ঢাকা, শুক্রবার, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

সড়ক তো নয় যেন পুকুর! 

খোরশেদ আলম সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৪, আগস্ট ৭, ২০২৫
সড়ক তো নয় যেন পুকুর!  ভাঙা সড়ক

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বেশ কিছু সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বড় বড় গর্তের কারণে প্রায় ঘটছে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর যেন ভুলেই গেছে এসব সড়ক সংস্কারের দায়টা তাদের।  

জানা গেছে, আদিতমারী উপজেলার অর্থনৈতিক ও ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র খ্যাত মহিষখোচা ইউনিয়নে রয়েছে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে একাধিক ব্যাংক, বিমা, বেশ কিছু স্কুল, কলেজ, মাদরাসা। উপজেলার একমাত্র কামিল মাদরাসাটিও এলাকায় অবস্থিত।  

উপজেলা পরিষদের হাট বাজারের বার্ষিক আয়ের সিংহভাগ আসে মহিষখোচা ইউনিয়নের কুষ্টারীর হাট ও বাজার থেকে। ব্যবসা বাণিজ্য শিক্ষা সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা মহিষখোচা। সেই মহিষখোচার সঙ্গে উপজেলা সদরের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক পথটি মহিষখোচা থেকে বুড়িরবাজার হয়ে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত।  

এই সাড়ে চার কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে মহিষখোচা, পলাশী ও ভাদাই ইউনিয়নের মানুষ উপজেলা সদরে যাতায়াত করে। এসব এলাকার ছেলে মেয়েরা ওই পথ ধরেই উপজেলা সদরের সরকারি আদিতমারী কলেজ, কেবি স্কুল ও কলেজ এবং আদিতমারী জিএস মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজসহ অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করে।  
 
মহিষখোচা টু বুড়ির বাজার এ জনগুরুত্বপূর্ণ বাইপাস সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না করায় বর্তমানে চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাত্র সাড়ে চার কিলোমিটার দীর্ঘ পথটিতে কয়েক হাজার ছোট বড় গর্ত হয়েছে। খানাখন্দের কারণে এটুকু পথে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণসহ যানবাহন বিকল হচ্ছে পথচারীদের। বড় যানবাহন আগে চলাচল করলেও বর্তমানে রিকশা, অটোরিকশা আর মোটরসাইকেল ভ্যান চালানোও দুস্কর হয়ে পড়েছে।  

বড় বা মাঝারী ধরনের ট্রাক যাতায়ত করতে না পারায় ক্ষতির মধ্যে পড়ছেন এই এলাকার ব্যবসায়ীরা। তারা বড় বড় ট্রাকে করে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে পণ্য আনলেও উপজেলা সদরে নামিয়ে তা ভ্যান করে ওই সাড়ে চার কিলোমিটার পার হতে হচ্ছে। ফলে পণ্য পরিবহন খরচ বাড়ছে কয়েকগুন। এতে লোকসানে পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। একইভাবে পরিবহন খরচ বাড়ছে ওই এলাকার সরকারি কাজের ঠিকাদারদের। তারাও বড় ট্রাকে পণ্য পরিবহন করতে পারছেন না।  

স্কুল শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান বলেন, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন অটোরিকশা করে বিদ্যালয়ে যাই। বর্তমানে অটোতে উঠলে বুকটা কাঁপে। কখন যে অটোরিকশা গর্তে পড়ে উল্টে যায়। যে বড় বড় গর্ত হয়েছে। দেখলে মনে হয় না এটি সড়ক। এটিকে পুকুর বলে মনে হয়।  

মহিষখোচা এলাকার ঠিকাদার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য শাহীন বলেন, মহিষখোচা ভূমি অফিসের নির্মাণ কাজ করছি। সড়কটি এতটাই ভাঙা যে  ছোট ট্রাকেও পণ্য আনা সম্ভব হচ্ছে না। বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে মালপত্র নিয়ে এসে সরকারি এ কাজটি করতে হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণ খুবই জরুরি।  

মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী অধ্যাপক রবিউল ইসলাম বলেন, উপজেলা সদরের সঙ্গে এ এলাকার মানুষের যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেক কষ্ট করে প্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করছে। দ্রুত সংস্কারের দাবি জানান তিনি।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি এক কর্মকর্তা বলেন, সড়কটি নষ্ট হওয়ায় কোনোদিনই সময় মতো অফিসে পৌঁছাতে পারছি না। দুইদিন মোটরসাইকেল উল্টে পড়ে গিয়েছিলাম। এটি দ্রুত সংস্কার করা দরকার।  

শুধু মহিষখোচা বুড়িরবাজার সড়ক নয়, আদিতমারী উপজেলার বেশ কয়েকটি বাইপাস সড়কের বেহাল দশা। বিগত ফ্যাসিস আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ তার নির্বাচনী আসনে কোনো উন্নয়ন করেননি। নিজের আসনের বরাদ্দে কমিশন নিয়ে বাইরের আসনের জনপ্রতিনিধিদের (এমপি) কাছে বিক্রি করেছেন। কার্যত উন্নয়ন মূলক কাজে বঞ্চিত হয়েছে তার নির্বাচনী এলাকা। যার ক্ষত আজও বহন করছে এ অঞ্চলের মানুষ।  

এ উপজেলায় রুগ্ন সড়কের তালিকায় পড়েছে মহিষখোচা বুড়ির বাজার সাড়ে চার কিলোমিটার, দুরাকুটি থেকে বামনের বাসা ১২ কিলোমিটার, সাপ্টিবাড়ি থেকে নাড়িয়ার বাজার ৬ কিলোমিটার, কালীস্থান থেকে কমলাবাড়ি দেড় কিলোমিটার সড়ক পথ। এসব মেরামত করা জরুরি হলেও কোনো উদ্যোগ নেই সরকারের। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ উপজেলার মানুষ।  

আদিতমারী উপজেলা প্রকৌশল দপ্তর জানায়, সরকারি বরাদ্দ কম থাকায় আপাতত মহিষখোচা বুড়িরবাজার সাড়ে ৪ কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য ৩ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, ভেলাবাড়ি থেকে বামনের বাসা সড়কের ৭ কিলোমিটার ৪ কোটি ১০ লাখ টাকার দুইটি প্রকল্প নিতে মন্ত্রণালয়ে সম্ভাব্য প্রকল্পসহ চাহিদা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ বাড়ালে বাকিগুলোর প্রকল্প দেওয়া হবে।  

উপজেলা প্রকৌশলী একেএম ফজলুল হক বলেন, দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় উপজেলার বেশ কিছু সড়ক নষ্ট হতে বসেছে। আপাতত জরুরি ভিত্তিতে কিছু বরাদ্দ চেয়ে মহিষখোচা বুড়িরবাজার ও ভেলাবাড়ি থেকে বামনের বাসা এই দুই জনগুরুত্বপূর্ণ ও জরাজীর্ণ সড়ক সংস্কার করতে সম্ভাব্য ব্যয় নির্ধারণ করে দুইটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে দরপত্র আহ্বান করা হবে। জেলায় বরাদ্দ কম। সেখান থেকে যতটুকু ভাগ পাওয়া যাবে তা থেকে প্রকল্প নিতে হবে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।