে আরেকটি পক্ষ এই ধরনের নিয়মকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রেক্ষাপটে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘বৈষম্যমূলক’ দাবি করে প্রতিবাদ করছেন। কেউ কেউ ব্যঙ্গ করে বলছেন, এক দেশে দুই আইন কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কেন শিক্ষার্থীদের আলাদা করে ছেলে বা মেয়ে হিসেবে ভাবে? কেন শুধু শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবতে পারছে না? নারী-পুরুষে, হিন্দু-মুসলমানে, পাহাড়ে-সমতলে ইত্যাদিতে বিভক্ত না করে শুধু শিক্ষার্থী ভাবুক। ’

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. আনোয়ার হোসেন ফেসবুকে ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার’ নামক একটি গ্রুপে পোস্ট করে লিখেছেন, ‘রাবির জুলাই-৩৬ হলের একটা নোটিশ নিউজ ফিডে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এভাবে নোটিশ দেওয়া উচিত হয়নি হল প্রশাসনের। তারা অন্যভাবে বিষয়টি সমাধান করতে পারত; এটা প্রশাসনের দায়িত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ। ’

তিনি একটি প্রশ্ন তুলে লিখেছেন, ‘একটা প্রশ্ন রেখে গেলাম, ধরুন প্রশাসন থেকে এসব নিয়ম তুলে নেওয়া হলো; মেয়েরা যখন খুশি হলে প্রবেশ এবং বাহির হতে পারবে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের কোনো একটা বোনের সঙ্গে যদি অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু একটা ঘটনা ঘটে গেল, তখন এর বিচার কার কাছে চাইব আমরা? তখন কিন্তু আমরাই হল প্রশাসনের কাছে বিচার চাইব, প্রশাসনের পদত্যাগ চাইব, বিচারের দাবিতে আন্দোলন করব। ’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহ পরাণ হল প্রশাসনের নোটিশটি শেয়ার করে নিজের টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘আমি আজকে ১টার পর রুমে ঢুকেছি, আমরা অনেকেই এভাবে ঢুকেছি। আমি চাই, জিয়া হলেও এমন একটা নোটিশ ঝোলানো হোক। আমাদের ও প্রভোস্ট রুমে তলব করা হোক। কী মনে হয়, প্রশাসন করবে এটা কিংবা করতে পারবে? যদি না করে তাহলে এক দেশে দুই আইন কেন? বিশ্ববিদ্যালয় কেনো শিক্ষার্থীদের ছেলে বা মেয়ে এইভাবে ভাবে? কেন শুধু শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবতে পারছে না? আমি চাই, বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের শিক্ষার্থী হিসেবে ভাবুক। নারী-পুরুষে, হিন্দু-মুসলমানে, পাহাড়ে-সমতলে ইত্যাদিতে ডিভাইড না করে শুধু শিক্ষার্থী ভাবুক। ’

হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত ও সিদ্ধান্তের সমর্থনকারীদের সমালোচনা করে অশেকা জাইমা খান নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘যারা জুলাই-৩৬ হলের নোটিশ বিষয়ক প্রেক্ষাপটে বলছেন যে, যদি কারো কিছু হয়ে যায় তাহলে হল প্রশাসনকে অভিভাবকরা দায়ী করবে অথবা হল প্রশাসন আমাদের অভিভাবক। তাদের মুখে জুতার বাড়ি। ১৬ জুলাই, ২০২৪ সারাদেশে ব্লকেড থাকার পরেও ৫/৬ ঘণ্টার নোটিসে যে আমাদের হল ছাড়া করেছিল মনে নেই? ওই প্রশাসন এই প্রশাসন সবাই সান্ধ্য আইনের পক্ষেই, এবং একই রসুনের তলা। ’

শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ‘ডগ পুলিশ’-এর মতো আচরণ করছে। প্রশাসন দাবি করে, সারথি অনি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা সবাই শিক্ষার্থী। নারী-পুরুষের বিভাজন সৃষ্টি করে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান তার চরমতম কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণ প্রকাশ করছে। যে নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সন্ধ্যার পর ছাত্রীদের হলে ঢোকার নির্দেশ জারি করা হয়, সেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা কি শিক্ষার্থীদের দায়িত্ব? 
বিশ্ববিদ্যালয় যদি নৈতিকতা শেখানোর (আরোপের) দায়িত্ব গ্রহণ করে ফেলে তবে নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও তাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। অথচ সেটার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ওপর অযথা নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে ‘ডগ পুলিশ’-এর মতো আচরণ করছে প্রশাসন। আর শিক্ষার্থীদের স্বাধীনতাকে খর্ব করে এই বিশ্ববিদ্যালয় মর্যাদা ও মুক্তচিন্তার পরিবেশকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে যাচ্ছে। ’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জুলাই-৩৬ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক লাভলী নাহার মোবাইল ফোনে বলেন, তারা সবাই আমাদের সন্তানের মতো। তাদের খেয়াল রাখা আমাদের দায়িত্ব। নিরাপত্তার স্বার্থেই ছাত্রীদের ডাকা হয়েছে, এখানে অন্য কোনো কারণ নেই। তবে, যারা একদিন দেরি করে এসেছে, তাদেরও তালিকায় রাখা হয়েছে, এটা ভুল হয়েছে। দেরি হতেই পারে, তবে সামনে রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে যেন কোনো ধরনের বিপদ না হয়, সতর্কতা অবলম্বনের জন্যই।  

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।