কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে এই হামলার ঘটনায় বহিরাগত কেউ জড়িত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে এই আশ্বাস দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়- বিগত ৭ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন ও ভেটেরিনারি অনুষদের শিক্ষার্থীরা তাদের চাকরির ক্ষেত্র বাড়ানো এবং চাকরি পাওয়ার নিশ্চয়তায় ভেট সায়েন্স অ্যান্ড এ এইচ কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি ভিসির কাছে দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিষয়টি দ্রুত সমাধানকল্পে গত ১২ আগস্ট একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষার্থীদের দাবি এবং উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনকল্পে আন্তরিকতা ও গুরুত্বের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। পরবর্তীতে এই কমিটি সব অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে একটি সুপারিশমালা দেয়। সেই সঙ্গে কমিটির সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ৩১ আগস্ট সকাল ১১টায় শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে একাডেমিক কাউন্সিলের জরুরি সভা আহ্বান করা হয়। সভায় উপস্থিত ২৫১ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৬ জন শিক্ষক বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে প্রাথমিকভাবে দুই বা তিনজন শিক্ষকের দ্বিমত থাকলেও পরবর্তীতে কমিটির প্রস্তাবিত ৬টি সুপারিশমালা সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, একাডেমিক কাউন্সিলের সভা শেষ হওয়ার আগেই জানা যায় যে, সভার সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীরা সন্তুষ্ট হয়েছে এবং কর্তৃপক্ষকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য তারা প্রস্তুতি নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে যায়। শিক্ষার্থীরা একাডেমিক কাউন্সিল সভায় উপস্থিত ২৫১ জন শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দসহ প্রায় ৩০০ জনকে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন মিলনায়তনে তালাবদ্ধ করে জিম্মি করে। শিক্ষকদের মধ্যে ছিল বয়োবৃদ্ধ ষাটোর্ধ শিক্ষক, হৃদরোগী, ডায়াবেটিস আক্রান্তসহ শারীরিকভাবে অসুস্থ এবং অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষকও।
বিষয়টি চিন্তা করে তীব্র গরমে অতিষ্ট হয়ে ও অভুক্ত অবস্থায় প্রশাসন ও আটকে পড়া শিক্ষকরা কোনরূপ শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা না করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালিয়ে যান এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনুরোধ কর্নপাত না করে শিক্ষকদের ভোগান্তি ও অভুক্ত অবস্থার কথা বিবেচনায় নেয়নি। পরবর্তীতে শেষ বিকেলের দিকে আটকে পড়া শিক্ষকদের স্বজন, বয়স্ক বাবা-মা এবং কিছু এলাকাবাসীও ছিল তারা উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার পরিপ্রেক্ষিতে অডিটোরিয়ামের চারপাশে জড়ো হওয়া শুরু করে। তদুপরি আটকে পড়া শিক্ষকরা ধৈর্য্য হারা না হয়ে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যান কোনরূপ বল প্রয়োগ ছাড়া। এ সময় জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ প্রশাসন আন্দোলরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। এরই মধ্যে কয়েকজন মহিলা শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের বের হতে দেওয়ার অনুরোধ করা হলেও আন্দোলরত শিক্ষার্থীরা তাদের দাবিতে অটল থাকে।
এ সময় শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত দাবির বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে মর্মে বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তারা অজ্ঞাত কারণে তা বুঝতে চেষ্টা করেনি বরং নারী ও বয়স্ক শিক্ষকবৃন্দসহ সবাইকে প্রায় আট ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠলে অডিটোরিয়ামের দক্ষিণ ও মুক্তমঞ্চের দিকের গেট কে বা কারা তালা ভেঙে খুলে দেয়। পরে আটকে পড়া শিক্ষকরা সবাই বের হয়ে আসেন। এ সময় আন্দোলনকারী ছাত্ররা বাধা দিতে এলে ধাক্কাধাক্কি হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে জেনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মর্মাহত এবং আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছে। ইতোমধ্যে আহতদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কথা বলে দুঃখ প্রকাশ করেছে।
সেই সঙ্গে ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা হয়েছে দাবি করে বিবৃতিতে বলা হয়- শিক্ষকদের বাসা থেকে আগত স্বজন, কর্মচারী ও বিভিন্ন শুভানুধ্যায়ীদের যারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, তাদের ঢালাওভাবে বহিরাগত হিসেবে আখ্যা দিয়ে শিক্ষার্থীদের উত্তপ্ত করা হয়েছে এবং আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। তবে গেট দুটোর তালা কে বা কারা ভেঙেছে তা তৎক্ষনাৎ জানা যায়নি। এটা বাইরে থেকে আটকে পড়া শিক্ষকদের স্বজন কিংবা তাদের পরিচিত এলাকাবাসী বা কর্মচারীদের কেউ করেছে কি না- তা তদন্ত সাপেক্ষ। এ ব্যাপারে বহিরাগত কেউ জড়িত থাকলে স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. হেলাল উদ্দীন স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলায় হয়, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির বাইরে এ পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ৩১ আগস্ট রাত সাড়ে ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের জরুরি (ভার্চুয়াল) সভায় বিশ্ববিদ্যালয় আইন শৃঙ্খলা জেলা প্রশাসনের কাছে ন্যস্ত করা হয়। একই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকবে মর্মে সিন্ডিকেটে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এছাড়াও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ক্ষুণ্নকারী এবং সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এ লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ স্থিতিশীল ও শৃঙ্খলাময় রাখার জন্য সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. একে ফজলুল হক ভূইয়া বাংলানিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে গৃহীত সিদ্ধান্ত না মেনে অনিয়তান্ত্রিক আন্দোলন দুঃখজনক। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে। আশা করছি শিক্ষার্থীরা বিষয়টি অনুধাবন করে তারা শান্তিপূর্ণ অবস্থানে ফিরে আসবে।
আরএ