ঝালকাঠির পূর্ব গুয়াটন এলাকায় শতাধিক বাবুই পাখির ছানা হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি মোবারক আলী ফকিরকে গ্রেপ্তার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রোববার (২৯ জুন) সন্ধ্যায় তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় তাকে পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঝালকাঠি গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সেলিম উদ্দিন। তিনি জানান, বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি এবং ঝালকাঠি পুলিশ সুপারের নির্দেশে মাত্র তিন ঘণ্টার অভিযানে প্রধান আসামিকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার (২৭ জুন) ঝালকাঠি সদর উপজেলার শেখেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব গুয়াটন এলাকায় একটি তালগাছ কেটে ফেলা হয়। গাছটির পাতায় ঝুলে থাকা শতাধিক বাবুই পাখির বাসা, ছানা ও ডিম পানিতে পড়ে যায়। ফলে ঘটনাস্থলে ছানাগুলো মারা যায় ও ডিমগুলো নষ্ট হয়। কিছু প্রাপ্তবয়স্ক পাখি পালিয়ে গেলেও, অধিকাংশ ছানা মারা যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
ঘটনার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হলে রোববার বিকেলে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন এবং মামলা দায়েরের কথা জানান।
এই ঘটনায় মোবারক আলী, মিজানুর রহমান ও ফারুক হোসেনকে আসামি করে ঝালকাঠি সদর থানায় ৩৭৯ ধারায় মামলা হয়। পাশাপাশি, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে পিওআর নম্বর ১/ঝাল ২০২৪-২৫ নম্বরে আরেকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, মোবারক আলী ফকির (৬৫) ঝালকাঠির গুয়াটন এলাকার মৃত মোসলেম আলী ফকিরের পুত্র। প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, গাছটি তার জমিতে অবস্থিত ছিল, যা মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি কিনে ফেলেছিলেন। এরপরই গাছটি কেটে ফেলা হয়, যা বাবুই পাখির বাসা-ছানা ও ডিম ধ্বংসের কারণ হয়।
এলাকাবাসীর দাবি, গাছটি দীর্ঘদিন ধরে বাবুই পাখির একমাত্র নিরাপদ আশ্রয় ও প্রজননস্থল ছিল। এই নিষ্ঠুর ঘটনাকে তারা ‘প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসেবে দেখছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, এই তালগাছটি শুধু একটি গাছ ছিল না, এটি ছিল প্রাণবৈচিত্র্যের কেন্দ্র। যারা এ গাছটি কেটে ফেলেছে, তারা প্রকৃতির বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। এমন নিষ্ঠুরতার বিচার হতেই হবে।
ডিবি পুলিশের ওসি সেলিম উদ্দিন আরও জানান, প্রধান আসামিকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এমজে