ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

টাকা নিয়ে কনে দেখাতে না পারায় প্রাণ গেল ঘটকের

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮:৪৮, জুলাই ১৩, ২০২৫
টাকা নিয়ে কনে দেখাতে না পারায় প্রাণ গেল ঘটকের প্রেস ব্রিফিং ও গ্রেপ্তারকৃত আসামি

দুই দফায় ১০ হাজার টাকা দিয়ে কনে দেখতে না পারায় ক্ষুব্ধ হয়ে মারধর ও পানিতে চুবিয়ে শ্বাসরোধ করে ঘটক হাবিব উল্লাহকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পাত্র মো. কামাল মীরার বিরুদ্ধে।  

ঘটনার দুইদিনের মধ্যে পুলিশ আসামি কামাল মীরাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে জানা গেছে, ১১ জুলাই বেলা ১১টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুরের মধ্যে একজন পুরুষ মানুষের লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে সংবাদ দেয়। পুলিশ সেখানে গিয়ে পুকুরের পানি থেকে ভাসমান এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রস্তুত করে লাশ মর্গে পাঠায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা না গেলেও পরে স্থানীয় লোকজন এসে জানায় মৃত ব্যক্তির নাম হাবিব উল্লাহ (৫০)। তিনি পুটিয়ারপাড় এলাকার মনোয়ারা বেগম মনুর স্বামী। পরিবারের লোকজনকে সংবাদ দিলে তারা ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ শনাক্ত করেন। পরে মৃতের স্ত্রী অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলার এজাহার দিলে মতলব উত্তর থানায় মামলা হয়।

মামলা হওয়ার পর সহকারী পুলিশ সুপার খায়রুল কবির ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রবিউল হকের তত্ত্বাবধানে পুলিশ নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা এলাকায় একটানা ২১ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন অভিযান পরিচালনা করে হাবিব উল্লাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িত কামাল মীরাকে গ্রেপ্তার করে।

কামাল মীরা বরিশাল জেলার চরমোনাই রাজারচর গ্রামের মৃত খালেক মীরার ছেলে।

পুলিশ জানায়, আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, হাবিব উল্লাহর সঙ্গে তার তিন/চার মাস আগে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানাধীন মদনপুর ইউনিয়নের মুরাদপুর এলাকায় চায়ের দোকানে আড্ডাস্থলে পরিচয় হয়। মৃত হাবিব উল্লাহ যাত্রাবাড়ী এলাকায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন এবং আসামি কামাল মীরা ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি প্রেসের নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন।

আসামি কামাল মীরার প্রথম স্ত্রী তার সংসার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে যাওয়ায় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য মনস্থির করেন। হাবিব উল্লাহর সঙ্গে পরিচয় হলে তিনি তাকে দ্বিতীয় বিয়ে করানোর মতো মেয়ে তার কাছে আছে বলে প্রস্তাব করেন। সেই সুবাদে আনুমানিক এক মাসে আগে হাবিব উল্লাহ তার কাছ থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা নেন এবং গত ১০ জুলাই হাবিব উল্লাহ মতলব উত্তর থানাধীন তার শ্বশুরবাড়ি এলাকায় আসামি কামাল মীরাকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে পুনরায় আরও নগদ ৪ হাজার টাকা নেন। তারা উভয়ই বিকেলের দিকে মুরাদপুর এলাকা থেকে মতলব উত্তর থানা এলাকার উদ্দেশে রওনা করে সন্ধ্যার সময় প্রথমে শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে আসেন।

মাজারে অনেকটা সময় ঘুরাঘুরি করার পর আসামি কামাল মীরা হাবিব উল্লাহকে মেয়ে দেখানোর কথা বললে হাবিব উল্লাহ আসামিকে নিয়ে রাত অনুমান ১১টার দিকে গোপালকান্দি বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে পুকুর পাড়ে নিয়ে আসেন। সেখানে বসে তারা উভয়ে গল্প করার সময় হাবিব উল্লাহ তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেন। একপর্যায়ে কামাল মীরা ক্ষিপ্ত হলে উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এসময় পাকা সিঁড়ির মধ্যে পড়ে গিয়ে দুজনেই আঘাত পান। একপর্যায়ে উভয়ই পানিতে পড়ে গেলে কামাল মীরা হাবিব উল্লাহকে পানিতে চুবিয়ে ধরলে তিনি নিস্তেজ হয়ে পড়েন। পরে কামাল মীরা সাঁতরে পুকুরের অপর প্রান্ত দিয়ে উঠে নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী নামক এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান।

পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, পুলিশ প্রথমে হত্যার কোনো সূত্র পায়নি। পরে বিভিন্ন সূত্রের তথ্যের ভিত্তিতে মতলব উত্তর থানা পুলিশ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। তার বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।