জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় পুলিশের গুলি খেলেও রাজপথ ছাড়েনি খুলনার বীর ছাত্র-জনতা। স্বৈরাচার হটানোর মোহে জীবনের মায়া ত্যাগ করে বুলেটের সামনে বুক চিতিয়ে এক কাতারে দাঁড়িয়ে রাজপথ দখল করে নিয়েছিলেন তারা।
গত ২ আগস্ট খুলনার ছাত্র-জনতা তুমুল প্রতিরোধ গড়ার পর অবশেষে এলো বিজয়। ওইদিন রাত থেকেই খুলনা স্বাধীন হয়ে গেল পুরোপুরি। খুলনার পুলিশ আর ভয়ে মাঠে নামলো না। অবশেষে পাঁচ আগস্ট হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারের রেজিম থেকে মুক্ত হলো।
২ আগস্ট খুলনায় বৃষ্টির মতো গুলি ছোড়ে পুলিশ
খুলনার জিরোপয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ২০২৪ সালের ২ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেন।
শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও শটগানের গুলি) অবস্থায় সাতজনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে চারজনের অবস্থা গুরুতর থাকে। এ ঘটনায় পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন। তাদের পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গুরুতর আহত একজন পুলিশের গাড়ি চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরতারা জানিয়েছিলেন, বিকেল থেকে সংঘর্ষে আহত রোগীরা হাসপাতালে আসেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সিরাজুল ইসলাম (৬০), শাহরিয়ার নীরব (২৪), আবির (২৪), মিজান (৪৮), ফাইয়াস (২৩), রবিনা (৩২), নাবিল (২৪), মিজান (৩২), সৌরভ (২৩), শেখ তানিক (২২), মিতু (২১), তানিয়া (১৯), রাবেয়া সুলতানা (২৩) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন ব্যক্তিগতভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন।
চিকিৎসকরা জানান, আহত অনেকে গুলিবিদ্ধ। এদের মধ্যে সিরাজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তির কপালে রাবার বুলেট বিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে যান। জরুরিভাবে অপারেশনের মাধ্যমে তার বুলেট বের করা হয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া কমপক্ষে ৭/৮ জনের শরীবের গুলি ছিল। বাকিরা টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও ইটের আঘাতে আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার দুপুর দুইটার দিকে শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেটের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলেও পরে পিছু হটে। এরপর তারা মিছিল সহকারে মজিদ সরণি হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার দিকে যায়। শিক্ষার্থীরা সোনাডাঙ্গা থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। তখন পুলিশ সদস্যরা থানার ভেতরে গিয়ে অবস্থান নেয়। পরে হরিণটানা থানায়ও ইটপাটকেল ও খালি বোতল নিক্ষেপ করে তারা। এ সময় থানার প্রধান ফটক বন্ধ ছিল।
শিক্ষার্থীরা বিকেল সোয়া ৩টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পৌঁছানোর পর পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ এবং পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। প্রায় আধা ঘণ্টা ধরে চলে এই সংঘর্ষ। উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়। এ সময় নগরীর গল্লামারী থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
বিকেল ৪টার দিকে পুলিশ কিছুটা পিছু হটে। কিছু পুলিশ জিরোপয়েন্ট এলাকায় এবং কিছু পুলিশ গল্লামারী মোড়ে অবস্থান নেয়। কয়েক দফা শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পুলিশ কিছুটা পেছনে সরে আসতে বাধ্য হয়। পরে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশের পর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে নগরীর শিববাড়ি মোড়ের দিকে যেতে চাইলে বিকেল ৬টায় গল্লামারী মোড়ে আরেক দফা সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ মুর্হুমূর্হু টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে। সাড়ে ৬টার দিকে পুলিশ পিছু হটলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেই সংঘর্ষের পর সিরাজুল ইসলাম, আবির, নীরব, নাবিল, মিজান, সৌরভ, আবদুল্লাহ, রায়েব সুলতানা রাইবা এবং রুবিনা ইয়াসমিনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের শরীরে রাবার বুলেট ও শটগানের ছররা গুলি ছিল।
আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আল শাহরিয়ার দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিল নিরস্ত্র শিক্ষার্থী ওপর পুলিশ অহেতুক টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। এতে অনেকে আহত হন। গুলিবিদ্ধ কয়েকজনকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
খুলনার জিরোপয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সেই দিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের তিন দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে। খুলনায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। আরও বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন। নিহত সুমন কুমার ঘরামী (৩৩) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটের দিকে গল্লামারী কাঁচাবাজারে এ ঘটনা ঘটে।
সেই দিনের ভয়াবহ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৎকালীন সমন্বয়ক আয়মান আহাদ বাংলানিউজকে বলেন, ৩১ তারিখ নানা নাটকীয়তা আর গ্রেফতারের মধ্যে দিয়ে সময় পার করলাম। তারপর এলো ভয়াবহ আগস্ট। স্বৈরাচার হাসিনার রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে রেড কার্ড দেখালো ছাত্র জনতা। বাকি রইল না আমাদের কিছু অসাধারণ শিক্ষকরাও। পহেলা আগস্ট তারা মাথায় লাল কাপড় বেঁধে আমাদের পাশে দাঁড়ালেন আমাদের আশার আলো হয়ে। আমরা ছাত্ররা যেন আরও ভরসা পেলাম। আমাদের বুকে যেন আরও মুক্তির স্বপ্ন এসে জন্মালো। স্যারদের অগ্নিঝরা বক্তব্য যেন শিক্ষার্থীদের বুকে বুলেটের মতো গিয়ে বিঁধলো আর স্বৈরাচারের গদি টাল মাটাল হতে লাগলো। ক্ষমতার নেশায় অন্ধ হয়ে গেল হাসিনা।
আর সেই অন্ধত্বের কারণেই খুলনাবাসীদের দেখতে হলো ভয়াবহ দোসরা আগস্ট। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী এমন ভয়াবহতা খুলনার মানুষ আগে কখনো দেখেনি। ১ তারিখ রাতে ল ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের হেলাল ভাই ও ল ডিসিপ্লিনের ১৯ ব্যাচের আল শাহরিয়ারসহ আরও কয়েকজন মিলে নানা ধরনের প্ল্যান করলাম কীভাবে প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা যায়। কারণ স্বৈরাচারের পেটোয়া বাহিনী কোনোভাবেই ২ তারিখের প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করতে দেবে না। তাইতো সু-কৌশলে প্রোগ্রাম দেওয়া হলো নিউ মার্কেটে। কিন্তু জড়ো হওয়ার কথা ছিল শিববাড়ি। আর এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের সামনে আয়োজন করা হলো "শেকল ভাঙার ছল"। কথা হলো নিউ মার্কেট থেকে জনতা এক হয়ে মেইন গেট এসে মিছিল থামাবে। সেদিন আবার শুক্রবার নিউ মার্কেট মসজিদে নামাজ পড়েই বের হতে দেখা গেল চারিদিকে শত শত পুলিশ। আর সাথে সাথে পুলিশ সবাইকে বিচ্ছিন্ন করে দিলো। ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। পরে আস্তেধীরে নানা কৌশলে সবাই শিববাড়ি (সেইলর শপিংমল) এর পাশে এসে জড়ো হলো। মুহুর্তে যেন হাজার হাজার মানুষ এসে মিছিলে যোগ দিল। সেদিন দেখেছি মানুষের ক্ষোভ এবং স্বৈরাচারের পতনের নেশা। রাস্তায় পুলিশের বাঁধা আর ভারী বর্ষণ কিছুই থামাতে পারেনি।
সেদিনের সাতরাস্তা এবং আজকের নিউ মার্কেটের ভয়াবহতা তাদের যেন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে উঠল। পুলিশ দৌড়ে পালালো। এভাবে মিছিলটি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটের দিকে আগাতে থাকলো। একপর্যায়ে মেইন গেট ক্রস করে জিরো পয়েন্ট অভিমুখে যাওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ র্যাব, বিজিবি শুরু করলো ফায়ারিং। একের পর এক ককটেল, টিয়ার গ্যাস ছররা বুলেট, রাবার বুলেটসহ গুলি চালাতে লাগলো সাধারণ ছাত্রদের ওপর। কিন্তু মুক্তির নেশা যার তাকে কি আর বুলেট দিয়ে বাঁধা দেওয়া যায়? একপর্যায়ে লাইভ করতে করতে গিয়ে বাংলা ডিসিপ্লিনের ২২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মামুন জ্ঞান হারা হয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট দিয়ে একের পর এক ছাত্রদের আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কারো সারা শরীরে বুলেট,কেও বা টিয়ার গ্যাসের ধোঁয়ায় হাঁপানি যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেদিন ভারী হয়ে উঠলো কান্নায়।
সেদিনে নারী শিক্ষার্থীদের অবস্থা তুলে ধরে আহাদ বলেন, হসপিটালে আসলাম নারী শিক্ষার্থীদের কষ্ট দেখে আর স্থির থাকা যাচ্ছিলো না। স্বাভাবিকভাবে টিয়ার গ্যাস যেন তাদের বেশি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সবার খুব বাজে অবস্থা । চোখে-মুখে আতঙ্ক আর ভয়। স্যাররা দাঁড়িয়ে আছেন গুটিকয়েক, কারোরই কিছু করার নেই!
ঘণ্টা দুই ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার পর একপর্যায়ে পুলিশ আত্মসমর্পণের নাটক করলো। কিন্তু পরে আবার গল্লামারী যাওয়ার সাথে সাথেই তারা হামলা করলো একের পর এক টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকলো সাথে সাউন্ড গ্রেনেড। আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠল। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হল গেটের সামনেও নিক্ষেপ করা হলো টিয়ারশেল আর সাউন্ড গ্রেনেড। মুহূর্তে পুরো ক্যাম্পাস সাদা ধোয়ায় ভরে উঠলো। অনেক শিক্ষার্থী যারা একটু বাঁচার আশায় ক্যাম্পাসে আশ্রয় নেয় তারাও পড়লো বিপদে। ক্যাম্পাসের ভেতরেই খাজা হলের পাশে আগুন ধরানো হলো। তখন অটোরিকশায় একের পর এক ছাত্রীদের নিয়ে আসা হলো হাসপাতালে। কেউ শ্বাসকষ্টের রোগীদের মতো খাচ্ছে। হাসপাতালে কেউ কেউ বা কাঁপছে মরণ যন্ত্রণায়।
ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধও রেহাই পেলো না স্বৈরাচারের ছোবল থেকে তার কপালে দেখলাম শিসা বুলেট বিদ্ধ হয়ে আছে। পরে ছাত্ররা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলো। সেখানেও বাহানা অনেক ডাক্তার নাকি ছাত্র নাম শুনলে চিকিৎসাও দিচ্ছিলেন না। একপর্যায়ে খুলনার ছাত্র-জনতা তুমুল প্রতিরোধ গড়ার পর অবশেষে এলো বিজয় এবং ওইদিন রাত থেকেই খুলনা স্বাধীন হয়ে গেল পুরোপুরি।
খুলনার পুলিশ আর ভয়ে মাঠে নামলো না। অবশেষে পাঁচ আগস্ট হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারের রেজিম থেকে মুক্ত হলো।
২ আগস্ট খুলনার ইতিহাসের পাতায় নতুন একটি অবিশ্বাস্য ও শ্বাসরুদ্ধকর ইতিহাস লেখা হয়েছিল। শাফিলদের রক্তের অক্ষরে লেখা এ ইতিহাস। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে পুলিশের গুলিতে বাম চোখ হারায় খুলনার নর্দান ইউনিভার্সিটির ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) প্রথম বর্ষের ছাত্র আব্দুল্লাহ শাফিল।
ওইদিনের ঘটনা বর্ণনা করে শাফিল বলেন, ন্যায্যদাবি আদায়ের লক্ষ্যে প্রথম থেকে সহযোদ্ধাদের সঙ্গে আমি ছিলাম। আমাদের দাবি মানার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে গুলি ও ভাইদের লাশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা নয় দফা থেকে এক দফায় আসি। ২ আগস্ট বিকেলে আমরা নিউমার্কেটে একত্রিত হয়ে শিববাড়ির দিকে যাই। সেখান থেকে নিউমার্কেট হয়ে শান্তিপূর্ণভাবে সোনাডাঙ্গায় যাই। গল্লামারী পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। খুবই শান্তিপূর্ণ। আমরা কোনো পুলিশের গায়ে হাত তুলিনি। লাঠি কিংবা ইটপাটকেল কিছুই ছিল না। আমরা যখন জিরোপয়েন্ট দিকে যাচ্ছিলাম তখন শুনতে পাই আমাদের এক ভাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। তাকে উদ্ধার করার জন্য সামনের দিকে এগোতে এগোতে শুনতে পাই আমাদের আরও এক ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে উদ্ধার করার জন্য আমরা সামনের দিকে এগোতে থাকি। এ সময় পুলিশের টিয়ারশেল শেষ হয়ে যায়। পুলিশ বৃষ্টির মতো রাবার বুলেট ও ছররা গুলি ছুড়তে থাকে। এগুলো সহ্য করেও আমরা দুই সহযোদ্ধাকে বাঁচানোর জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যাই। এ সময় একজন পুলিশ সদস্য মাটি কাটার ভেকুর পেছনে লুকিয়ে থাকেন তাকে আমি দেখতে পাইনি। আমি যখন সামনের দিকে এগিয়ে যাই তিনি আমার মাথা বরাবর গুলি ছোড়েন। এতে আমার মুখে গলায় গুলি লাগে। এতে আমার মুখে গলায় গুলি লাগে। একটা স্প্লিন্টার আমার চোখ ছিঁড়ে ভেতরের হাড়ে গেঁথে যায়। চোখের কর্ণিয়া, লেন্স এবং রেটিনা ছিঁড়ে জর্জরিত করে ফেলে। দেশ-বিদেশের একাধিক চক্ষু হাসপাতালে দেখিয়েও লাভ হয়নি । গুলি লাগায় বাম চোখ নষ্ট হয়ে গেছে সম্পূর্ণ।
২ আগস্ট রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনা মহানগর কমিটির সাবেক আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার।
তিনি বাংলানিউজকে সেদিনের ঘটনাকে খুলনা ইতিহাসে আরেকটি কালো অধ্যায়ের পুনরাবৃত্তি হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
আল শাহরিয়ার বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশ আন্দোলনকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড এবং রাবার বুলেট ব্যবহার করে। এ সময়ে শিক্ষার্থীরা টিআর গ্যাসের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে রাস্তায় কাগজ ও টায়ার জ্বালায়। একপর্যায়ে পুলিশ থানার কাছাকাছি অবস্থান নিয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণ করে। পরবর্তীতে একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের কাছে মাফ চায়। সেদিনের সংঘর্ষে আমার কপাল ফেটে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। আমার মতো অসংখ্য যোদ্ধাদের রক্তের বিনিময়ে খুলনা স্বাধীনতা পায়।
এমআরএম/এএটি